যুক্তিতর্কের লড়াইয়ে বিজয়ী জলঢাকা, রানার আপ দামুড়হুদা

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জলঢাকা

যুক্তি, পাল্টা যুক্তি আর যুক্তিখণ্ডনের মনোজ্ঞ উপস্থাপনায় শেষ হলো ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিতর্ক উৎসব ২০২৪-২০২৫। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জলঢাকা, নীলফামারী এবং রানারআপ হয়েছে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এবং ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বটি গতকাল সোমবার, ১০ মার্চ মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।

চূড়ান্ত পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল, নারীর ক্ষমতায়নে প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের চেয়ে নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিতার্কিকেরা নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ এবং বাস্তব উদাহরণ ও যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এ সময় প্রতিযোগী দুটি দলের মধ্যে যুক্তি, পাল্টা যুক্তি আর যুক্তিখণ্ডনের মনোজ্ঞ উপস্থাপনা উপভোগ করেন উপস্থিত আমন্ত্রিত অতিথি, বিচারকমণ্ডলী ও দর্শকেরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর এবং শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান। বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট বিতার্কিক ও গণমাধ‍্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সদস্যরা বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ দল ও শ্রেষ্ঠ বক্তার হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেওয়া হয়।

মৌটুসী কবীর উপস্থিত বিতার্কিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তোমাদের কণ্ঠ শুধু বিতর্কে আবদ্ধ না রেখে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়, এমন সবকিছুর বিরুদ্ধে সোচ্চার রাখতে হবে।’

সাফি রহমান খান বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিতর্কের মতো সৃজনশীল কাজে যুক্ত হওয়া জরুরি। এ জন্য তিনি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ডা. আবদুন নূর তুষার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের চিন্তার পরিধি বিস্তারের জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেন, বিতর্কে শুধু তথ্য উপস্থাপনেই সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেদের চিন্তাভাবনাকেও যুক্তি ও তর্কের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে।

নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে ১৩টি ব্র্যাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬১৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়, যার মধ্যে ৫৮ শতাংশ ছিল মেয়ে শিক্ষার্থী। পুরো প্রতিযোগিতাটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়—প্রথমে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাথমিক রাউন্ড, এরপর আন্তবিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, জেলাভিত্তিক সেমিফাইনাল এবং সব শেষে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ফাইনাল। দীর্ঘ প্রতিযোগিতার পর সেরা দুটি দল চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয়।

ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী চিন্তাভাবনা ও আত্মপ্রকাশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্র্যাক ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যাতে দেশের আরও বেশি শিক্ষার্থী যুক্তি–তর্কের মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা ও চিন্তাশক্তি প্রকাশের সুযোগ পায়।

আরও পড়ুন