চলন্ত বিমানের দরজা বা জানালা খুলে দিলে কী হবে
সম্প্রতি মাঝ আকাশে চলন্ত বিমানে এক যাত্রীর দরজা খুলে দেওয়ার ঘটনা সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি করে। গত ২৬ মে, শুক্রবার এমন ঘটনা ঘটে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপ থেকে দায়েগু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে। সেখানে এক ব্যক্তি ক্রু সদস্যদের বাধা এড়িয়ে জরুরি বহির্গমন দরজা খোলেন। দরজা খোলার পর ওই যাত্রী উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ারও চেষ্টা করেন। সেই ফ্লাইটে মোট যাত্রীসংখ্যা ছিল ১৯৪। এ সময় ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং বেশ কিছু যাত্রী অসুস্থও হয়ে পড়েন।
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হলেও প্রায়ই আমরা বিমান দুর্ঘটনার খবর শুনে থাকি। এই যেমন বিমানের দরজা খোলার মতো ভয়ংকর বিষয়টিই ধরা যাক। কখনো কি ভেবে দেখেছ, হঠাৎ চলন্ত বিমানের দরজা বা জানালা খুলে দিলে কী হতে পারে?
মাঝ আকাশে চলন্ত বিমানের দরজা বা জানালা খোলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেননা, একটি চলন্ত বিমান সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট (৯ কিলোমিটার) থেকে ৩৩ হাজার ফিট (১৩ কিলোমিটার) উচ্চতার মধ্যে চলাচল করে। এর গতি থাকে ঘণ্টায় ৮৮০ থেকে ৯২৬ কিলোমিটার। উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের ওপর প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় তিন দশমিক তিন পাউন্ড চাপ প্রয়োগ হয়ে থাকে। সাধারণত বিমানের দরজার উচ্চতা ছয় ফুট এবং চওড়া তিন দশমিক পাঁচ ফুট হয়ে থাকে। তাই দরজা খুলতে একজন ব্যক্তিকে ১০ দশমিক ৯ মেট্রিক টন বা ২৪ হাজার পাউন্ড শক্তি প্রদান করতে হয়। তার মানে বুঝতেই পারছ চাইলেই বিমানের দরজা বা জানালা খোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনার সময় উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ২৫০ মিটার উঁচুতে ছিল। আর এর জন্যই সেই যাত্রী দরজা খুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। আচ্ছা এখন যদি দরজা খুলেই যায়, তাহলে কী হবে?
চলন্ত বিমানের দরজা খুলে দিলে সেই মুহূর্তে বায়ুর চাপ এত দ্রুত কমবে, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিমানের কেবিনের ভেতরের চাপ হ্রাস করবে। যার ফলে একটি অতি শক্তিশালী টানের সৃষ্টি হবে। আর এই টানের ফলে বিমানের ভেতরের বাধাহীন সবকিছু বাইরে আছড়ে পড়বে। শুধু তা–ই নয়, যে যাত্রীরা শক্ত করে নিজেদের সিটে বসবেন না কিংবা দাঁড়িয়ে থাকবেন, তারাও মুহূর্তের মধ্যে আছড়ে পড়তে পারেন বিমানের বাইরে।
তার মানে বুঝতেই পারছ চলন্ত বিমানের দরজা বা জানালা খোলার বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করে ভূমি থেকে বিমানের উচ্চতার ওপর।