সায়েন্স ফিকশন গল্পে দেখা যায় মানুষের মতো রোবট, যা পরিচিত হিউম্যানয়েড রোবট হিসেবে। সায়েন্স ফিকশনের পাতা থেকে এখন বাস্তব পৃথিবীতে চলে এসেছে এই রোবট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে চলা রোবটটির নাম মিকা। বুদ্ধিমান হওয়ায় মিকা বুঝতে পেরেছে, তার মতোই আরেক হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়া পৃথিবীতে ব্যাপক জনপ্রিয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা সিস্টেমগুলোও আছে মানুষের পছন্দের তালিকায়। যেমন চ্যাটজিপিটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা চ্যাটিং সিস্টেম। এটি ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যারা সংবাদ উপস্থাপনা করে, তারা নিয়মিত খবরের শিরোনাম হচ্ছে।
সে জন্যই বোধ হয় পেছনে পড়ে থাকতে চায় না মিকা। সে যোগ দিয়েছে পোল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের ‘সিইও’ তথা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে। তোমার কি মিকাকে অবাস্তব লাগছে?
পোল্যান্ডের একটি অ্যালকোহল ও বেভারেজ কোম্পানি ডিকটেডর। এ বছরের শুরুর দিকে অভিনব এক নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে তারা। কোম্পানিটি জানায়, তাদের নতুন সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সিইও মানুষ নয়, মিকা নামের একটি হিউম্যানয়েড রোবট। মিকাকে তৈরি করেছে পোলিশ কোম্পানি ডিকটেডর। রোবটটি তৈরিতে সাহায্য করেছে হংকংয়ের কোম্পানি হ্যানসন রোবটিকস। হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির জন্য এ কোম্পানিটি বেশ পরিচিত। ২০১৬ সালে হিউম্যানয়েড রোবট সোফিয়াকেও তারাই তৈরি করেছিল।
সোফিয়ার মতো মিকাও নারী রোবট। মানুষের সামনে দেওয়া প্রথম ভিডিও বার্তায় মিকা বলেছে, ‘আমার আসলে ছুটির দিন নেই। আমি সব সময় চালু থাকি, ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত থাকি কোম্পানির হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।’
ডিকটেডর মিকার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে সে বলেছে, ‘আমি উন্নত এআই এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’ মিকা আরও জানায়, তার নেওয়া সিদ্ধান্ত কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থের ওপর নির্ভর করে না। নির্ভুল গণনার মাধ্যমে কোম্পানির নীতি অনুযায়ী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে। যদিও ডিকটেডরের কর্মচারী নিয়োগ এবং বরখাস্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো এখনো মানুষের হাতেই থাকছে। মূলত কোম্পানির পণ্য ডিজাইন করার জন্য শিল্পী বাছাই করার মতো কাজ করছে মিকা।
মিকার উদ্ভাবক ড. ডেভিড হ্যানসন একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শতভাগ নিরাপদ এআই বানানোর জন্য এআইকে মানবিকতা শেখাতে হবে। এদিকে পোল্যান্ডের ওয়ারশর একটি বিশ্ববিদ্যালয় মিকাকে সম্মানসূচক অধ্যাপক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সম্মাননা অনুষ্ঠানে মিকা বলেছে, ‘এই মঞ্চে আমার উপস্থিতি সম্পূর্ণ প্রতীকী। আমাকে সম্মানসূচক অধ্যাপক উপাধি দেওয়া মানে মানুষের মেধার জয়গান করা। মানুষের মাথা থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা জন্মেছে।’
বিশ্বজুড়ে আলোচনা হচ্ছে মিকার উদ্ভাবন নিয়ে। এআইয়ের উত্থান মানুষের জন্য ঠিক কতটা উপকারী—এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। একসময় মিকা মানুষের কল্পনায় বাস করলেও আজ সে বাস্তব। স্বীকার করতেই হবে, মিকা মানুষের বুদ্ধিমত্তার উন্নত উদাহরণ!