‘জুরাসিক পার্ক’। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া মুভি। এই মুভিতে বিশাল বিশাল সব ডাইনোসরের দেখা মেলে। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়া এসব দৈত্যাকার প্রাণী পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ক্লোন পদ্ধতিতে। মানে ডাইনোসরের ডিএনএ ব্যবহার করে আবার তৈরি করা হয়েছে ডাইনোসর। কিন্তু এটা মুভির কাহিনি। বাস্তবে কি ডাইনোসরের ডিএনএ ব্যবহার করে পৃথিবীতে আবার এই দৈত্যাকার প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব? আবার কি পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াতে পারবে ট্রাইসেরাটপস, ডাইনোসোরাস, টি-রেক্স?
যদিও বিজ্ঞানীরা কোনো ডিএনএ খুঁজে পান, হতে পারে ওই মশার মতো কাহিনি; তবু সে ডিএনএ আর ভালো থাকবে না। অনেক কোটি বছর আগেই তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আমাদের প্রশ্নের উত্তর হলো পৃথিবীতে আর ডাইনোসর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বুঝতে হবে ডিএনএ কী? কারণ, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে সব রহস্য। ডিএনএর পূর্ণরূপ হলো ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। ডাইনোসরসহ পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে, সব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে এই ডিএনএ। প্রাণের নীলনকশা বলা হয় একে। এই ডিএনএ এমন একটা অণু, যা জেনেটিক কোড বহন করে। মানে তুমি যে কিছুটা তোমার বাবা বা মায়ের মতো, এর মূল কারণ এই ডিএনএ। কারণ, বাবা বা মায়ের থেকেই ডিএনএ তোমার মধ্যে কিছু কোড নিয়ে এসেছে। তাই হয়তো তোমার চুলের স্টাইল তোমার বাবার মতো বা হয়তো তুমি দেখতে অনেকটা মায়ের মতো। পাশাপাশি কিছু গুণাগুণও আমরা মা–বাবা থেকে পাই। এসব কিছু মা–বাবা থেকে আমাদের মধ্যে আসে ডিএনএর সাহায্যে। এই ডিএনএগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করা যায়। যেমন তোমার রক্ত, চুল, থুতু বা শরীরের যেকোনো অঙ্গ থেকেও পাওয়া যায়।
তাহলে কি ডাইনোসরের ডিএনএ থেকে আবার এই প্রাণীটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটু ‘জুরাসিক পার্ক’ মুভিতে ফিরে যাই। মুভিতে দেখানো হয়েছে, গুহার মধ্যে একটা মশা অ্যাম্বারের মধ্যে আঁটকে ছিল। সেই মশাটা আবার ডাইনোসর যুগের। মশাটা সেকালে ডাইনোসরের রক্ত খেয়েছিল। রক্ত খেয়ে এসে হয়তো শান্তিতে ঘুম দিয়েছিল। সেখান থেকে আর উঠতে পারেনি। অ্যাম্বারের মধ্যেই মরে পড়ে রয়েছে। সেই মশাটা একজন জীববিজ্ঞানী খুঁজে পান। আর সেই মশার পেটে থাকা ডাইনোসরের রক্তের সাহায্যে সিনেমায় ডাইনোসর তৈরির গল্প দেখানো হয়।
কথা হচ্ছে, আমরা কী এমন কোনো মশা পেয়েছি? কিংবা কোনোভাবে কী আমরা ডাইনোসরের ডিএনএ উদ্ধার করতে পেরেছি? উত্তর হলো, না। জিবাশ্মবিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের অনেক হাড় বা কঙ্কাল পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যে আর ডিএনএ অবশিষ্ট নেই। প্রায়ই দেখবে নিউজ হয়, বিদেশে বাড়ির উঠোন বা বাগান খুঁড়তে গিয়ে এত কোটি বছর আগের অমুক ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া গেছে। সেটা ফসিল ঠিক আছে, কিন্তু তার মধ্যে একবিন্দুও ডিএনএ পাওয়ার জো নেই। কেন?
কারণ, ডাইনোসরের ডিএনএ এত বছর পরে আর অবশিষ্ট থাকতে পারে না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিএনএ ক্ষয় হয় এবং মোটামুটি ৭০ লাখ বছর পরে আর ডিএনএ অবশিষ্ট থাকে না। এবার ভাবো, পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে। এখন পর্যন্ত কি কোনো ডাইনোসরের ডিএনএ পাওয়ার আশা করা যায়! যদিও বিজ্ঞানীরা কোনো ডিএনএ খুঁজে পান, হতে পারে ওই মশার মতো কাহিনি; তবু সে ডিএনএ আর ভালো থাকবে না। অনেক কোটি বছর আগেই তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আমাদের প্রশ্নের উত্তর হলো পৃথিবীতে আর ডাইনোসর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
এবার ছোট্ট একটা কল্পনা করা যাক। ধরে নিচ্ছি, ডিএনএ ৭০ লাখ বছরে নষ্ট হয়ে যায় না এবং ‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমার মতো আমরা কোনোভাবে ডাইনোসরের ডিএনএ পেয়ে গেলাম। তাতে কি ডাইনোসর তৈরি করা সম্ভব হবে?
সেটাও সম্ভব হতো না। কারণ, ওই ডিএনএ মিলিয়ে মিলিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ ডাইনোসরের রূপ দিতে হবে। সেটা সামান্য একটু ডিএনএ থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে মুভির মতোই অন্য কোনো প্রাণীর ডিএনএ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। মুভিতে যেমন ব্যাঙের ডিএনএ ব্যবহার করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনো প্রাণীর ডিএনএ ব্যবহার করতে হবে। আর তাই যদি হয়, তাহলে কী আমরা ডাইনোসর পেতাম? নাকি ডাইনোসর ও অন্য প্রাণীর মিশ্রণে সংকর কোনো প্রাণী পেতাম! যা-ই পেতাম না কেন, ডাইনোসর পাওয়া যেত না।
সূত্র: দ্য কনভার্সেশন