শিমুল ফুলের শালিক
একটা আমবাগান। ছোট আমগাছগুলো মুকুলে নুয়ে পড়ছে। বসন্ত বাতাস বইছে তখন। তাতে আমের মুকুলের মাতাল মাতাল গন্ধ। ভাঁটফুল ফুটে আছে সাদা খইয়ের মতো। চারপাশের বুনো গুল্মলতা শীতের জড়তা কাটিয়ে, আড়মোড়া ভেঙে জাগতে শুরু করেছে সদ্যই। ঠিক তাদেরই পাশে একাকী দাঁড়িয়ে আছে একটা শিমুলগাছ। খুব বড় নয়। মাঝারি আকারের। শিমুলগাছ অনেক উঁচু হয়। তাই মাঝারি হলেও উচ্চতা তার কম নয়।
শিমুল পাতাঝরা গাছ, তার মানে শীতে সব পাতা ঝরে পড়ে। কিন্তু অন্য পাতাঝরা গাছের চেয়ে শিমুল একটু আলাদা। পাতাঝরা গাছেরা বসন্তের শুরুতে নতুন পাতায় সেজে ওঠে। কিন্তু নতুন পাতার আগমনের আগেই শিমুলগাছে ফুল আসে। লাল লাল বড় বড় ফুল। ঘণ্টার মতো দেখতে এই ফুলের পাপড়িও বেশ পুরু এবং রসালো। ন্যাড়া গাছের প্রতিটা ডালে ফুলের আগুন ছড়িয়ে পড়ে বসন্তে।
বড় ফুল, কেশরগুলোও বেশ লম্বা, ভেতরে মধু থাকে। মধুর লোভে ছুটে যায় নানা রকম কীটপতঙ্গ। আর যেখানেই কীটপতঙ্গের আনাগোনা, সেখানেই পাখিরা ভিড় জমায়।
বসন্তের বাতাস গায়ে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমবাগানটার ভেতরে। জানি, শিমুল ফুলের টানে পাখিরা আসবে। কিন্তু এত প্রজাতির পাখিরা আসবে, অতটাও ভাবিনি। প্রথমে একটা কাঠবিড়ালি, এরপর একে একে কাঠঠোকরা, বাংলা বুলবুলি, নীল টুনি, শ্বেতাক্ষী, ফটিকজল, শাহেলি, টুনটুনি, বেনেবউ, বাদামি লাটোরা আর দুই জাতের শালিক। এক ঘণ্টায় ১২ প্রজাতির পাখির দেখা পেলাম।
হাতে ক্যামেরা আর ৬০০ মিলিমিটারের জুম লেন্স। লাল ফুলে পাখিদের অপূর্ব ভঙ্গিমা একের পর এক ধরা পড়ল ক্যামেরার সেন্সরে। নিচে শুধু দুই জাতের শালিকের ছবি রইল কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য।