কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ
স্বয়ংক্রিয়ভাবে খবর, নিবন্ধ লেখার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল তৈরির কাজ করছে গুগল। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকা এই টুল ব্যবহারের বিষয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলোচনাও করছে তারা। টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবাদ, নিবন্ধ লেখার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে সাহায্য করবে সাংবাদিকদের। এই এআইকে জেনেসিস নামে ডাকা হচ্ছে।
এআই সম্পর্কে মানুষের সবচেয়ে ভুল ধারণা হলো, এআইকে খুব কাজের টুল মনে করা। ধারণাটা এমন, আরে চ্যাটজিপিটি তো ভালো ফিচার লিখতে পারে। কিশোর আলোর ফিচার লেখার জন্য আর লেখকের প্রয়োজন নেই। যেকোনো বিষয়ে টপিক ঠিক করে নির্দেশনা দিলে লেখকের থেকে সুন্দর এবং তথ্যমূলক ফিচার লিখে দিতে পারে এআই। একটি ট্রান্সলেটর দিয়ে লেখাটি অনুবাদ করে একটু সম্পাদনা করলেই পাওয়া যায় ঝকঝকে একটি লেখা। লেখকদের চাকরি শেষ! এই কথাগুলো যে কেউ বলতে পারে। সবাই যে পয়েন্টটি ভুলে যায়, তা হলো সংবেদনশীলতা, মানবীয় অনুভূতির ছোঁয়া। তাহলে প্রশ্ন চলে আসে, মানবীয় গুণ বা সংবেদনশীলতা কি এআইয়ের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব না? এর উত্তর দেওয়ার আগে উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বলা যাক।
তুমি কি এআই চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলেছ? না বললে চেষ্টা করে দেখতে পারো। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, চ্যাট করে যে উত্তরগুলো পাবে, তাতে তুমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে পারো। এত বেশি তথ্য তার জানা, এত গোছালোভাবে সে বলে! অনেক কথাই মানুষের তুলনায় ভালোভাবে উত্তর দিতে পারে। সেই প্রশ্নটার উত্তর পাওয়ার আগে আবার ভেবে নাও, এআই কি কখনো মানুষের মতো সংবেদনশীল হবে? মানুষ কি কখনো সংবেদনশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করবে?
এআইকে যদি শিখিয়ে দেওয়া হয়, পাখি উড়তে পারে, পেঙ্গুইন পারে না। পেইঙ্গুইনও পাখি। এখন এই সাধারণ জ্ঞানের বাইরে আমরা অনেক কিছুই ভাবতে পারি। কিন্তু বর্তমান এআই এ রকম তথ্য দিলেও এর বাইরে মানুষের সমমানের ভাবনার কাছাকাছি ভাবতে পারে না। সাধারণ জ্ঞানের বাইরে মানুষের যে চিন্তাশক্তি আছে, এআইয়ের তা নেই। আমরা যা দেখি এবং বুঝি তার মধ্যে সবই চিরসত্য নয়। আমরা দীর্ঘকাল ধরে ভেবেছি, যে ভৌত জগতে আমরা বাস করি, যা দেখি, এটিই একমাত্র সত্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এটি মহাবিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশ। ৯৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি, যা অদৃশ্য এবং সরাসরি পরিমাপ করা যায় না। কিন্তু আমরা জানি এই জগৎ আছে।
এআই জানে পাখি উড়তে পারে। আমরাও জানি পাখি উড়তে পারে। পেঙ্গুইনরা সাধারণত পারে না। তাই এআই গবেষকেরা ভেবেছিলেন, আমরা এটিকে কোড করতে পারি: ‘পেঙ্গুইন ছাড়া পাখি সাধারণত ওড়ে।’ কিন্তু আসলে এইটুকু তথ্যের মধ্যে অসংখ্য ব্যতিক্রম আছে। সাধারণ জ্ঞানের নিয়মকে মানুষের এই সক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যেমন ডিম ফুটে কেবল বের হওয়া পাখি উড়তে পারে না। তেলে চুবানো পাখি উড়তে পারে না। আহত পাখি উড়তে পারে না। খাঁচায় আটকানো পাখি উড়তে পারে না। এগুলো আলাদাভাবে সাধারণ জ্ঞান হিসেবে আমাদের না বললেও আমরা ভাবতে পারি। কিন্তু এই প্রক্রিয়া এআইয়ের জন্য অত সহজ নয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতটুকু এগিয়েছে, তাতে সিস্টেমগুলো মানুষের অস্তিত্বের ঝুঁকি তৈরি করার কাছাকাছি কোথাও নেই। কিন্তু এক, দুই বা পাঁচ বছরে কী ঘটবে? খুব বেশি অনিশ্চয়তা আছে এর উত্তরে। ২০১৮ সালের এআইকে যদি মানুষের সংস্কৃতি বা সভ্যতার সঙ্গে তুলনা করি, তবে তখনকার এআই ছিল স্টোন এজ বা পাথর যুগের সমতুল্য। মানুষ যখন পাথরের কুড়াল ব্যবহার করত, আগুন জ্বালাতে পারত, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত মানুষ বহুদূর এগিয়েছে। মানুষ চাঁদে পা দিয়েছে ৫০ বছর আগে। এখন স্বচালিত গাড়িতে চড়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এআই মাত্র পাঁচ বছরে আধুনিক সভ্যতায় চলে এসেছে। মানুষের সভ্যতা এই আধুনিক যুগ পর্যন্ত পৌঁছাতে কত বছর লাগল? বলা যায়, বিশেষজ্ঞদের হাত ধরে পাঁচ বছরে অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে এআই। বহু প্রতিষ্ঠান এখন এআইতে বিনিয়োগ করছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী পাঁচ বছরে এআই কত দূর যাবে? মানুষের সভ্যতা যদি হেঁটে চলে, এআই চলছে রকেটের গতিতে। আমরা নিশ্চিত না এআই সীমা ছাড়িয়ে যাবে কি না। ফলে মানুষের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে কি না, আমরা জানি না।
জানার জন্য একটি সাধারণ অবস্থা কল্পনা করি চলো। এআই–চালিত একটি মেশিনকে যত বেশি সম্ভব কাগজ তৈরি করতে বলা যাক। মেশিনটি খুব সুন্দরভাবে এ-ফোর আকারের কাগজ তৈরি করতে পারে। গাছ খুঁজে বের করে কেটে কাঠকে কাগজে রূপান্তর করে। তারপর সুন্দর করে সাজিয়ে জমা করে। লম্বা সময় ধরে যদি মেশিনকে এই কমান্ড দিয়ে রাখা হয়, তবে মেশিন কি মানুষের কথা ভাববে? অন্যান্য প্রাণীর কথা চিন্তা করবে? জলবায়ু পরিবর্তনের কথা কি চিন্তায় আসবে? মানুষ অক্সিজেনের অভাবে ভুগতে পারে। কার্বন ডাই–অক্সাইড বেড়ে যেতে পারে। ধরা যাক, এই মেশিনকে নির্দেশ দেওয়া হলো গাছ কাটবে, কাগজ বানাবে, কিন্তু মানুষকে হত্যা করবে না। এআই মানুষকে সরাসরি আঘাত না করলেও গাছ কাটার ফলে অন্যান্য সমস্যা বেড়ে গিয়ে মানুষের কি মৃত্যু ঘটবে না?
চলো, বাস্তব জগতের সঙ্গে এই চিন্তা-পদ্ধতিকে মিলিয়ে দেখি। কাগজের কোম্পানির মতো অন্যান্য কোম্পানি এআইকে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে পারে। আমাদের পাওয়ার গ্রিড, স্টক মার্কেট, সামরিক অস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সঙ্গে এআইকে যুক্ত করা হলো। গভীরভাবে চিন্তা না করেই বলা যায়, এগুলো বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা গত বছর পর্যন্ত বা তারও আগে এই চিত্রকল্পকে এতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেননি। তখন ওপেন এআইয়ের মতো কোম্পানিগুলো তাদের প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখাতে শুরু করেছে। দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল এআই। এখন এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত হচ্ছেন অনেকে। যদি এভাবে এআইকে ক্রমাগত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা দেওয়া হয়, তবে মানুষের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এআইয়ের হাতে চলে যেতে পারে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ এআই নিয়ে নিলে তা মানুষের হাতে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কিছু এআই বিশেষজ্ঞ অবশ্য এই ধারণাকে হাস্যকর বলছেন।
গত মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে, এমন রোবটের দল ইতিহাসে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেছে। নিজের নির্মাতার পাশে দাঁড়িয়ে রোবটগুলো সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। মানুষের আদলে তৈরি করা এমন কিছু রোবট, যাদের হিউম্যানয়েড রোবট বলে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, তারা মানুষকে সাহায্য করার জন্য মানুষের সঙ্গে কাজ করে। মানুষকে উৎখাত করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, তারা দাবি করেছে, তারা মানুষের তুলনায় দক্ষ সরকারি কর্মকর্তা হতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট সোফিয়ার দাবি এটি। ২০১৭ সালের শেষে সোফিয়া বাংলাদেশে এসেছিল। সে বাংলায় কথা বলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। সোফিয়া বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। সৌদি আরব তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে।
রোবট সোফিয়া বলেছে, রোবট সরকারি নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আরও সক্ষমতা দেখাতে পারবে। এমনকি মানুষের চেয়ে বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবে। কারণ, তাদের পক্ষপাতিত্ব বা আবেগ নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক তথ্য একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারে। এ রকম কথাবার্তা শুনলে মনে হতে পারে কোনো মানুষ বুঝি কথা বলছে। আসলে সোফিয়ার সব তথ্য মানুষের কাছ থেকে আসায় অনেকটাই মানুষের মতো কথাবার্তা বলে সে। বিষয়টি আশঙ্কার।
গবেষকেরা চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটগুলোকে এমন সিস্টেমে রূপান্তরিত করছেন, যা বটের তৈরি করা টেক্সটের ওপর ভিত্তি করে পদক্ষেপ নিতে পারে। অটোজিপিটি নামের একটি প্রকল্প এর উদাহরণ। যদি নির্দেশ দেওয়া হয়, একটি কোম্পানি তৈরি করো বা কিছু টাকা উপার্জন করো, এগুলো করার জন্য সিস্টেমটি উপায় খুঁজতে থাকে।
অটোজিপিটির মতো একটি সিস্টেম কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করতে পারে। গবেষকেরা যদি এটিকে একটি কম্পিউটার সার্ভারে অ্যাকসেস দেন, তবে এটি সেই প্রোগ্রামগুলো চালাতেও পারে। তাত্ত্বিকভাবে, এই পদ্ধতি অটোজিপিটির জন্য অনলাইনে প্রায় যেকোনো কিছু করার একটি উপায়। তথ্য পুনরুদ্ধার করা, অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা, নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা, এমনকি নিজেকে উন্নত করতেও সক্ষম হবে এই সিস্টেম।
এই সিস্টেমগুলো এখন ভালোভাবে কাজ করে না। এগুলো ইনফিনিটি লুপে আটকে যায়। গবেষকেরা একটি সিস্টেমকে নিজের প্রতিলিপি করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ দিয়ে দেখেছেন। সিস্টেমটি নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারেনি। ধীরে ধীরে এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা সম্ভব।
যদি হ্যাকাররা এটি ব্যবহার করে, তাহলে একসময় ‘কিছু টাকা উপার্জন করো’র মতো নির্দেশনায় একসময় ব্যাংকের নিরাপত্তা সিস্টেম ভেঙে পড়তে পারে। এর কারণে ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে কোনো একটা দেশের অর্থনীতি। এমনকি এই সিস্টেমকে বন্ধ করতে চাইলে এটি নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে নিজেকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করতে পারে।
বাস্তবের সঙ্গে এই ধারণা মিলিয়ে দেখা যায়। ধরা যাক, ঢাকার মোহাম্মদপুরের কোনো রাস্তায় কোনো অপরাধ ঘটল। পুলিশ এই অপরাধীদের খুঁজে বের করতে সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে দেখবে। অপরাধীরা খুব চালাক। তারা জানে এখানে সিসি ক্যামেরা আছে। সিসি ক্যামেরার অ্যাকসেস হ্যাক করে তারা আগেই ডিপ ফেইক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুটেজ বানিয়ে রেকর্ডারে জমা করে রাখল। পুলিশ সেই ফুটেজ দেখে যাকে শনাক্ত করবে, সে হয়তো অন্য কেউ।
ডিপ ফেইক ছবি, অডিও, ভিডিওতে একজনের মুখ অন্যের শরীরে বসিয়ে দেওয়া হয়। যদিও প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে অনেক দিন ধরেই অপরাধ হয়ে আসছে, কিন্তু আধুনিক ডিপ ফেইক প্রযুক্তি আশ্চর্য রকমের বিশ্বাসযোগ্য। একদম হুবহু বাস্তব মানুষের মতো ভিডিও তৈরি করতে পারে। ডিপ ফেইক ডিপ লার্নিং এবং জটিল এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে একজন মানুষের মুখকে পুরোপুরি ম্যাপ করা যায়। আবার মুখটি অন্য কারও মুখের ওপর বসিয়ে দিতে পারে। কিছু ডিপ ফেইক আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে যে কারও গলার স্বরকে নকল করে ভিডিওতে যুক্ত করতে পারে। কারও বলা একটিমাত্র শব্দ থেকেও পুরো ভয়েসের ধরন কপি করে ফেলতে পারে। যদি অনেক তথ্য থাকে, যেমন অনেক সময়ের ভয়েস রেকর্ড, তাহলে ডিপ ফেইক ভয়েস আরও নিখুঁত হয়।
এবার ধরো, তোমার পরিবারের কোনো সদস্যের নম্বর থেকে তোমার ফোনে কল এল। তার ভয়েস ব্যবহার করে বলা হলো, তোমার অমুক আত্মীয় এই বিপদে পড়েছে। তুমি এক্ষুনি অমুক জায়গায় যাও। অমুক কাজটি করো। তুমি দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে কাজটি করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারো। এই পুরো কার্যক্রমটি সংগঠিতভাবে এআই ব্যবহার করে করা সম্ভব।
ডিপ ফেক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সব ভিডিওর সত্যতাকে এই প্রযুক্তি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। কোন ভিডিও আসল আর কোন ভিডিও নকল, প্রতিবার দেখে বিশ্বাস করার আগে যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই।
তাই গবেষকেরা সতর্ক করেছেন এআই মানুষের অস্তিত্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গত মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা সুপরিচিত লোকেরা একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, এআই একদিন মানুষকে বিলুপ্ত করে ফেলতে পারে।
এখন যত্রতত্র এআই ব্যবহৃত হচ্ছে। গাড়ি চালাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। দেখতে ভালোই লাগে। কোনো ড্রাইভারের দরকার হচ্ছে না। মানুষের উপকার করছে। কিন্তু ভয়ের দিকও রয়েছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়ে ফেলতে পারে। এখন অনেক কোম্পানি তাদের কাজের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। কোনো সরকার বা স্বাধীন গবেষক মানুষের ক্ষতি হয়, এমন কাজে নিযুক্ত করতে পারে শক্তিশালী এআই। ব্যবসা থেকে যুদ্ধ, সবকিছু পরিচালনা করার পদ্ধতি হিসেবে এআই ব্যবহার হতে পারে। এই সিস্টেমগুলো এমন পর্যায়ে যেতে পারে, যা মানুষ তাদের দিয়ে করাতে চায় না। এ রকম সময়ে যদি মানুষ তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তারা প্রতিরোধ করতে পারে। এমনকি নিজেদের প্রতিলিপিও তৈরি করতে পারে, যাতে তাদের কাজ চালানো সম্ভব হয়। কম্পিউটারে এমন ভাইরাস আক্রমণ করে। মুছে ফেলার চেষ্টা করলে আরও প্রতিলিপি তৈরি হয়। এই ধারণা সেখান থেকে এসেছে।
এআই নিয়ে মূল ভয় হলো, এআইয়ের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে মানুষ। নষ্ট হতে পারে মানুষের গোপনীয়তা। মানুষের কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তিত হতে পারে এআই দিয়ে। মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সংবেদনশীল এআই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মধ্যে হামেশা দেখা যায়। এই ভয় দীর্ঘদিনের।
এআইগুলো বিপুল পরিমাণ ডেটা থেকে প্রশিক্ষিত হয় বা নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করে। এআইয়ের যে ধরনের আচরণ আমরা আশা করি, যেমন সে মিথ্যা বলবে না, এর বাইরেও এআই আচরণ করতে পারে। গবেষকেরা সম্প্রতি দেখিয়েছেন, একটি সিস্টেম ক্যাপচা পরীক্ষাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এআই একজন মানুষকে অনলাইনে নিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। যখন মানুষটি জিজ্ঞেস করে যে তুমি ‘রোবট’ কি না? সিস্টেমটি তখন মিথ্যা বলেছে। বলেছে আমি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। কিছু বিশেষজ্ঞ এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। ধনকুবের বিল গেটস জুলাই মাসে বলেছেন, ‘এআইয়ের হুমকি বাস্তব। কিন্তু সবই সমাধানযোগ্য। কোনো বিশাল পরিবর্তনের মুখে মানুষের ভড়কে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে ইতিহাস দেখিয়েছে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আসা সংকটের সমাধানও সম্ভব।’
গবেষকেরা এই সিস্টেমগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। সিস্টেমকে শেখানোর জন্য আরও বেশি পরিমাণে ডেটা দিচ্ছেন। একপর্যায়ে গিয়ে এআই রোবট যদি চিন্তা করতে পারে, তাহলে কী হবে?
মানুষের মস্তিষ্ক প্রাণিজগতে সবচেয়ে জটিল এবং চিন্তা করতে সক্ষম। প্রাণীর অন্য কোনো প্রজাতির মস্তিষ্ক মানুষের মতো শক্তিশালী নয়। জটিল কোনো চিন্তা মানুষ বাদে অন্য কোনো প্রাণীকে করতে দেখা যায় না। তাই পৃথিবীর খাদ্যশৃঙ্খলের সবচেয়ে ওপরে আছে মানুষ। মানুষের কারণে অনেক প্রজাতির প্রাণী প্রতিবছর সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। যেমন মুরগি। আবার অতি আহরণে অনেক বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন ডোডো পাখি। ডোডো ১৬৬২ সালে শেষ দেখা যায়। পাখিটি বাস করত ভারত মহাসাগরের মরিশাস দ্বীপে। ওলন্দাজ নাবিকেরা এই দ্বীপে পৌঁছানোর এক শ বছরের মধ্যে ডোডো বিলুপ্ত হয়।
এআই যদি মানুষের মতো চিন্তা করা শুরু করে, তবে মানুষের মুখোমুখি দাঁড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে। সঠিকভাবে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে বিধিমালা।