কাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি ১২ বছর বয়সী স্নিগ্ধা (ছদ্মনাম)। গতকাল ছিল শুক্রবার। ছুটির দিন। মা–বাবার সঙ্গে ছোট ভাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিছু বই কিনবে নিজের জন্য আর ছোট ভাইটির জন্য। কিন্তু গতকাল দুপুরে যা শুরু হলো, তাতে বেড়াতে যাওয়া তো দূরের কথা, ভয়ে এতটুকু হয়ে গেছে সে আর তার সাত বছর বয়সী ছোট ভাই স্বচ্ছ (ছদ্মনাম)। কোটা সংস্কার নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ঢাকায় অস্থিরতা ছিল। বন্ধ ছিল বেশ কিছু রাস্তা। কিন্তু গতকাল যা হলো, তাতে দুই ভাই–বোনের ভীষণ মন খারাপ। সঙ্গে ভয়। চারদিকে সাউন্ড গ্রেনেড আর হইচই–ভাঙচুরের শব্দ। বাবা বললেন, অনেক মানুষ মারা গেছে। স্নিগ্ধা আর স্বচ্ছ ভাবছে, কেন এই মৃত্যু? কেন এই সহিংসতা? মা–বাবার মুখ থমথমে—বারবার টিভি দেখছেন। মায়ের হাতে মোবাইল ফোন, কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই। ফুফাতো ভাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়েছে। সব স্কুল–কলেজ বন্ধ। সব মিলিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ভয়ানক পরিস্থিতি।
ইদানীং ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো স্নিগ্ধার মতোই সবাইকে বিস্মিত, ক্ষুব্ধ আর বেদনার্ত করে। সবারই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এসব নৃশংসতা সবার মনেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে এই মানসিক আঘাতের প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী ও ক্ষতিকর হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত নির্মম নৃশংসতার মুখোমুখি হলে শিশুসহ অন্যদের মধ্যে দেখা দিতে পারে তীব্র মানসিক চাপ (অ্যাকিউট স্ট্রেস), কনভারশন ডিজঅর্ডার, সাময়িক উন্মাদনা (ব্রিফ সাইকোসিস), আতঙ্ক (প্যানিক অ্যাটাক), দুশ্চিন্তা (অ্যাংজাইটি), অস্বাভাবিক শোকার্ত থাকা ইত্যাদি। দুই সপ্তাহ পর থেকে কয়েক মাসের মধ্যে দেখা দিতে পারে আঘাত–পরবর্তী মানসিক চাপ (পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার), বিষণ্নতা ইত্যাদি। শিশু–কিশোরদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে দেখা দিতে পারে ব্যক্তিত্বের সমস্যা।
মানুষ যখন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ার্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তখন তিন ধাপে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রথম ধাপে সে বোঝার চেষ্টা করে বিপদটি কী এবং এর মাত্রাই-বা কতটুকু? দ্বিতীয় ধাপে এই বিপদের ফলে তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া ঘটে; যেমন দৌড়ে সে পালাতে চায় বা আক্রমণ করতে চায় কিংবা ভয় পায়, রেগে যায় বা কেঁদে ফেলে। তৃতীয় ধাপে সে তাৎক্ষণিকভাবে বিপদ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। স্মৃতিতে এই অভিজ্ঞতা রেখে দেয়, পরবর্তী সময়ে সে কীভাবে রক্ষা পাবে, সে জন্য। শিশু–কিশোরদের ক্ষেত্রেও তিন ধাপে প্রতিক্রিয়া ঘটে। কিন্তু এর ফলাফল বড়দের চেয়ে আলাদা হয়। কারণ, প্রথম পর্যায়ে সে বিপদের গুরুত্বটা হয় খুব বেশি করে দেখে অথবা বুঝতেই পারে না। ফলে দ্বিতীয় ধাপে তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া হয় খুব বেশি বা একেবারে কম। তৃতীয় ধাপে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না। ফলে শিশু-কিশোরদের স্মৃতিতে এই অভিজ্ঞতা একটি অস্বাভাবিক গড়ন ও মাত্রা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে যায়। তাই জুলাই ২০২৪–এর মতো ট্রমাটিক ঘটনায় মানসিক আঘাত পাওয়া শিশুর বিকাশ বারবার হোঁচট খেতে পারে। কেবল যে শিশু বা কিশোর নিজে নির্মমতার মুখোমুখি হয়েছে তা নয়; বরং যে শিশু সেটি দেখেছে বা শুনেছে, সমস্যা হতে পারে তারও। কেউ কেউ এ চাপ কাটিয়ে উঠতে পারলেও অনেকেই তা মোকাবিলা করতে পারছে না বা পারবে না। তাদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যা দেখা দেবে।
শিশু–কিশোরদের বয়স অনুযায়ী নির্মমতা, নৃশংসতা আর নেতিবাচক পরিস্থিতির প্রভাব ভিন্ন ভিন্নভাবে পড়ে। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া, স্কুল–কলেজ ও পরীক্ষা বন্ধ হওয়া, ভাঙচুর, জ্বালাও–পোড়াও থেকে শুরু করে বেদনাদায়ক মৃত্যুর ঘটনাগুলো শিশুর মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবেই।
চোখের সামনে পরিচিত কিংবা অপরিচিত কারও মৃতদেহ বা মৃতদেহের ছবি, উপরন্তু হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার মতো বর্বরতম দৃশ্য দেখাটা যেকোনো মানুষ তো বটেই, শিশুদের জন্যও অনেক বড় আঘাত। প্রায় সারা জীবন তার মনের ওপর এর প্রভাব থেকে যেতে পারে।
শিশু–কিশোরদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নির্মমতা, নৃশংসতা আর দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে তারা মানসিকভাবে আঘাত পেতে পারে আবার শিশু নিজেও কিন্তু নির্মমতার মুখোমুখি হতে পারে। সহপাঠী বা বন্ধুর ভয়ার্ত মুখ তার আত্মবিশ্বাসকে দুর্বল করে তোলে। এই আকস্মিক-তীব্র মানসিক আঘাত শিশুর জীবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, আবেগ–সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত করতে পারে। শৈশব–কৈশোরে বীভৎসতার মুখোমুখি হওয়া শিশু বড় হলে তাদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে, এমনকি তার আচরণও হয়ে উঠতে পারে হিংসাত্মক ও আগ্রাসী। পরিবার ও সমাজে নিজেকে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হতে পারে কারও কারও।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ঘটবে কি না, মানুষ আরও নিষ্ঠুর হবে কি না, সেটার ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ সামান্যই।
প্রথমেই মনে রাখবে যে এই সহিংসতা-মৃত্যু-আগুন-গুলি-ভাঙচুর শেষ কথা নয়। নৈরাশ্য নয়; বরং আশার বীজ মনের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখবে। চারপাশে মানবিক আর ইতিবাচক যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলো বারবার নিজের মনে আনার চেষ্টা করবে।
সাম্প্রতিক সহিংসতার পর কিশোর-কিশোরীদের মনেও তৈরি হয়েছে ক্ষত। নানাভাবে এই সহিংসতা তাদের স্পর্শ করেছে। সহিংসতায় হতাহত শিশুদের যারা কাছের বন্ধু-সহপাঠী আছে, তারা এই বন্ধু-সহপাঠীদের অকালমৃত্যুতে শোকগ্রস্ত হয়েছে, ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং আবেগ ও আচরণের সমস্যায় কমবেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া কেউ কেউ সামনে থেকে বা বাড়ির ভেতর থেকে অথবা প্রচারমাধ্যমে এই হতাহতের ঘটনা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সাউন্ড গ্রেনেড আর গুলির বিষয়গুলো দেখেছে। তাদের মনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক আর মানসিক চাপ। এ ছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ, পরীক্ষা পেছানো, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকাও তাদের মনে তৈরি করেছে অতিরিক্ত মানসিক চাপ। এই কিশোর-কিশোরী বা তাদের বয়সী কেউ কেউ প্রতিবাদ-আন্দোলনে অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে। এ কারণে এই বয়সী কিশোর-কিশোরীদের বড় একটা অংশ নিজেরাও রয়েছে গ্রেপ্তার-আতঙ্কে। এই নৃশংস ঘটনার মুখোমুখি হওয়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে তীব্র মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা, ভীতি, সহিংসতার স্মৃতি বারবার মনে আসা, নিজেকে গুটিয়ে রাখা, ঘুমের সমস্যা, পড়ালেখা করতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, ভুলে যাওয়া, হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা, অপরাধবোধ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে, সহিংসতার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া কিশোর-কিশোরীদের নিজেকে ভালো রাখার জন্য কিছু বিষয় জানা দরকার।
শিশু-কিশোরদের যা করা উচিত
• মনের অবস্থা চেপে রাখবে না। ভালো লাগা, খারাপ লাগা ইত্যাদি বিষয় কাছের বন্ধু বা মা–বাবা কিংবা কোনো শিক্ষকের সঙ্গে শেয়ার করতে পারো। কথা বলো। মনের ভেতর কোনো অনুভূতি চেপে রাখবে না। কাঁদতে ইচ্ছা হলে কাঁদো। ছেলে বা মেয়ে—সবারই কাঁদার অধিকার রয়েছে। আর চারপাশের বিষয় নিয়ে অন্যকে আঘাত-বিদ্রূপ না করে নির্ভয়ে নিজের মতামতটা প্রকাশ করতে পারো।
• প্রথমেই মনে রাখবে যে এই সহিংসতা-মৃত্যু-আগুন-গুলি-ভাঙচুর শেষ কথা নয়। নৈরাশ্য নয়; বরং আশার বীজ মনের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখবে। চারপাশে মানবিক আর ইতিবাচক যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলো বারবার নিজের মনে আনার চেষ্টা করবে।
• মনে রাখবে, সহিংসতা, নির্মমতার মুখোমুখি হলে যে কারও মনের ওপর চাপ পড়তে পারে। তাই তোমার মনের ওপর চাপ পড়ছে বলে তোমার নানা ধরনের মানসিক লক্ষণ দেখা দিচ্ছে বলে মনে করবে না, তুমি দুর্বল। বরং মনে রাখবে, তুমি একজন মানবিক গুণসম্পন্ন কিশোর বা কিশোরী।
• নিজের মনের কথাগুলো লিখে ফেলো। যা যা ঘটেছে, সেটাও লিখে রাখতে পারো। এ ঘটনার পর যে তোমার খারাপ লাগছে, সেটাও লিখে ফেলো। কেবল দুঃখ পেয়ো না, নিজেকে একটা ধন্যবাদ দাও এই ভেবে যে সহিংসতা-নৃশংসতা তোমাকে কাঁদায়, তাই মানুষ হিসেবে তুমি স্মার্ট, মানবিক ও আধুনিক। পৃথিবীকে সুন্দর রাখার চেষ্টা করছ বলেই তোমার আজ খারাপ লাগছে।
• তোমার যদি কোনো শখ থেকে থাকে, যেমন বই পড়া, গান শোনা, গান করা, ছবি আঁকা, তবে এখন ঘরে বসে সেগুলোর চর্চা করতে পারো। এমনকি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে পারো।
• প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজেকে দাও, যেটাকে বলি ‘মি টাইম’। একান্ত তোমার সময়। হতে পারে সেটা ৫-১০ মিনিট। এই সময়ে তুমি নিজেকে নিয়ে ভাবো। নিজের ভেতর খানিকটা ডুবে যাওয়ার চেষ্টা করো। কিছুটা সময় হালকা ব্যায়াম আর ধ্যান করে নিতে পারো।
• রাত জাগবে না মোটেই। দিনের বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে না। সময়মতো খাবে। নিজেকে বা পরিবারকে বিপদে ফেলতে পারে, এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছ কি না তা ভাবতে হবে।
• মনের চাপ কমাতে মনের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। যেমন অন্যকে ট্রল করা, বিদ্রূপ করা, কোনো ধরনের নেশা করা, অন্যকে আক্রমণ করা, অপমান করা, নিয়মকানুনের বিরোধিতা করা ইত্যাদি।
• সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল আচরণ করো।
• যদি দেখো যে মানসিক চাপের লক্ষণগুলো ক্রমেই বাড়ছে, তবে অভিভাবকের সাহায্য নিয়ে মনোরোগ-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারো।
প্রতিকূল আর সহিংসতার মুখোমুখি হওয়া শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার—পরিবারের, স্কুলের আর চারপাশের সব মানুষের।
ছোটবেলা থেকেই শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিটি পর্বে তাকে বোঝাতে হবে, সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও জীবনের একটি অংশ। দুর্বিপাক আর ব্যর্থতাকে অস্বীকার করে নয়; বরং সেগুলো অতিক্রম করে কীভাবে বাঁচতে হয়, সেটাই শেখাতে হবে প্রতিটি শিশুকে।
অভিভাবকদের যা করা উচিত
• শিশু–কিশোরদের নির্মম ও নৃশংস দৃশ্য আর ঘটনা সরাসরি বা প্রচারমাধ্যমে দেখতে নিরুৎসাহিত করা।
• বীভৎস কোনো কিছু প্রত্যক্ষ করা থেকে শিশুকে বিরত রাখা। অনেক সময় দেখা যায় শিশুকে কোলে নিয়ে উৎসুক মা-বাবা আহত বা নিহত লোকজনকে দেখার চেষ্টা করছেন, যা কোনোভাবেই উচিত নয়।
• তবে শিশুকে ভালো-মন্দ আর শুভ-অশুভর পার্থক্য ছোটবেলা থেকেই বোঝাতে হবে। ‘তুমি ছোট, এগুলো বুঝবে না’ বলে এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। কোন বিষয়টা নৃশংস আর কোনটা সুন্দর, তা বয়স অনুযায়ী তাকে বোঝাতে হবে।
• শিশুর সামনে পারিবারিক কলহ সম্পূর্ণ পরিহার করা।
• তারা মনে আঘাত পেতে পারে, এমন কটুবাক্য দিয়ে তাকে তিরস্কার করা থেকে বিরত থাকা।
• সুন্দর ও নির্মলতার বিপরীতে ক্লেদ ও নির্মমতার যে জগৎ আছে, শিশুকে ধাপে ধাপে তার বয়স অনুযায়ী তা জানানো, যাতে সে কখনো আকস্মিক বা তীব্র মানসিক আঘাত পেলেও মানিয়ে নিতে পারে।
• নৃশংসতার মুখোমুখি হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন পরিশীলিত পারিবারিক কাঠামো। শিশু–কিশোরদের দিতে হবে নৈতিক শিক্ষা। তাদের সামনে এমন কোনো বিষয়কে উৎসাহিত করা যাবে না, যাতে সে মনে করে হিংস্রতাই সক্ষমতা, নৃশংসতাই শক্তি আর নির্মমতাই বিজয়।
• প্রচারমাধ্যমকে হতে হবে দায়িত্বশীল। সহিংসতা বা হিংস্রতার সংবাদ এমনভাবে পরিবেশন করতে হবে, যাতে হিংস্র আচরণকারী কখনোই ‘হিরো’ হয়ে না ওঠে এবং এই সংবাদ থেকে কেউ যেন সহিংসতায় উৎসাহিত না হয়।
• এ সময় শিশুদের কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তাদের যৌক্তিক প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
• তাদের রাতে জেগে থাকা আর অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানোকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। তারা যাতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমায়, সে চেষ্টা করতে হবে।
• তাদের জোর করে কোনো কিছু করাতে বাধ্য করা যাবে না (যেমন ‘তোমাকে এক্ষুনি ঘুমাতে হবে’, ‘যা হচ্ছে হোক, তুমি পড়তে বসো’ ইত্যাদি)।
• শিশু–কিশোর বা পূর্ণবয়স্ক কারও মধ্যে হিংস্রতার বহিঃপ্রকাশ দেখলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
• শিশু–কিশোরদের সংবেদনশীল মনকে সুরক্ষা দিতে হবে, তাকে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হতে সাহায্য করতে হবে। কোনোভাবেই শিশুর সামনে নৃশংসতা আর বর্বরতার পক্ষ নেওয়া যাবে না, হিংস্রতা ও উগ্রতাকে জাস্টিফাইয়ের চেষ্টা করা যাবে না।
• যদি সুযোগ থাকে আর কোনো ঝুঁকি না থাকে, তাহলে নৃশংসতায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যেকোনো সহযোগিতায় শিশুর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে।
• সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা শিশুর রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে, বিছানায় প্রস্রাব করতে পারে, অস্বাভাবিক আচরণ করতে পারে (বিনা কারণে হাসা, কাঁদা, আপনজনকে চিনতে না পারা, কথা বলতে না পারা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি)। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।