ডিক্যাপ্রিওসহ যে অভিনেতাদের নামে আছে প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও—হলিউডের একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তাঁর এই পরিচয়ের পাশাপাশি আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি একজন পরিবেশকর্মী। তাঁর পরিবেশসচেতনতা ও সক্রিয়তার প্রতি সম্মান জানিয়ে সম্প্রতি নতুন প্রজাতির একটি ব্যাঙের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। দেখতে ছোট বাদামি বর্ণের এবং এর চোখগুলো তুলনামূলক বড়। এই উভচর ব্যাঙের সন্ধান পাওয়া গেছে ইকুয়েডরের ওয়েস্টার্ন মাউন্টেন ফরেস্টে। এটা যে বনে বসবাস করে, সেটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৭০৫ মিটার উচ্চতায়। বিজ্ঞানীরা ব্যাঙটির নাম দিয়েছেন ফিলোন্যাসটেস ডিক্যাপ্রিওয়ি (Phyllonastes dicaprioi)।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বৈশ্বিক পরিবেশগত সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া ইকুয়েডরের ইয়াসুনি ন্যাশনাল পার্কে বিতর্কিত তেল খনন প্রকল্প বন্ধের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি তাঁর এই অঙ্গীকারের কারণেই ইকুয়েডরের বিজ্ঞানীরা তাঁর সম্মানে নতুন আবিষ্কৃত এই ব্যাঙের প্রজাতির নামকরণ করেছেন।
ডিক্যাপ্রিও গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য ৪৩ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই অর্থ দিয়ে গ্যালাপাগোস থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী
ব্যাঙটি শরীরের দৈর্ঘ্য ও আঙুলের বিশেষ গঠনের কারণে নিকটতম প্রজাতিগুলো থেকে আলাদা। তিনটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা একসঙ্গে কাজ করে এই নতুন প্রজাতির ব্যাঙ খুঁজে বের করেছেন। ইকুয়েডরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োডাইভারসিটি, ইকুয়েডরের ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি এবং সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটি অব কুইটোর (ইউএসএফকিউ) গবেষকেরা মিলে মোট সাতটি নতুন প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন। ফিলোন্যাসটেস ডিক্যাপ্রিওয়ি নামের ব্যাঙটি এই সাতটি প্রজাতির মধ্যে একটি।
২০২১ সালে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য ৪৩ মিলিয়ন, অর্থাৎ ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। এই অর্থ দিয়ে গ্যালাপাগোস থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী যেমন গোলাপি ইগুয়ানা, বিশাল গ্যালাপাগোস কচ্ছপ, মকিংবার্ড প্রজাতির পাখি আবার ফিরিয়ে আনার কাজে ব্যয় করা হয়। এ ছাড়া রে:ওয়াইল্ড (Re:wild) নামের একটি পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা চালু করেছেন। এ সংস্থা ফ্লোরিয়ানা দ্বীপকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে ১৩টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছে।
গবেষক দল জানিয়েছে, শুধু নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়, এদের বসবাসের জায়গাগুলো রক্ষা করাও জরুরি। কারণ, এই ব্যাঙগুলো বিশেষ কিছু পরিবেশে বাস করে, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই এই পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাঙগুলো হারিয়ে যাবে। সান ফ্রান্সিসকো ইউনিভার্সিটি অব কুইটো (ইউএসএফকিউ) এ গবেষণায় তুলে ধরেছে, এই প্রজাতিগুলো যে বিশেষ পরিবেশে বাস করে, সেই পরিবেশ রক্ষা করা কতটা জরুরি।
গবেষকেরা যখন নতুন প্রজাতির ব্যাঙগুলোর নাম রাখছিলেন, তখন তাঁরা দুটি বিষয় মাথায় রেখেছিলেন। সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত তাৎপর্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান। কয়েকটি ব্যাঙের নাম রাখা হয়েছে এদের আবাসস্থলের নামের ওপর ভিত্তি করে। এর মাধ্যমে সেই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আর লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর মতো যাঁরা পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের সম্মান জানানোর জন্য কিছু প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ানা জোন্স চরিত্রে অভিনয় করা বিখ্যাত অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ডের নামেও একটি সাপের নামকরণ করা হয়েছিল, যার নাম টাচমেনয়েড হ্যারিসনফোর্ডি
অস্কারজয়ী অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর নামে নতুন প্রজাতির নামকরণ কিন্তু এই প্রথম নয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞানীরা হিমালয়ে একটি সাপের প্রজাতির খোঁজ পান। তাঁরা এর নাম দেন অ্যাঙ্গুইকুলাস ডিক্যাপ্রিওয়ি (Anguiculus dicaprioi)। নেপাল ও হিমাচল প্রদেশের চাম্বা জেলার একটি অঞ্চলে এ সাপ প্রথম খুঁজে পান বীরেন্দ্র ভরদ্বাজ। তিনি কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় তাঁর বাড়ির উঠানে সাপটি দেখতে পান। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ আবিষ্কারের কথা জানানোর পর তিন বছর ধরে বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা করেন এবং অবশেষে নিশ্চিত হন যে এটি একটি নতুন প্রজাতি।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ছাড়াও আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির নামে নতুন প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে। এর আগে, ইন্ডিয়ানা জোন্স চরিত্রে অভিনয় করা বিখ্যাত অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ডের নামেও একটি সাপের নামকরণ করা হয়েছিল, যার নাম টাচমেনয়েড হ্যারিসনফোর্ডি (Tachymenoides harrisonfordi)। এ ছাড়া ২০১৭ সালে প্রাণীবিদ ড. স্যামি ডি গ্রেভ, যিনি রক ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েডের ভক্ত, তিনি একটি পিস্তল চিংড়ি প্রজাতির নাম রেখেছিলেন সিনালফিয়াস পিঙ্কফ্লয়েডি (Synalpheus pinkfloydi)।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও একটি নতুন আবিষ্কৃত মথেরও নামকরণ করা হয়েছে। এর মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো সোনালি রঙের চুল রয়েছে। এ মথের নাম দেওয়া হয়েছে নিওপালপা ডোনাল্ডট্রাম্পি (Neopalpa donaldtrumpi)।
সূত্র: টেলিগ্রাফ, ইকোনমিক টাইমস