জুল ভার্নের ১০টি সেরা বই

ফরাসি লেখক জুল ভার্ন তাঁর লেখকজীবনে অসংখ্য উপন্যাস লিখেছেন। তিনি ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী সায়েন্স ফিকশন লেখকদের একজন। তাঁর উপন্যাসগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য জুল ভার্নের সেরা কিছু উপন্যাসের তালিকা থাকছে এই লেখায়। এই উপন্যাসগুলো ফরাসি ভাষায় লেখা হয়েছিল। পরে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। বেশির ভাগ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান এবং আবিষ্কার। উপন্যাসের চরিত্রগুলো বিজ্ঞান ভালোবাসে আর ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। তোমার আগ্রহ যে বিষয়েই হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত যে এই তালিকার কোনো না কোনো একটি বই তোমার মনোযোগ আকর্ষণ করবেই করবে।

টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি (সাগর তলে)

টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি জুল ভার্নের সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটি। উপন্যাসটি শুরু হয় মূল চরিত্র ডক্টর অ্যারোন্যাক্সকে দিয়ে। শুরুতেই বর্ণনা পাওয়া যায়, কীভাবে একটি বিশালাকার প্রাণী (যেটিকে ডক্টর অ্যারোন্যাক্স একটি বিশাল তিমি মাছ মনে করেন) নির্বিচার সমুদ্রের জাহাজগুলোকে আক্রমণ করতে থাকে। অচিরেই সবাই আবিষ্কার করে সেই ‘বিশাল প্রাণী’ আসলে একটি বিরাট আকৃতির সাবমেরিন। সাবমেরিনটির নাম ‘নাটিলাস’। সেটি নিয়ন্ত্রণ করছিল ক্যাপ্টেন নিমো নামের একজন পাগলাটে ক্যাপ্টেন। উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হতে থাকে তিনটি মূল চরিত্রকে ঘিরে, যারা ক্যাপ্টেন নিমোর হাতে সাবমেরিনে বন্দী হয়। সাগর তলে নামে বাংলায় অনূদিত হয়েছে উপন্যাসটি

ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন (চাঁদে অভিযান)

১৮৬৫ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসটির গল্প বন্দুক নিয়ে উৎসাহী কিছু মানুষের একটি ক্লাব নিয়ে। ক্লাবটির নাম ‘ক্লাব বাল্টিমোর’। তারা সবাই মিলে একটি স্পেসগান নির্মাণ এবং উৎক্ষেপণের চেষ্টা করে। তিনজন মানুষ নিয়ে স্পেসগানটি মহাকাশে পাড়ি জমায়। তারপর প্রথমবারের মতো চাঁদে অবতরণ করে। বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভুল বর্ণনা দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে জুল ভার্নের উপন্যাসটির কথা অনেকেই উল্লেখ করেন। বিশেষ করে ‘স্পেস ক্যানন’ কীভাবে নির্মাণ করতে হয়, সেই বর্ণনা একেবারে নিখুঁতভাবে দিয়েছেন লেখক। এই বইটির পরবর্তী পর্বের নাম অ্যারাউন্ড দ্য মুন।

ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন (বেলুনে পাঁচ সপ্তাহ)

ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন অথবা আ জার্নি অব ডিসকভারি বাই থ্রি ইংলিশ মেন ইন আফ্রিকা উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৩ সালে। এটি ডক্টর স্যামুয়েল ফার্গুসন ও রিচার্ড কেনেডির আফ্রিকা মহাদেশ ভ্রমণের গল্প। সেই সময়ে ইউরোপীয়রা ভূদৃশ্য সম্পর্কে খুবই কম জানত। নিজেদের অভিযানকে আরও রোমাঞ্চকর করতে তারা একটি হট এয়ার বেলুনে যাত্রা করেন। বইটিতে অসংখ্য অ্যাডভেঞ্চারের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, নীল নদের উৎস খুঁজে বের করা।

আরও পড়ুন

অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ (আশি দিনে বিশ্বভ্রমণ)

বইটি ফরাসি ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ সালে। এটি ফিলিয়াস ফগ এবং তার ভৃত্যের অভিযানের কাহিনি। ২০ হাজার পাউন্ড বাজি ধরে ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ করেন তারা। এখনও পর্যন্ত পাঠকেরা বিশ্বজুড়ে এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলোর যাত্রার মানচিত্র তৈরি করে৷ এই উপন্যাসটি ভার্নের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে আজও সমাদৃত।

জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ

জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ জুল ভার্নের আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৬৪ সালে। তারপর ১৮৬৭ সালে আবারও প্রকাশিত হয়। প্রফেসর অটো লিডেনব্রোক এবং তার সঙ্গীদের পৃথিবীর গভীরে অবিশ্বাস্য যাত্রা নিয়ে লেখা এই বই। এখানে পৃথিবীর কেন্দ্রের যে কাল্পনিক চিত্র ভার্ন তুলে ধরেছিলেন, তা ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পাঠকদের মনে শিহরণ জাগিয়েছে। এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্র। অনেক লেখকই এই বই থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেরা লিখেছেন।

আরও পড়ুন

দ্য মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড (রহস্যের দ্বীপ)

এই বইটিকে অনেকেই টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি উপন্যাসের সিকুয়েল বলে থাকেন। এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৫ সালে। টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি এবং ইন সার্চ অব ক্যাস্ট্যাওয়েজ উপন্যাসের কিছু উপকরণ রয়েছে এতে। মার্কিন সিভিল ওয়ারের সময়কার গল্প উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। উত্তর আমেরিকার পাঁচ জন যুদ্ধবন্দীকে নিয়ে এগিয়ে গেছে কাহিনি। এই উপন্যাসে পাঠক আবারও ক্যাপ্টেন নিমোর মুখোমুখি হয়। জানতে পারে তার অতীত জীবন সম্পর্কে নানা গল্প । টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি উপন্যাসে তিনি কেন প্রতিশোধ নিতে বের হয়েছিলেন, তা-ও এই বইটি পড়লে জানা যাবে। বিখ্যাত এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একটি টিভি সিরিজের বাংলা ডাবিং করা ভার্শন নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে সম্প্রচারিত হতো।

অ্যান অ্যান্টার্কটিক মিস্ট্রি

দুই খণ্ডে বিভক্ত এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। বিখ্যাত লেখক এডগার অ্যালান পো’র দ্য ন্যারেটিভ অব আর্থার গর্ডন পিম অব নানটুকেট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে উপন্যাসটি লিখেছেন জুল ভার্ন। কাহিনি এগিয়েছে একজন ধনাঢ্য মার্কিনের জবানিতে, যিনি দূরবর্তী দ্বীপগুলোতে বসবাসরত জীবজন্তুদের নিয়ে কিছুকাল গবেষণা করেছিলেন। ‘হলব্রেনে’ চড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে চেয়েছিলেন তিনি। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার আসল অ্যাডভেঞ্চার।

পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল

এই বইয়ের অপর নাম টপ্সি টার্ভি। পারচেজ অব দ্য নর্থ পোল উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৮৮৯ সালে। ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন এবং অ্যারাউন্ড দ্য মুন উপন্যাসদ্বয়ের বাল্টিমোর গান ক্লাব নিয়ে এটি জুল ভার্নের লেখা তৃতীয় উপন্যাস। এই উপন্যাস লেখা হয়েছে প্রথম উপন্যাসের ২০ বছর পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। প্রথম দুটি প্রিকুয়েলের কিছু কিছু চরিত্রের সঙ্গে এই উপন্যাসে পাঠকের আবারও দেখা হবে। বইটিতে আমরা দেখতে পাই, পৃথিবীর উত্তর মেরুর মালিকানা নিয়ে একটি নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই নিলামে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আমেরিকান ব্যক্তি জয়ী হন। পরে দেখা যায়, সেই ব্যক্তি একটি দলের সদস্য। দলটির উদ্দেশ্য হলো, পৃথিবীর অক্ষরেখা হেলানো থেকে সোজা করে দেওয়া। সেই দলটি বিশ্বাস করে তারা তাদের ‘স্পেস ক্যানন’ ব্যবহার করে পৃথিবীকে সোজা করে দিতে পারবে।

আরও পড়ুন

ফেসিং দ্য ফ্ল্যাগ

ফেসিং দ্য ফ্ল্যাগ উপন্যাসটি জুল ভার্নের Voyages Extraordinaires, অর্থাৎ অসাধারণ যাত্রা সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭৯ সালে। বইটির মূল বিষয় হলো দেশপ্রেম। এই বইতে দেখা যায়, কীভাবে ফ্রান্সসহ পুরো পৃথিবীই একটি ভয়ংকর অস্ত্রের হুমকির মুখে পড়ে। সেই অস্ত্রের আবিষ্কারক অস্ত্রটি কোথাও বিক্রি করতে না পেরে দিন দিন পাগল হয়ে যেতে থাকে।

আরও পড়ুন

দ্য চাইল্ড অব ক্যাভার্ন

এই বইটির অপর নাম ব্ল্যাক ইন্ডিজ। এটি ১৮৭৭ সালের মার্চ ও এপ্রিলে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য হলো, স্কটল্যান্ডের একটি খনিশ্রমিক সম্প্রদায়ের জীবন। সেখানে একটি বিশেষ খনি ছিল। সবাই মনে করত ওই খনিতে কিছুই নেই। কিন্তু খনিটিকে যখন আবারও উন্মুক্ত করা হলো, উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলো দেখতে পেল যে সেখানেও খনির গভীরে একটি ছোট্ট সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করছে।

এগুলো ছাড়াও জুল ভার্ন রচিত আরও অসংখ্য মজার মজার উপন্যাস ও ছোটগল্প রয়েছে। উপন্যাসগুলোর মধ্যে ইন দ্য ইয়ার ২৮৮৯, দ্য মাস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড, মিগুয়েল স্ট্রগঅফ, আ ফ্লোটিং সিটি ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: বুকঅ্যানালাইসিস ডটকম, গুডরিডস