কিশোর আলোর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কিআ কার্নিভ্যালের ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। সব তথ্য ঠিকমতো দেওয়ার পরও ফর্ম জমা হচ্ছিল না। কী বিপদে পড়লাম! অনেকক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করার পর বড় আপুর সাহায্য চাইলাম।
‘আমি ফর্ম সাবমিট করতে পারছি না,’ চেঁচিয়ে আপুকে ডাকলাম।
‘আরেহ! এটা তো ক্যাপচা।’
‘ক্যাপচা? ক্যাপচা কী?’
আমি ক্যাপচা শব্দটির সঙ্গে একদমই পরিচিত নই। আমার মতো অনেকেই জানে না, ক্যাপচা আসলে কী? ক্যাপচাগুলো কেন ব্যবহার করা হয়? একটু ঘেঁটে তোমাদের জন্য লিখে ফেললাম।
একটা আঁকাবাঁকা আর যাচ্ছেতাই লেখাযুক্ত ছবি ক্যাপচা নামে পরিচিত। ক্যাপচা মূলত একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা। স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপব্যবহার, স্প্যাম এবং সিস্টেমে অননুমোদিত অ্যাক্সেস প্রতিরোধ করার জন্য ক্যাপচা ডিজাইন করা হয়েছে। লুইস ভোন আহনের হাত ধরে ইন্টারনেট–জগতে প্রবেশ করে ক্যাপচা, যদিও অফিশিয়ালি এর নামকরণ করা হয় ২০০৩ সালে।
ক্যাপচা সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় ইয়াহু মেইল বা জিমেইলের মতো সাইটগুলোতে, যেখানে বিনা মূল্যে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে পারে মানুষ। এখন তোমাকে একটা নতুন বিষয় জানতে হবে। যার নাম বট। একরকম সফটওয়্যার বা রোবট, যে নিজে নিজে কিছু কাজ করতে পারে। ওয়েবসাইটের ক্ষতি করার জন্য অনেক সময় বট ব্যবহার করা হয়। বটগুলো যেন অনেক বেশি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলতে না পারে, তার জন্য রয়েছে ক্যাপচা। তোমার ফেসবুকে যদি কোনো বট আক্রমণ করে, তবে তোমার কোনো পোস্টে হাজার হাজার কমেন্ট আসতে পারে, মেসেজে আসতে পারে অনেক লিংক। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা এই কমেন্ট বা লিংক তোমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। ওয়েব পেজ বা ব্লগে এ রকম স্প্যাম মেসেজ বা কমেন্ট প্রতিরোধ করার জন্যই ক্যাপচা বানানো হয়েছে।
ক্যাপচার সবচেয়ে প্রচলিত রূপ হলো, আঁকাবাঁকা কিছু অক্ষর ও সংখ্যাযুক্ত একটি ছবি। এ ছাড়া কোনো একটি ছবি থেকে নির্দিষ্ট একটি বস্তুকে আলাদা করতে হয়, এমন ক্যাপচাও আছে। যেমন একটি গাড়িকে ভাগ করে বলে, কোন কোন ছবিতে গাড়ি আছে বাছাই করো।
কিছু ক্ষেত্রে ক্যাপচা একটি টুল হতে পারে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে শেখানোর জন্য ক্যাপচা ব্যবহার করা হয়। মডেলগুলো পরে অন্য উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন ডিজিটাল মাধ্যমে বই তৈরি করা, ছবি বানানো, গুগল ম্যাপের উন্নতি করা। শুরুতে ক্যাপচাকে এই কাজে ব্যবহার করা হবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে। এখন বিভিন্ন বট এসব ক্যাপচা পূরণ করতে পারে। যেগুলো ঠেকাতে গুগল নিয়ে এসেছে নো ক্যাপচা আর রি–ক্যাপচার ধারণা।
নো ক্যাপচা আর রি–ক্যাপচা মানুষ আর বটকে আলাদা করবে। স্প্যামিং অনেকাংশে আটকে দেবে গুগলের এই প্রযুক্তি। তুমি ক্যাপচার চেকবক্সে ক্লিক করলে সঙ্গে সঙ্গে গুগলের কাছে তোমার কিছু ইনফরমেশন চলে যাবে। যেমন তোমার আইপি অ্যাড্রেস, অবস্থান, সময়, ক্লিক করার আগমুহূর্তে তোমার কার্সর মুভমেন্ট, পেজ স্ক্রলিং ইত্যাদি। বেশির ভাগ সময় গুগলের ইন্টেলিজেন্স বট এ তথ্য বিশ্লেষণ করে বুঝে ফেলে, ব্যবহারকারী কোনো মানুষ না রোবট। তাই স্প্যামিং কঠিন হয়ে গেল। বট দিয়ে আর অসংখ্য ই–মেইল খোলা কঠিন হয়ে গেল।
আমাদের উপকারের জন্যই ব্যবহার করা হয় ক্যাপচা। মাঝেমধ্যে বিরক্তিকর মনে হলেও বৃহৎ স্বার্থে আপাতত এটুকু ত্যাগ মেনে নিতে হচ্ছে। ওয়েবসাইটে এসব ক্যাপচা না থাকলে, কোনো হ্যাকার কম্পিউটার বট ব্যবহার করে হাজার হাজার স্প্যাম জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলতে পারত। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভুল ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করত। অনলাইনে ক্যাপচা না থাকলে শুধু স্প্যাম জিমেইল অ্যাকাউন্ট কিংবা অন্য কোনো অ্যাকাউন্ট দিয়ে সাইটগুলো ভরে যেত, তা নয়, আমরাও জীবনে কিছু সমস্যায় পড়ে যেতাম। প্রচুর ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে রিকোয়েস্ট পেতাম আমরা, যেগুলো কোনো রোবট বটের তৈরি। ঝামেলা আরও বাড়ত তখন। তাই ক্যাপচা বেশ কাজের, স্বীকার করতেই হবে।