সিনেমায় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছ, বিমানের পাইলট কিংবা জাহাজের ক্যাপ্টেন বিপদে পড়লে বারবার ‘মে ডে, মে ডে’ বলে চিৎকার করেন। কিন্তু কেন ‘মে ডে’ শব্দটাই উচ্চারণ করতে হয় পাইলট কিংবা ক্যাপ্টেনদের? চলো জানা যাক।
পাইলট বা ক্যাপ্টেনদের ‘মে ডে’ বলা মানে তাঁরা বিপদে পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন। চরম বিপদ। বেঁচে ফিরবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। সাধারণত এ রকম পর্যায়েই তাঁরা মে ডে বলে থাকেন। নিয়ম হলো, বিপদে পড়লে শব্দটি পরপর তিনবার উচ্চারণ করা। এটাই আন্তর্জাতিক নিয়ম। মে ডে নামকরণের কাহিনিটা প্রায় শত বছরের পুরোনো।
১৯২০–এর দশক। ব্রিটেন ও ইউরোপে বেড়ে চলেছে বিমান চলাচল। ফলে বাড়ছে ঝুঁকি। পাইলটরা বিপদে পড়লে কী বলে সাহায্য চাইবেন? জানেন না কেউ। ইঞ্জিন বিকল হওয়া থেকে শুরু করে আকাশপথে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের ত্রুটি। এ ধরনের বিপদে কী বলে সাহায্য চাইবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না কেউ।
সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব পড়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের জ্যেষ্ঠ বেতার কর্মকর্তা ফ্রেডরিখ স্ট্যানলির কাঁধে। তিনি শব্দ খুঁজতে লাগলেন। এমন একটি শব্দ, যা দিয়ে সহজের বিপদের কথা বোঝানো যায়। তিনিই প্রথম ‘মে ডে’ শব্দটা প্রস্তাব করেন। কিন্তু কেন এই শব্দটিই বেছে নিলেন তিনি? এর অর্থই–বা কী?
আসলে ফ্রেডরিখ স্ট্যানলির সময়ে যুক্তরাজ্যে এবং ফ্রান্সের বিমানবন্দরে অনেক বিমান চলাচল করত। তাই স্ট্যানলি ভাবলেন, একটি ফরাসি শব্দের ব্যবহার করলে দুই দেশের মানুষই শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন। তাই ফরাসি প্রবাদ venez m’aider থেকে তিনি ‘মে ডে’ শব্দটি বেছে নেন। এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘আমাকে সাহায্য করুন’। এরপর ১৯২৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মে ডে’-কে বিপদের সংকেত হিসেবে গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে পাইলট বা জাহাজের ক্যাপ্টেনরা বিপদে পড়লে বলেন ‘মে ডে’।
‘মে ডে’ ব্যবহারের আগে পাইলটরা বিপদে পড়লে সংক্ষেপে বলতেন এসওএস (SOS)। পূর্ণরূপ ‘সেভ আওয়ার সোল’। মানে আমাদের জীবন বাঁচান। তবে ‘মে ডে’-এর সঙ্গে আরও একটি শব্দ ব্যবহার করেন পাইলটরা—প্যান প্যান।
চলো এবার জানা যাক, ‘মে ডে’ বলার পর সুরক্ষার জন্য আর কী কী জানাতে হয়? নিয়মানুসারে বিমানের পাইলট বা জাহাজের ক্যাপ্টেনকে উচ্চ স্বরে টানা তিনবার ‘মে ডে’ বলে সাহায্য চাইবেন। এরপর সম্ভব হলে বিমানের বর্তমান অবস্থা জানাতে হবে। সে সময়কার অবহাওয়ার পরিস্থিতি এবং বর্তমান অবস্থান জানাতে হবে। তবে বিমানটির বর্তমান অবস্থান নিশ্চিতভাবে জানাতে না পারলে আরও অন্যান্য তথ্য দিয়ে গ্রাউন্ড স্টেশনের পরিচালনাকারীদের সাহায্য করতে হবে।
আরেকটা তথ্য দিয়ে শেষ করি। শুধু জরুরি প্রয়োজনেই এমন সংকেত পাঠাতে পারবেন পাইলট বা ক্যাপ্টেনরা। অযথা এ ধরনের সংকেত বলে সাহায্য চাইলে জেল কিংবা জরিমানা হতে পারে। মার্কিন কোস্টগার্ডের সদস্যরা প্রতিবছর অনেক ভুয়া কল পান। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই ভুয়া কল বন্ধ করতে শাস্তির ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশে ভুয়া ‘মে ডে’ বলার জন্য ১০ বছরের জেল কিংবা প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো জরিমানা হতে পারে। বাংলাদেশেও এ রকম কোনো আইন আছে কি না, তা নিশ্চিত নই। তবে সাবধান!