টিনএজারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে বেশ কিছু নতুন নিয়ম যোগ করার কথা ঘোষণা করেছে মেটা। এসব নিয়ম শুধু ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য। চলো, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
কী পরিবর্তন হয়েছে?
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ইনস্টাগ্রামে ‘টিন অ্যাকাউন্টস’ নামে একটি ডিফল্ট সেটিং যোগ করেছে মেটা। ১৮ বছরের কম বয়সীরা সংক্রিয়ভাবেই এই নিয়মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে। ফলে নিজে থেকেই এই অ্যাকাউন্ট ‘প্রাইভেট’ হয়ে যাবে। টিন অ্যাকাউন্টধারীরা এখন চাইলেই সবাইকে মেসেজ দিতে পারবে না। যাঁরা ফ্রেন্ডলিস্টে থাকবেন, শুধু তাঁদের সঙ্গেই মেসেজে যোগাযোগ করতে পারবে। ফ্রেন্ড ছাড়া অন্যদের ট্যাগও করতে পারবে না। ফ্রেন্ড হয়ে যদি কেউ আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করে বা মেসেজ পাঠানোর সময় সংবেদনশীল কোনো কিছু পাঠায়, তাহলে সেগুলো ফিল্টার করবে ইনস্টাগ্রাম। এমনকি দিনে কত ঘণ্টা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে পারবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেবে অ্যাপটি। এতে মা–বাবারা সন্তানদের আরও ভালোভাবে তদারক করতে পারবেন।
নতুন নিয়মগুলো কী?
১৮ বছরের কম বয়সী যেকোনো ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ব্যক্তিগত টিন অ্যাকাউন্টে’ যুক্ত হয়ে যাবে। এর মানে, সবাই টিনএজারদের পোস্ট দেখতে পারবে না। শুধু ফ্রেন্ডস ও ফলোয়াররাই দেখতে পাবে। এমনকি অনুসারীদের মধ্যে যদি কেউ ১৮ বছরের বেশি বয়সী থাকেন, তাঁরা যদি আপত্তিকর কিছু পোস্ট করেন, তাহলে সেগুলো টিনএজার বা কিশোরেরা দেখতে পারবে না। ফলোয়ার ছাড়া বাকিদের মেসেজ দেওয়ার অপশনও ব্লক করা থাকবে। এ ছাড়া রাত ১০টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নোটিফিকেশন ব্লক করা থাকবে। কত সময় অ্যাপটি ব্যবহৃত হচ্ছে, তা–ও ট্র্যাক করতে পারবেন অভিভাবকেরা। চাইলে সময়সীমা নির্ধারণও করে দিতে পারবেন অ্যাপে। কিশোরদের কাছে কী কী মেসেজ আসছে, সেটাও দেখতে পারবেন অভিভাবকেরা। অবশ্য ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরেরা চাইলে নিজেরাই এই ডিফল্ট সেটিংস পরিবর্তন করতে পারবে। তবে এর চেয়ে কম বয়সীরা কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। পরিবর্তন করতে হলে লাগবে মা–বাবার অনুমতি।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
অভিভাবক ও স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিশোর–কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর। তাঁদের কথা মেনেই ইনস্টাগ্রামে আসছে এই পরিবর্তন। এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই অপ্রীতিকর জিনিস টাইমলাইনে চলে আসে। অনেক অপরিচিত মানুষ মেসেজ দিয়ে বিরক্ত করেন। তা ছাড়া টিনএজাররা অধিক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে, ফলে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে যারা দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করে, তারা হতাশা, উদ্বেগ ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যার উচ্চঝুঁকির মুখোমুখি হয়। চলতি বছর জুন মাসে মার্কিন সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি (রাষ্ট্রের শীর্ষ পদের ডাক্তার) এসব ঝুঁকির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাধ্যমগুলোয় সতর্কতা লেবেল লাগানোর প্রস্তাব করেছিলেন। বিবেক মূর্তির মতো অনেক অভিভাবকেরই মনের ইচ্ছা ছিল এটা। এসব বিষয় বিবেচনা করে ইনস্টাগ্রাম এই নতুন নিয়মের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী?
ইনস্টাগ্রামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই নতুন নিয়মের কারণে মা–বাবারা আরও ভালোভাবে কিশোরদের দেখাশোনা করতে পারবেন। মানসিকভাবে অভিভাকদের শান্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা।’
ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের শিশুরোগ বিভাগের অধ্যাপক মেগান মোরেনো। তিনি বলেন, অ্যাপটির পরিবর্তনগুলো বেশ ভালো। কিশোরেরা মানসিক হতাশা থেকে মুক্তি পাবে।
তবে বিপরীত চিত্রও আছে। অনেকে এই নিয়মের সমালোচনা করেছেন। কারণ, ইনস্টাগ্রামের এই প্রচেষ্টা ভালো হলেও যথেষ্ট নয়। কারণ, কোনো কিশোর যদি নিজের পরিচয় গোপন করে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে অ্যাকাউন্ট খোলে, তাহলে এ নিয়ম তার জন্য কোনো কাজেই আসবে না। তবে ইনস্টাগ্রাম জানিয়েছে, তারা ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাইয়ের নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছে।
ভবিষ্যতে কী হবে?
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় এ নিয়ম চালু হবে। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই নিয়ম কার্যকর হবে। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মালিক মেটা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা তাদের অন্যান্য অ্যাপেও একই নিয়ম চালু করবে।
তবে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাইয়ের নতুন উপায় বের করতে না পারলে এ নিয়ম চালু করে কোনো লাভ হবে না। তাই নতুন নিয়ম চালুর পাশাপাশি এ বিষয় নিয়ে ইনস্টাগ্রামের আরও গবেষণা করা উচিত।
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র