পাভলভিয়ান পদ্ধতির মতো, আমরা এটিএম মেশিন থেকে টাকা বের হওয়ার শব্দ শুনে স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজিত হই। কিন্তু এই শব্দ কি কৃত্রিমভাবে তৈরি? যদি হয়, তবে কেন? গবেষণা বলছে, এটিএম মেশিনের শব্দগুলো কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হতে পারে ব্যবহারকারীদের মানসিকভাবে আশ্বস্ত করার জন্য যে তাদের লেনদেন সফল হয়েছে এবং টাকা বের হচ্ছে। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল, যা মানুষের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
আচ্ছা, পাভলভিয়ান পদ্ধতিটা আবার কী জিনিস?
পাভলভিয়ান পদ্ধতি হলো ক্লাসিকাল কন্ডিশনিংয়ের একটি ধারণা। এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন রুশ বিজ্ঞানী ইভান পাভলভ আবিষ্কার। এটি এমন একটি শিখন প্রক্রিয়া, যেখানে একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপক (যেমন এটিএমের শব্দ) মানুষের মস্তিষ্কে পূর্বনির্ধারিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
হিউম্যানস ইনভেন্ট নামে একটি ওয়েবসাইট (যা শার্প ইলেকট্রনিকসের অংশীদার) 'মানুষকে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা কৃত্রিম শব্দ' সম্পর্কিত প্রযুক্তিগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যেমন, অতি শান্ত বৈদ্যুতিক যানবাহনকে কৃত্রিম 'ভ্রুম' শব্দ দেওয়া হচ্ছে, যাতে পথচারীরা সেগুলো শুনতে পান এবং প্রয়োজনে রাস্তা ছেড়ে দেন।
অনেক সময় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় মাঠে দর্শকসংখ্যা কম থাকে, এমন পরিস্থিতিতে মাঠের পরিবেশকে উজ্জীবিত এবং স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার জন্য কৃত্রিমভাবে দর্শকদের চিৎকার বা উল্লাসের শব্দ বাজানো হয়। এটি খেলোয়াড়দের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে। খেলায় যোগ করে উত্তেজনা।
এটিএম মেশিনের টাকা দেওয়ার সান্ত্বনাদায়ক গুঞ্জন সম্পর্কে হিউম্যানস ইনভেন্ট উল্লেখ করেছে, 'অধিকাংশ মানুষ মনে করেন এই শব্দটি আসলে আসে রোলারগুলো থেকে। এই রোলার নোটগুলোকে মেশিনের সংগ্রহস্থল থেকে স্লটে নিয়ে আসে। প্রকৃতপক্ষে, এই শব্দটি সম্পূর্ণ কৃত্রিমভাবে যুক্ত করা হয়েছে।'
শব্দটি একটি স্পিকারের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় এবং শুধু গ্রাহকদের আশ্বস্ত করার জন্য যুক্ত করা হয়েছে যে 'টাকা আসছে'। শব্দ ছাড়া, এটিএম মেশিন কার্যত নীরব থাকত, কারণ এর চলমান অংশগুলো অন্য পাশে ঢাকা থাকে।
এই দাবিগুলো দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে মার্কিন মার্কিন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন ফোরাম রেডিটের একটি আলোচনায় এটিএম প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা কয়েকজন এই বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। একজন লিখেছেন, 'আমি ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটিএম সার্ভিস করেছি, কোনো কৃত্রিম শব্দ নেই। মেশিনগুলো সত্যিই এতটাই জোরে শব্দ করে (ভল্টের দরজা খোলা থাকলে শব্দ আরও ১০ গুণ বেশি)। টাকা সরবরাহ করার জন্য বেল্টগুলো ঘোরার সময় শব্দ হয় এবং এগুলো "প্রায় নীরব" নয়। আর মেশিনের মাঝখানে কোনো প্রাচীর নেই।'
লন্ডনের টাইমস পত্রিকার একটি নিবন্ধের দিকে ইঙ্গিত করে হিউম্যানস ইনভেন্ট এ বিষয়ে যুক্তি দিয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির কৃত্রিম শব্দ এবং অন্যান্য প্রযুক্তির কৃত্রিম বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছে তারা। যেমন, ১৯৩৭ সালে টেক্সাসের একটি স্কুলে গ্যাস লিকেজের কারণে ৩০০ শিশুর মৃত্যু ঘটে। ভয়াবহ এই দূর্ঘটনার পর প্রাকৃতিক গ্যাসে দুর্গন্ধ যুক্ত করা হয়।
আবার ডিজিটাল ক্যামেরায় শাটার ক্লোজ করার শব্দ কৃত্রিমভাবে যোগ করা হয় ব্যবহারকারীদের আশ্বস্ত করার জন্য।
এটিএম মেশিন টাকা দেওয়ার শব্দ করে যাতে গ্রাহকেরা বুঝতে পারেন যে তাদের টাকা বের হচ্ছে।
যদি সত্যিই এটিএম মেশিনের শব্দগুলো কৃত্রিম হয়, তবে ডিজাইনাররা কেন সেগুলো যোগ করেছেন, তা সহজেই বোঝা যায়। দার্শনিক জেরি সাইনফেল্ড মজা করে বলেছিলেন, 'তারা আমাদের এমনভাবে অভ্যস্ত করেছে যেন আমরা এখন এটিএম মেশিনের দাস। আমরা ঠিক পরীক্ষা করা মুরগির মতো, অপেক্ষা করছি কখন খাবার নিচে পড়বে।'
তুমি এটিএমের সামনে লোকজনকে দেখেছ? তারা শুধু দাঁড়িয়ে থাকে, 'ঘরঘরঘর'—শব্দ শোনার অপেক্ষায়। সেই শব্দ বলে, ‘টাকা আসছে!’
সূত্র : টাইম ম্যাগাজিন