বাস আমাদের সবার পরিচিত একটি যানবাহন। একসঙ্গে অনেক যাত্রী বহনের জন্য সড়কপথে বাস ব্যবহৃত হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বাস যাত্রী পরিবহনের অন্যতম প্রধান বাহন। তবে দেশভেদে বাসের ডিজাইনেও দেখা যায় ভিন্নতা। একক ডেকার ও ডাবল ডেকার বাসের প্রচলন আছে বিশ্বব্যাপী। বাসের ব্যবহার শুরু হয় ১৮২০ সালের দিকে। তখন অবশ্য মটরচালিত বাস ছিল না। বাস টেনে নিয়ে যেত ঘোড়া। তবে ১৮৩০-এর দশক থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে বাস চলা শুরু হয়। মোটরের সাহায্যে বাস চলা শুরু হয় ১৮৯৫ সাল থেকে। ‘বাস’ একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ ‘সবার জন্য’। ১৮২৩ সালে স্ট্যানিস্লাস বড্রি নামে এক ফরাসি ব্যক্তি এই নাম প্রথম ব্যবহার করেন।
বিশ্বে নানা ধরনের বাস আছে। মিনি বাস, মাঝারি ধরনের বাস ও বড় বাস। সাধারণত দূরযাত্রার জন্য বড় বাস ব্যবহৃত হয়। এই বড় বাসগুলো নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস কোনগুলো, সেগুলো কতটা বড়, ভালো ও খারাপ দিক কী কী আছে, সেসব নিয়েই চলো জানা যাক।
১০. সেত্রা বিআর টপ ক্লাস ৫০০ - ৪৬ ফুট
তালিকার ১০ নম্বর বাসটি জার্মানির। তবে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে এ বাসের দেখা মেলে। বাসটি দেখলেই তোমার ভালো লাগবে। বিলাসবহুল সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে এ বাসে। দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য এটি আদর্শ বাস। ৫৯ জন যাত্রী বহন করতে পারে। এটি ১৪.১ মিটার লম্বা। প্রস্থ ২.৫ মিটার এবং উচ্চতা ৩.৮ মিটার। এছাড়া বাসে রয়েছে ৫০০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ২ হাজার ৫০০ নিউটন মিটার টর্ক। এত ভালো গুণ থাকা বাসের কোনো অসুবিধা থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। এ বাসেও নেই। তবে দীর্ঘ ভ্রমণে না বেরোলে এ বাসে চড়ার সুযোগ পাবে না, এই যা অসুবিধা।
৯. ভলভো ৯৮০০ - ৪৯ ফুট
ভলভো ৯৮০০ শুধু দূরপাল্লার যাত্রায় ব্যবহৃত হয়। এতে ২৯ জন যাত্রী বসতে পারে। ফলে দীর্ঘ যাত্রাও হয় আরামের। গাড়িটি সুইডেনের ভলভো কোম্পানি তৈরি করে। একাধিক ড্রাইভার বসার সুযোগ আছে এই বাসে। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির উচ্চতা কমানো যায়। এটি ১৫ মিটার লম্বা। ২.৬ মিটার চওড়া। উচ্চতা নিজের পছন্দ মতো কমানো বাড়ানো যায়। এর ওজন প্রায় ২২ হাজার ৪০৭ কেজি। এই বাসেও ৫০০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ২ হাজার ৫০০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে।
৮. মার্কো পোলো প্যারাডিসো নিউ জি৭ ১৮০০ ডিডি - ৪৯ ফুট
দৈর্ঘ্যে ভলভো গাড়িটির সমান। তবে এর সুবিধা হলো, এটি মাঝারি ও দীর্ঘ যাত্রার জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে মোট ৬৪ জন যাত্রী বসতে পারে। বাসটি তৈরি করে ব্রাজিলের মার্কো পোলো গ্রুপ। এটি একটি ডাবল ডেকার বাস। এই বাসের সিটগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে তুমি বসে বা শুয়ে যেকোনোভাবে যাত্রা করতে পারবে। এর জানালাগুলোও বিশালাকারের। বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য উপযুক্ত। এর দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার, প্রস্থ ২.৬ মিটার এবং উচ্চতা ৪.১ মিটার। এতে রয়েছে ৪৪০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ১ হাজার ৫৫০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে। একসঙ্গে ৬০০ লিটার জ্বালানি ভরা যায় বাসটিতে। এটি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে অত্যাধিক উচ্চতার জন্য বাসটি সব রাস্তায় চলতে পারে না। শুধু হাইওয়েতে চলার সুযোগ রয়েছে এ বাসের।
৭. মার্সিডিজ-বেঞ্জ ও৫৩০ সিটারো সি২ হাইব্রিড - ৬২ ফুট
বাসটিতে একসঙ্গে ৯৩ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারে। এটি শহরের সাধারণ বাস। নির্দিষ্ট রুটে নিয়মিত চলে। তবে যাত্রীদের জন্য বাসটি বেশ আরামদায়ক। মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং ইভোবাস জিএমবিএইচ নির্মাণ করেছে এটি। ১৯.৫ মিটার লম্বা বাসটির প্রস্থ ২.৫৫ মিটার এবং উচ্চতা ৩.১ মিটার। এতে ২২০ কিলোওয়াটারে ইঞ্জিন ও ১ হাজার ২০০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে।
৬. আকিয়া আল্ট্রা আইএফ-২৫ - ৮২ ফুট
বিশাল আকারের এই বাসে একসঙ্গে যাত্রা করতে পারে ২৯০ জন যাত্রী। বর্তমানে তুরস্কে ট্রানজিট বাস হিসেবে চালু রয়েছে এটি। এই বাস তৈরি করেছে তুরস্কের আকিয়া কোম্পানি। বাসটি দেখতে বিশাল হলেও এর সুরক্ষা, চালানো এবং উচ্চ লোড ক্ষমতা রয়েছে। বাসটিতে আছে মোট ৮টি দরজা। দৈর্ঘ্যে ২৫ মিটার এই বাসের প্রস্থ ২.৫ মিটার। উচ্চতা ৩.৪ মিটার। এতে রয়েছে ৪৫৬ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ২ হাজার ২০০ নিউটন মিটার টর্ক। তবে তুরস্কের বাইরে এই বাস দেখা যায় না।
৫. বিওয়াইডি কে-১২এ - ৮৮ ফুট
এ বাসটি দেখলে তোমার কাছে ছোট খাটো একটা ট্রেন মনে হতে পারে। বাসটি চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। যাত্রী বসতে পারে ২৫০ জন। এটিও ট্রানজিট বাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাসটি নির্মাণ করেছে চীনের বিওয়াডি কোম্পানি। ২৭ মিটার লম্বা এই বাসটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৈদ্যুতিক বাস। ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে এটি। তবে ৩০০ কিলোমিটারের বেশি চলতে পারে না। প্রতিবার চার্জ করলে ৩০০ কিলোমিটার চলতে পারে। এর দুটি ড্রাইভ এক্সেলের হর্সপাওয়ার মোট ৮০০।
৪. ভলভো বি৩৪০এম - ৯২ ফুট
এটিও ব্রাজিলে ব্যবহৃত হয় ট্রানজিট বাস হিসেবে। এতে একসঙ্গে ৩০০ যাত্রী চলাচল করতে পারে। বাসটি নির্মাণ করেছে সুইডেনের ভলভো কোম্পানি। এটি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। এর দুটি জ্বালানি ট্যাঙ্ক রয়েছে। ট্যাঙ্কে মোট ৫৪০ লিটার জ্বালানি ধরে। বাসটি দৈর্ঘ্যে ২৮ মিটার এবং প্রস্থে ২.৪ মিটার। বাসটিতে ৩৪০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ১ হাজার ৭০০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে। বাসটিতে এমন একটি সয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে যা জিপিএস ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো শনাক্ত করতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে গতিও কমাতে পারে।
৩. স্ক্যানিয়া এফ৩৬০ এইচএ - ৯২ ফুট
বিশালাকার এই বাসটিতে একসঙ্গে ভ্রমণ করতে পারে ২৮০ জন যাত্রী। এই বাসটিও ব্রাজিলে ট্রানজিট বাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ বাসটি নির্মাণ করেছে সুইডেনের স্ক্যানিয়া কোম্পানি। বাসটির গতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। বাসটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে যাত্রাপথে খরচ কম হয়। ২৮ মিটার দীর্ঘ এই বাসটি ২.৬ মিটার চওড়া। এতে ৩৬০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ১ হাজার ৮৫০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে।
২. মার্কোপোলো ভিয়াল বিআরটি - ৯৩ ফুট
এই বাসে একসঙ্গে যাত্রা করতে পারে ২৩০ জন যাত্রী। বর্তমানে ব্রাজিলে ও গুয়েতেমালায়দ্রুত পরিবহনের জন্য এ বাসটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ব্রাজিলের মার্কো পোলো কম্পানি তৈরি নির্মাণ করেছে। ২৮.৫ মিটার দীর্গ লম্বা এই বাসের প্রস্থ ২.৬ মিটার। এতে ৩৪০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন ও ১ হাজার ৭০০ নিউটন মিটার টর্ক রয়েছে। যাত্রীদের নিরপাত্তার কথা মাথায় রেখে বাসের ভেতরে ও বাইরে সিসি টিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি দক্ষিণ আমেরিকার অত্যন্ত শক্তিশালী ও নির্ভরযোগ্য বাস।
১. অটোট্রাম এক্সট্রা গ্র্যান্ড - ১০০ ফুট
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাস এটি। বিশ্বের বড় বড় শহরে সাধারণ পরিবহন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। এই বাসে একসঙ্গে বসতে পারে ২৫৬ জন যাত্রী। জার্মানির গোপেল বাস কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে। এতে আধুনিক কিছু ডিভাইস রয়েছে যার সাহয্যে প্রতিটি স্টপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস বন্ধ ও চালু হতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ৩০.৭ মিটার, প্রস্থ ২.৫ মিটার ও উচ্চতা ৩.৪ মিটার। এতে ২২০ থেকে ৪৫০ হর্সপাওয়ার ইঞ্জিন রয়েছে। ওজন প্রায় ২৭ টন বা ২৪ হাজার ৪৯৪ কেজি। বাসটি রয়েছে ৫টি দরজা। এটি সর্বপ্রথম চালু হয় ২০১২ সালে জার্মানে। বাসের উন্নত প্রযুক্তির কারণে এটা চালানো বেশ সহজ ও আরামদায়ক। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাসটি চলে ব্যাটারির সাহায্যে। এর ব্যাটারিগুলো প্রতিটি স্টেশনে গিয়ে রিচার্জ করা যায়। তবে ব্যাটারির রেঞ্জ সর্বোচ্চ ২ কিলোমিটার মাত্র। আর বাসটি চালানো যাবে শুধু শহরের হাইওয়ে রাস্তায়।