ভয়েস মেসেজ পাঠাতে হরহামেশাই নিজের কথা রেকর্ড করি আমরা। তারপর পাঠিয়ে দিই বন্ধুর কাছে। কী বললাম, সেটা শোনার জন্য প্লে করতেই চমকে উঠি। ইশ্! এমন অদ্ভুত কেন আমার কণ্ঠ? তোমারও কি এমন অভিজ্ঞতা হয়? সাধারণত নিজেদের কণ্ঠস্বর শুনতে ঠিকঠাক লাগলেও রেকর্ড করার পর তা অন্য রকম লাগে। মনে হয়, শোনার অযোগ্য।
অথচ কিছু সময় আগেও নিজের কাছে মনে হচ্ছিল দারুণ। কণ্ঠ এত ভালো যে এক-দুটো গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারব হয়তো। কিন্তু অডিও শোনার পর দমে গেল সেই ইচ্ছা। নিজের গলা নিজের কানে যে রকম লাগে, রেকর্ডিংয়ে সে রকম লাগে না কেন? নিজের এত পরিচিত গলাটা বদলে যায় কীভাবে?
রেকর্ডিংয়ে নিজের গলা ভালো না লাগা একদমই অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রায় সবার সঙ্গেই এটা হয়।
আমরা যখন মানুষকে কথা বলতে শুনি, শব্দ বাতাসে ভেসে আমাদের কানে আসে। এরপর আমাদের কানের পর্দায় আঘাত করে। কিন্তু যখন তুমি একাই কথা বলছ, তখন তোমার ভোকাল কর্ডের কারণে বায়ুও কাঁপে। পাশাপাশি গলার স্বর, অর্থাৎ শব্দের কিছুটা অংশ মাথার হাড়ের মধ্য দিয়ে কানে পৌঁছে। অর্থাৎ আমরা দুটো মাধ্যম থেকে শব্দ পাই। একটা আমাদের নিজেদের ভোকাল কর্ডের কম্পন, যা বাতাসের মাধ্যমে আসে। অন্যটা সরাসরি কানে আসে হাড়ের মধ্য দিয়ে।
এ কারণেই তুমি যখন রেকর্ডিংয়ে নিজের ভয়েস শোনো, তখন অভ্যস্ত ভয়েসের চেয়ে আলাদা শোনায়। কারণ, তখন আর তুমি হাড়ের মধ্য দিয়ে শুনছ না, শুধু বাইরে থেকে শব্দটা বয়ে আনছে বায়ুর কম্পন।
এর আরেকটা কারণ মনস্তাত্ত্বিক। মানুষ তার নিজের কণ্ঠস্বর চিনতে খুব একটা পারদর্শী নয়।
বেশির ভাগ মানুষ কথা বলার পর স্বাধীনভাবে নিজের কণ্ঠের শব্দ শুনতে বসে থাকে না। তাই তারা আসলে জানে তাদের কথা শুনতে কেমন। একটি সমীক্ষায় কিছু মানুষকে তাদের নিজেদের কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিং শোনানো হয়। দেখা গেছে, মাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষ দ্রুত নিজের স্বর চিনতে পেরেছিল।
আমরা যখন রেকর্ডিংয়ে নিজের কণ্ঠস্বর শুনি, তখন চমকে যাই। লজ্জাও পায় কেউ কেউ। কারণ, আমরা মাথায় বা কানে নিজেদের যে শব্দ শুনি, তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। যদিও সেটা বিকৃত শব্দ। বাস্তবে রেকর্ডে যেমন শোনায়, সেভাবেই আমাদের গলার স্বর অন্যরা শুনতে পায়।
রেকডিং শুনে তাই হয়তো নিজের গলা না চেনা কোনো অস্বস্তির ব্যাপার নয়। অডিও রেকর্ডিংয়ে নিজের কণ্ঠস্বর শুনে যে অস্বস্তি হয়, তার কারণ, হাড়ের মধ্য দিয়ে নিজেদের শব্দকে খানিকটা গম্ভীর শোনায়। রেকর্ডে সে রকম শোনায় না। ব্রিটিশ স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান জ্যারেটের মতে, সাধারণত নিজেদের গলার স্বর আর অন্যদের গলার স্বর আমরা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করি। রেকর্ডিং শোনার সময় এ জায়গায় পরিবর্তন আসে। এ সময় আমরা অন্যদের মতো করেই মূল্যায়ন করি নিজের গলার স্বরকে। তখন নিজের ব্যক্তিসত্তাকে যেভাবে ভেবে অভ্যস্ত, তার চেয়ে অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হয়। ফলে অস্বস্তি বাড়ে।
অর্থাৎ কণ্ঠটা ঠিকই আছে, আমরা আসলে নির্দিষ্ট উপায়ে শুনতে অভ্যস্ত। ভিন্ন উপায়ে শুনতে তাই অস্বস্তি লাগে। যদি তোমার মাথায় ইনস্টল হয়ে থাকা কণ্ঠটা রেকর্ডিং ডিভাইস থেকে ভেসে আসা কণ্ঠকে তিরস্কার করে, তবে নিজেকে বলো, তুমি আসলে নিজের কঠোর সমালোচনা করছ। আর কিছু না।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, টাইমস ম্যগাজিন