যে রোবট ঘরের কাজ করবে

সারা দিন কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর শরীরে ক্লান্তি জেঁকে বসে। তখন আর রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া কিংবা ঘর পরিষ্কারের মতো দৈনন্দিন কাজে মন বসে না। ঘরের এসব কাজ করার জন্য একটি রোবট সহকারী থাকলে কিন্তু বেশ হয়! সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও গুগল ডিপমাইন্ডের গবেষকেরা মিলে একটি বিশেষ হিউম্যানয়েড (মানুষের মতো কাজ করে) রোবট তৈরি করেছেন। মোবাইল অ্যালোহা নামের এই রোবট রান্না থেকে শুরু করে কাপড় ভাঁজ করা পর্যন্ত সব কাজই করতে পারে। এ লেখায় পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ এআইয়ের মাধ্যমে পরিচালিত মোবাইল অ্যালোহার সঙ্গে।

মানুষের কাজের সঙ্গী রোবট

শিগগির মানুষের সব কাজের সঙ্গী হবে রোবটেরা—এমন চটকদার ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছে ঢের। আজকাল সত্যিকার অর্থে মানুষের কাজকর্মে রোবটদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন বড় বড় শিল্পকারখানায় কর্মচারী হিসেবে কাজ করে যান্ত্রিক রোবটেরা। মানুষের বদলে রোবট দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। মানুষের মতো বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এমনকি শুধুই বাইরের কাজ নয়, ঘরের কাজেও দক্ষ করে তোলা হচ্ছে রোবটদের। যেমন ধরা যাক, হিউম্যানয়েড রোবট মোবাইল অ্যালোহার কথা। ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যালোহার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, রোবটটি নিজে নিজে চিংড়ি রান্না করছে। সেই ভিডিওতে রোবটটিকে লিফট ‘কল’ করতেও দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, দেয়ালের কেবিনেটে জিনিসপত্র তুলে রাখার মতো কাজ করেও দেখিয়েছে অ্যালোহা। রোবটটি এতসব কাজের শিখেছে নমুনা কাজ দেখে। গবেষকেরা নমুনা দেখিয়ে রোবটকে শিখিয়েছেন। মাত্র ৫০টি নমুনা দেখেই নতুন কাজ শিখতে পারে মোবাইল অ্যালোহা রোবট।

রোবটের ভেতর–বাহির

মোবাইল অ্যালোহার মতো হিউম্যানয়েড রোবটের বাহিরের কাঠামো অবশ্যই ভালো হওয়া চাই। ৭৫ কেজি ওজনের মোবাইল অ্যালোহার আছে দুইটি যান্ত্রিক হাত। এই রোবটটি হাঁটেও মানুষের গতিতে। অন্যান্য হিউম্যানয়েড রোবটদের তুলনায় অ্যালোহার ওজন কম। তবু এটি ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে। অ্যালোহার আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে, এর নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। মোবাইল অ্যালোহা রোবটটি তৈরিতে উন্নতমানের মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়েছে। এই অ্যালগরিদম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর মানে, মোবাইল অ্যালোহা রোবটকে কাজে লাগানোর জন্য মানুষকে সশরীর উপস্থিত থাকতে হবে না। দূর থেকে নির্দেশ দিলেই হবে। ভবিষ্যতে অফিসে বসে যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অ্যালোহাকে নির্দেশনা দেওয়া যাবে। তবে রোবটটি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা যে মানুষের দিকনির্দেশনা ছাড়া সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে থাকবে।

স্বপ্ন হবে সত্যি

মোবাইল অ্যালোহা তৈরির পেছনে কাজ করেছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল। তাঁরা এই রোবট তৈরিতে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন, সেসব ওপেন সোর্স করে দিয়েছেন। মানে মোবাইল অ্যালোহা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যারের ব্যাপারে কোনো গোপনীয়তা রাখা হচ্ছে না। যে কেউ এগুলো বিনা মূল্যে অন্য যে কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে। থ্রিডি প্রিন্টারে মোবাইল অ্যালোহার অংশ প্রিন্ট করার সুযোগও থাকছে। রোবটদের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধ। যত বেশি মানুষ রোবট নিয়ে আগ্রহী হবে, তত উন্নত হবে রোবটিকসের জগৎ।

বর্তমানে অধিকাংশ হিউম্যানয়েড রোবটদের দাম কোটি টাকার ওপরে। অন্য রোবটের তুলনায় মোবাইল অ্যালোহার দাম খুব কম। বিশ লাখ টাকার কাছাকাছি। যদিও বেশিরভাগ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবু আশার কথা হলো, মোবাইল অ্যালোহার মতো রোবটদের আরও উন্নত আর সাশ্রয়ী করার চেষ্টা চলছে। হয়তো খুব শিগগিরই ঘরের টুকিটাকি কাজ করবে এ সব রোবট। প্রতিদিন ঘরে-বাইরে রোবটদের সঙ্গে চলাফেরা করাও হয়তো তখন সাধারণ হয়ে উঠবে!