শিক্ষকের ট্রাংকে প্রথম আলোর পুরোনো সংখ্যা, সন্তানের আছে কিশোর আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় এবং নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতনতাবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘আগামীর অনন্যা’। এই অনুষ্ঠানে নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সহিদুল ইসলাম বলেছেন, প্রথম আলোর সঙ্গে শুরু থেকেই আছি। প্রথম আলোর প্রথম সংখ্যা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অনেক সংখ্যা আমার ট্রাংকে জমা করা আছে। আমি নিজে প্রথম আলো, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা নিয়মিত পড়ি। আমার ছেলের ট্রাংকে জমা করা আছে কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তা। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে হলে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি এগুলো পড়তে হবে, সৃষ্টিশীল কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।’
'আমি কিশোরী, চলো ইচ্ছেডানায় উড়ি' স্লোগানে ৬ শতাধিক কিশোরী এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন স্কুলে আয়োজন করে কিশোর আলো ও ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন।
১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর দুপুর পৌনে দুইটায় নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘আগামীর অনন্যা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কিশোর আলোর সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হককে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের গল্প আর কৌতুকে মাতিয়ে রাখেন তিনি। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট আর ত্যাগের বিনিময়ে দেশটা পেয়েছি আমরা। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজেদের আলোকিত করে দেশটাকে আলোকিত করতে হবে। আমাদের মুখ থাকতে হবে আলোর দিকে, সূর্যের দিকে। সব সময় মানুষকে সহযোগিতায় ও দেবার বেলায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে হবে। তোমাদের যোগ্য হতে হবে। নিজের মূল্য বুঝতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রচুর বই পড়তে হবে। সব স্বপ্ন বইয়ে পাওয়া যায়।’
সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞানচর্চা করতে সকলকে উৎসাহিত করে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যের উপকার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভালো করে লেখাপড়া করে নিজেদের আলোকিত করতে হবে। বাংলাদেশকে গড়তে হবে। কে গড়বে, শিক্ষার্থীরা। মানুষগুলোকে জোড়া লাগালে, দেশটা জোড়া লাগবে। মানুষগুলো আলোকিত হলে দেশ আলোকিত হবে। সবাইকে ভালো মানুষ হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভালো ও শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে হবে। তিনটি ভাষা-বাংলা, ইংরেজি ও কম্পিউটারের ভাষা শিখতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে। খেলাধুলা, বিতর্কসহ বিভিন্ন ভালো কাজ করতে হবে। নিজের কাজটুকু নিজে যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠদের হবেই হবে।’
অনুষ্ঠানে সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। দুটি প্রতিষ্ঠানেই স্কাউট হাততালি এবং বিভিন্ন কুইজে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পুরস্কার জিতে নেয় শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান চলাকালে শিক্ষার্থীদের 'মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে 'না' পাঠ করান আনিসুল হক। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে উদাহরণ দিতে গিয়ে বিভিন্ন দার্শনিকের কথাও তুলে ধরেন তিনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা আনিসুল হকের সঙ্গে সমবেত কণ্ঠে বলে ‘যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো, যা কিছু ভালো তা করবে কিশোর আলো’।
সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান বলেন, মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘আগামীর অনন্যা’ নামের এই অনুষ্ঠানটি অসাধারণ একটি উদ্যোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক সুরক্ষার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আনিসুল হক স্যার বিদ্যালয়ে এসেছেন, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।
অনুষ্ঠানে ডা. পাপিয়া আফরোজ উপস্থিত কিশোরীদের পিরিয়ড-বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং এসব সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিনের পক্ষ থেকে উপস্থিত কিশোরীদের ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন, একটি করে বলপেন ও একটি করে কিশোর আলো ম্যাগাজিন উপহার দেওয়া হয়।
ডা. পাপিয়া আফরোজ বলেন, ‘পিরিয়ড চলাকালে সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের নারীরা জরায়ু ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলে কিশোরী ও নারীরা পিরিয়ডকালীন সময়ে নোংরা কাপড় ব্যবহার করে থাকে। পরিস্কার কাপড় ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার না করলে নানা সমস্যা হতে পারে। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মেয়েদেরকে পিরিয়ড-বিষয়ক সব তথ্য জানতে হবে। তাহলেই মেয়েদের পথচলা সহজ হবে।’
ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিনের পক্ষ থেকে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এক্সিকিউটিভ ব্র্যান্ড যোশুয়া কুইয়া বলেন, ‘নারীদের কথা ও স্বাস্থের কথা ভেবেই এই অনুষ্ঠান। পিরিয়ড আমাদের কাছে এখন স্বাভাবিক আলোচনা না, কিন্তু এটিকে স্বাভাবিক করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ নারী মাসিক চলাকালে স্যানিটারি ন্যাপকিনের পরিবর্তে কাপড় বা তুলা ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের ২৯ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে এবং প্রায় ৭১ শতাংশ নারী তাঁদের মাসিক চলাকালে কোনো ধরনের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য এমজিআই ২০২৩ সালের মার্চে নারীদের মাসিকের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন বাজারে নিয়ে এসেছে। তোমরা অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিনকে নিজেদের পণ্য মনে করবে। নিজেদের পণ্য নিজেরাই ব্যবহার করবে। অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন খুবই ভালো মানের পণ্য। আমরা অনেক কম দামে সর্বোচ্চমানের পণ্য দিচ্ছি।’
অনুষ্ঠান শেষে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই একটি করে ‘সুরক্ষা বক্স’ স্থাপন করা হয়। এসব বক্স থেকে বিদ্যালয়গুলোর কিশোরী শিক্ষার্থীরা সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয় করতে পারবে।
সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান শিক্ষক মো. বদিউজ্জামান। নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান মো. সহিদুল ইসলাম। প্রথম আলো নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদৎ হোসেনের সঞ্চালনায় দুটি অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সার্কুলেশন সেলস বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন রওনক, সার্কুলেশনের ব্যবস্থাপক রাসেল রানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের উদ্যোক্তা ও পরিচালক হারুন অর রশিদ ও শাহীম মৃধা। আয়োজনে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্ধুরা।