ধরো, বাসা থেকে বের হয়ে সামনে একটা রিকশা দেখলে। গিয়েই উঠে পড়লে রিকশায়। ভাড়া জিজ্ঞেস করার কোনো দরকার নেই। কারণ ভাড়া দিতে হবে না। রিকশা থেকে নেমে উঠলে একটা বাসে। বাসে নেই কোনো হেলপার। শুধু একজন ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছেন। হেলপার থেকে কী করবে? বাসে চড়তে তো ভাড়াই লাগবে না। ফিরতি পথে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা পেলে। ওটায় চড়ে গেলে মেট্রোরেল পর্যন্ত। না, সিএনজিচালকও তোমার কাছে টাকা চায়নি। এবার মেট্রোরেলে চড়ে বাসায় পৌঁছালে। এখানে টিকিট কাটার কোনো প্যারা নেই। কারণ এটাও ফ্রি।
কী ভাবছ? কোনো রূপকথা বা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের গল্প নিয়ে আলোচনা করছি? মোটেও না। সত্যিই এ রকম একটি দেশ আছে, যেখানে সব ধরনের গণপরিবহনে যাতায়াত একদম ফ্রি। তুমি সেখানে বেড়াতে গেলেই পাবে এ সুযোগ। সে জন্য তোমাকে যেতে হবে পশ্চিম ইউরোপের দেশ লুক্সেমবার্গে।
দেশটিতে গণপরিবহন ফ্রি করার পেছনে একটি কারণ আছে। ২ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে বাস করে প্রায় ছয় লাখ মানুষ। তাদের বেশির ভাগই ব্যবহার করে নিজস্ব গাড়ি। মাত্র ১৯ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করে গণপরিবহন। ফলে রাস্তায় তৈরি হয় তীব্র যানজট। এ যানজটের কারণে গণপরিবহন ফ্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এ পদ্ধতি অবশ্য নতুন নয়। লুক্সেমবার্গের পাশের দেশ ফ্রান্স। সেখানকার ডানকার্ক শহরে বাস সার্ভিস ফ্রি করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। দারুণ সাড়া পড়েছিল এতে। বাসে যাতায়াত শুরু করেন শহরটির ৮৫ শতাংশ যাত্রী। হয়তো সেই সাফল্য দেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে লুক্সেমবার্গ। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য গণপরিবহন সম্পূর্ণ ফ্রি করেছে পশ্চিম ইউরোপের এই দেশ। লুক্সেমবার্গের দেখাদেখি অন্যান্য দেশও এ সুবিধা চালু করতে পারে।
সম্পদশালী দেশ লুক্সেমবার্গের চারপাশে রয়েছে বেলজিয়াম, জার্মানি ও ফ্রান্স। ১৮১৫ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটির ইতিহাসও বেশ পুরোনো। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ ও ন্যাটোর মতো সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য লুক্সেমবার্গ।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে গণপরিবহন সম্পূর্ণ ফ্রি করা প্রায় অসম্ভব। এমনিতেই দেশের গণপরিবহন খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। আর সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিলে আরও বাড়বে সেই ভর্তুকির পরিমাণ। তবে গণপরিবহনকে আরও উন্নত ও সুশৃঙ্খল করলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কমাবে মানুষ।