চাঁদের রং আসলে কী—সাদাটে, ধূসর, রক্তিম নাকি নীলাভ

আমরা সবাই রাতের আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু কখনো ভেবেছি কি, এই চাঁদের রং আসলে কী? দিনে সাদাটে, রাতে হলদেটে, আবার কখনো রক্তিম দেখায়। মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে চাঁদকে ধূসর দেখালেও আমাদের চোখে এটি কেন এত রঙিন দেখায়? চাঁদের রং কেনই বা পরিবর্তন হয়? চাঁদের এই রূপের রহস্যের উত্তর খুঁজতে আমাদের নিল আর্মস্ট্রং হতে হবে না, শুধু বিজ্ঞানের দুনিয়ায় একটু ঘুরে আসতে হবে। 

আমরা জানি, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। আমরা যে আলোতে চাঁদকে দেখি, সেটা সূর্যের আলো। সূর্যের আলো চাঁদের ওপর পড়ে এবং সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে আসে। তাই রাতের আকাশে চাঁদকে উজ্জ্বল দেখি আমরা। 

মহাকাশ থেকে তোলা চাঁদের ছবিগুলো দেখলে চন্দ্রপৃষ্ঠ আসলে ধূসর রঙের। এই ধূসর রং আসলে চাঁদের মাটিতে থাকা বিভিন্ন ধরনের শিলা ধ্বংসাবশেষ দিয়ে আচ্ছাদিত হওয়ার কারণে। চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রধান উপাদানের মধ্যে আছে অক্সিজেন, সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম। এ উপাদানগুলোর কারণে চাঁদের মাটি ধূসর হয়ে ওঠে। 

আরও পড়ুন

চাঁদের কিছু পাথর হালকা রঙের আর কিছু পাথর গাঢ় রঙের। হালকা রঙের পাথরগুলোকে আমরা প্লেজিওক্লেস ফেল্ডস্পার বলি আর গাঢ় রঙের পাথরগুলোকে পাইরক্সিন। চাঁদের বেশির ভাগ শিলা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরি হয়েছে এবং চাঁদের অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে এসেছে। অলিভাইন নামের কিছু বিরল শিলা আসলে সবুজ রঙের। 

আমরা চাঁদে যে অন্ধকার অঞ্চলগুলো দেখতে পাই তাকে চন্দ্র মারিয়া বলা হয়। এগুলো আসলে প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে তৈরি সমভূমি। চন্দ্র উচ্চভূমির তুলনায় মারিয়াগুলো কম আলো প্রতিফলিত করে, তাই আমরা এগুলোকে গাঢ় দেখি। চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১৬ শতাংশ মারিয়া দিয়ে আচ্ছাদিত। আর এগুলো বেশির ভাগই পৃথিবী থেকে দেখা যায়, এমন দিকে অবস্থিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, চন্দ্র মারিয়া প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন বিলিয়ন বছর আগে গঠিত হয়েছিল। যখন চাঁদে আগ্নেয়গিরির অতি সক্রিয়তা ছিল।

আরও পড়ুন
চাঁদের রং পরিবর্তনের পেছনে বায়ুমণ্ডল, চাঁদের অবস্থান, আবহাওয়া, দূষণ, চন্দ্রপৃষ্ঠের গঠন—সবকিছুই ভূমিকা রাখে।

বায়ুমণ্ডলের কারণে চাঁদের আলো কিছুটা বিচ্ছুরিত হয়। বায়ুমণ্ডলে থাকা কণাগুলো আলোর বিভিন্ন রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেয়। যখন চাঁদ আকাশের বায়ুমণ্ডলের কাছে থাকে তখন এর আলোকে বায়ুমণ্ডলের স্তর অতিক্রম করতে হয়। এ সময় বায়ুমণ্ডলের কণাগুলো নীল রঙের আলোকে বেশি ছড়িয়ে দেয় এবং লাল রঙের আলোকে কম ছড়িয়ে দেয়। ফলে চাঁদ লালচে দেখায়।

কিন্তু যখন চাঁদ আকাশের বায়ুমণ্ডলে থেকে দূরে থাকে, তখন এর আলো বায়ুমণ্ডল কম অতিক্রম করতে পারে। ফলে নীল রঙের আলো কম ছড়িয়ে পড়ে এবং চাঁদ হলুদাভ দেখায়।

আবার দিনের বেলায় সূর্যের আলোর তীব্রতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় বিক্ষেপণের কারণে চাঁদের আলোর তুলনায় পৃথিবীর ওপর পড়া আলোর পরিমাণ অনেক বেশি হয়। ফলে চাঁদের আলো সূর্যের আলোর সঙ্গে মিশে যায় এবং চাঁদকে সাদাটে দেখায়। চাঁদের রং কেবল সাদা বা ধূসরই নয়, বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন অবস্থায় এটি নীলাভ, গোলাপি, রুপালি বা অন্যান্য রঙেরও দেখা যেতে পারে। এই চাঁদের রং পরিবর্তনের পেছনে বায়ুমণ্ডল, চাঁদের অবস্থান, আবহাওয়া, দূষণ, চন্দ্রপৃষ্ঠের গঠন—সবকিছুই ভূমিকা রাখে।

সুতরাং চাঁদের আসল রং কী—এর কোনো সরল উত্তর নেই। চাঁদকে আমরা কীভাবে দেখি, তার ওপরই নির্ভর করে এসব রং। তাই আজই রাতে আকাশে তাকিয়ে চাঁদকে দেখার চেষ্টা করো! 

সূত্র: ইউনিভার্স টুডে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি

আরও পড়ুন