ইরানি গণিতবিদ মরিয়ম মির্জাখানি ১৯৭৭ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেন। জ্যামিতিতে অবদানের জন্য মির্জাখানিকে ২০১৪ সালের ফিল্ডস মেডেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন। পিএইচডি করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে মরিয়ম স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
আমার জন্ম তেহরানে। শৈশবে আমার স্বপ্ন ছিল, আমি বড় হয়ে লেখক হব। আমার অবসরের বেশির ভাগ সময় কাটত উপন্যাস পড়ে। যদিও সামনে যা পেতাম, তার সবই আমি পড়তাম। তখন কখনোই চিন্তা করিনি, আমি গণিত নিয়ে পড়ব। হাইস্কুলের শেষ বছরে আমার কেন জানি গণিত পড়তে ইচ্ছে হয়।
তিন ভাইবোনের এক পরিবারে বেড়ে ওঠা মানুষ আমি। শৈশবে আমাদের জন্য বিভীষিকা ছিল ইরাক-ইরান যুদ্ধ, যার কারণে আমার ঘরেই থাকতে হতো বেশি। বড় ভাইয়ের কারণেই আমার বিজ্ঞানে আগ্রহ বাড়ে। সে স্কুলে যা শিখত, তা আমাকে শেখাতে চাইত। একবার ভাই আমাকে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত যোগ করার একটা সমস্যার সমাধান করতে দেয়। আমার মনে হয়েছিল, বড় ভাই সেই সমস্যা কোনো বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী থেকে আমাকে সমাধান করতে দেয়। ওই সমস্যাটি ছিল আমার জন্য ভীষণ আগ্রহের। সেবারই প্রথম কোনো অঙ্ক করে এত মজা পাই।
আমাদের স্কুল ছিল তেহরানের বইয়ের দোকানগুলো যে রাস্তায়, তার পাশে। স্কুল শেষ করে ভিড় ঠেলে আমরা সেই বইয়ের দোকানগুলোয় যেতাম। নানান ধরনের বই কিনতাম বন্ধুরা মিলে। আমাদের স্কুলের অধ্যক্ষ চাইতেন আমরা যেন ছেলেদের স্কুলের চেয়ে বেশি ভালো ফল করি। তাঁর উত্সাহেই আমি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিই।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাকে গণিতের অনেক বিষয় নতুন করে শিখতে হয়। আমি অধ্যাপকদের সেমিনারে অংশ নিতাম। দেখা যেত, বেশির ভাগ সময়ই আমি তাঁদের সেমিনারের কোনো কথাই বুঝতাম না। কিন্তু তার পরও আমি প্রশ্ন করতাম। সেখান থেকেই আমার জ্যামিতির দিকে ঝোঁক বাড়ে।
আমি স্কুলে অঙ্ক পারতাম না। তখন আগ্রহ নিয়ে এ বিষয়ে চিন্তা করতাম না বলেই পারতাম না। আগ্রহ ছাড়া অঙ্ক করতে গেলে এর কিছুই বোঝা যায় না। যারা গণিত নিয়ে পড়ে থাকে, ধৈর্য ধারণ করে, তারাই গণিতের সৌন্দর্য খুঁজে পায়।
ক্লে ম্যাথমেটিকস ইনস্টিটিউটকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অবলম্বনে জাহিদ হোসাইন খান।