নাসার টেলিস্কোপ খুঁজে পেয়েছে ‘বাসযোগ্য’ এক্সোপ্ল্যানেট
মানুষ কি মহাবিশ্বে একা? এই প্রশ্ন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মনকে ভাবিয়ে এসেছে। এই প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে আসছেন। অবশেষে নাসার একটি টেলিস্কোপ এই প্রশ্নের উত্তর জানার আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। স্পেস টেলিস্কোপ ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট নামক অত্যাধুনিক যন্ত্র মহাকাশে ‘বাসযোগ্য’ বলে মনে করা একটি নতুন গ্রহ আবিষ্কার করেছে। গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এ আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। কারণ, এটি ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের সৌরজগতের বাইরেও জীবন থাকা সম্ভব।
ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের এক অ্যাস্ট্রোফিজিকস পিএইচডি শিক্ষার্থী শিশির ঢোলাকিয়া। তিনিই ৪০ আলোকবর্ষ দূরে পৃথিবীর আকারের একটি সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহ আবিষ্কারে সাহায্য করেছেন। এই আকর্ষণীয় আবিষ্কার রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ঢোলাকিয়া ও তাঁর গবেষণা দলের কাজ তুলে ধরা হয়েছে। ঢোলাকিয়া বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য ইউরেকা মুহূর্ত।’
আবিষ্কৃত গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্লিস ১২ বি’। এই গ্রহের সূর্যের নাম ‘গ্লিস ১২’ যা একটি লাল বামন নক্ষত্র। এই নক্ষত্র আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট ও ঠান্ডা। অনুসন্ধানকারীরা ধারণা করছেন যে পৃথিবীর মতোই পাথুরে গঠনে এই গ্রহ গঠিত।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ‘গ্লিস ১২ বি’ গ্রহের উপরিভাগের তাপমাত্রা প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে গ্রহটির একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে। অন্যরা মনে করেন, এটি সম্পূর্ণরূপে বায়ুমণ্ডলহীন হতে পারে।
একটি গ্রহকে বাসযোগ্য বিবেচনা করতে অনেকগুলো শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, ‘গোল্ডিলকস জোন’ নামক অঞ্চলে অবস্থান। এই অঞ্চল হলো একটি নক্ষত্রের চারপাশের একটি কক্ষপথ, যেখানে তাপমাত্রা তরল পানির অস্তিত্বের জন্য উপযুক্ত।
আমাদের সৌরজগতে পৃথিবী গোল্ডিলকস অঞ্চলের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এই স্থান সূর্যের চারপাশে এমন একটি কক্ষপথে, যেখানে তাপমাত্রা তরল পানির অস্তিত্বের জন্য উপযুক্ত। শুক্র গ্রহ সূর্যের অনেক কাছাকাছি অবস্থিত। ফলে এর পরিবেশ অত্যধিক গরম ও জ্বলন্ত। অন্যদিকে মঙ্গল গ্রহ গোল্ডিলকস অঞ্চলের বাইরের প্রান্তে অবস্থিত। ফলে এটি অনেক ঠান্ডা এবং এর বায়ুমণ্ডল পাতলা। যার ফলে এখানে তরল পানি ধরে রাখা কঠিন। এই তুলনা থেকে দেখা যায় যে গোল্ডিলকস অঞ্চলের অবস্থান বাসযোগ্যতার একটি নির্ধারক। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, যা জীবন থাকতে পারে এমন গ্রহকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
গবেষকেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, ‘গ্লিস ১২ বি’–এর ব্যাসার্ধ পৃথিবীর ব্যাসার্ধের প্রায় সমান। গ্রহটি প্রতি ১২ দিন ৭৬ ঘণ্টায় এর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। আমাদের সৌরজগতের তুলনায় এই গ্রহের কক্ষপথ সূর্যের খুব কাছের। ফলে এটি খুব গরম হওয়ার কথা। কিন্তু ‘গ্লিস ১২’ যেহেতু একটি লাল বামন নক্ষত্র, সেহেতু এটি সূর্যের চেয়ে অনেক ঠান্ডা ও ম্লান। ফলে ‘গ্লিস ১২ বি’ এর নক্ষত্র থেকে যে বিকিরণ শোষণ করে, তা সূর্য থেকে পৃথিবীর পাওয়া বিকিরণের প্রায় ১ দশমিক ৬ গুণ।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ‘গ্লিস ১২ বি’ গ্রহের উপরিভাগের তাপমাত্রা প্রায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে গ্রহটির একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল থাকতে পারে। অন্যরা মনে করেন, এটি সম্পূর্ণরূপে বায়ুমণ্ডলহীন হতে পারে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের গবেষক ল্যারিসা প্যালেথর্প মনে করেন, পৃথিবী ও শুক্রের প্রাথমিক বায়ুমণ্ডল সম্ভবত গ্রহগুলোর গঠনের সময়ই তৈরি হয়েছিল। পরে সৌরবায়ুর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সারা গ্রহে। তা ছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ও গ্রহাণু প্রভাবের মাধ্যমে সৌরজগতের অবশিষ্ট উপাদান থেকে নতুন বায়ুমণ্ডল তৈরি হয়েছিল।
গবেষকেরা আশা করছেন, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গ্লিস ১২বি–কে তাঁরা আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হবেন। যদিও এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৬০০টির বেশি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হয়েছে। তবু আরেকটা পৃথিবী খুঁজে পাওয়া এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে আরও বেশি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। আরও ভালোভাবে জানাও সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আশাবাদী।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট, দ্য গার্ডিয়ান