সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুব কম। এই মুগ্ধতা থেকে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছে মানুষ। চাঁদে মানুষ সফলভাবে গেছে অনেক দিন হলো, প্রায় ৫০ বছর। মানুষ প্রথম চাঁদে পা রাখে ১৯৬৯ সালে। এরপর কয়েকটি মিশনে মানুষ চাঁদে গেছে। এখন পর্যন্ত ১২ জন নভোচারী চাঁদের বুকে পা রেখেছেন। প্রতিবারই নতুন কোনো বিষয় অনুসন্ধান করা হয়েছে। প্রতিবার নভোচারীরা নতুন কোনো ঘটনার জন্ম দিয়েছেন।
এমন এক ঘটনা ঘটেছে ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো–১৬ মিশনে। এই মিশনে অংশ নেন নভোচারী চার্লি ডিউক। তিনি পৃথিবী ছেড়ে মিশনে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে একটি পারিবারিক ছবি নিয়ে যান। ফেরার সময় ছবিটি ফেলে আসেন চাঁদের মাটিতে। বিখ্যাত হয়ে আছে ছবিটি। এটিকে এখন বিবেচনা করা হয় মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হিসেবে।
চার্লি ডিউক চাঁদের পৃষ্ঠে যে ছবিটি ফেলেছিলেন, আজ পাঁচ দশকের বেশি সময় পর ছবিটি ঠিক আগের মতোই আছে। এরপর চাঁদে কয়েকটি মিশন হয়েছে। চাঁদের বুকে মানুষ নেমেছে। কিন্তু ছবিটাকে কেউ স্পর্শ করেনি। তুলেও নিয়ে আসেনি কেউ। মানুষের মহাকাশ–যাত্রায় নিদর্শন হিসেবে ছবিটি এই সম্মান পাচ্ছে।
অ্যাপোলো–১৬ নাসার অ্যাপোলো মিশনের নভোচারীসহ দশম মিশন। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ১৯৭২ সালের ১৬ এপ্রিল মিশনটি যাত্রা শুরু করে। মিশনে নভোচারীরা চাঁদের ডেসকার্টেস হাইল্যান্ডস অঞ্চলে যান। চার দিন পর ২০ এপ্রিল অবতরণ করেন। মিশনে নভোচারী হিসেবে ছিলেন কমান্ডার জন ডব্লিউ ইয়ং, চন্দ্রযানের পাইলট চার্লি এম ডিউক জুনিয়র এবং কমান্ড মডিউল পাইলট থমাস কে ম্যাটিংলি।
ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের অংশ হিসেবে কিছু জিনিস বহনের অনুমতি দেওয়া হয় মহাকাশচারীদের। এর মধ্যে নিজের পারিবারিক ছবিটি বেছে নেন নভোচারী ডিউক। ছবিটিতে রয়েছে তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তান, যা চাঁদে যাওয়া মহাকাশচারী ও পৃথিবীতে থাকা প্রিয়জনদের মধ্যে সংযোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
চাঁদের পৃষ্ঠে পা রাখা সবচেয়ে কনিষ্ঠ নভোচারী ডিউক। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চাঁদে যান তিনি। নিজের স্পেসস্যুটের পকেট থেকে ছবিটি বের করেন ডিউক। চন্দ্র মডিউলের পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের পৃষ্ঠে যত্ন করে রাখেন ছবিটি। ছবির পেছনে ডিউক সুন্দর একটি কথা লিখেছিলেন, ‘এটি পৃথিবী থেকে আসা নভোচারী চার্লি ডিউকের পরিবার। ২০ এপ্রিল ১৯৭২ সালে ডিউক চাঁদে অবতরণ করেন।’ ছবিটি অ্যাপোলো–১৬ মিশনের চাঁদের মিশনের সাফল্যের প্রমাণ। ছবিটি চাঁদে মানুষের উপস্থিতির স্মারক হিসেবে কাজ করে।
চাঁদের বায়ুমণ্ডল নেই। তাই খোলা জায়গায় থাকার পরও আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি ছবিটি। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। রেখে দেওয়ার সময় যেমন ছিল, এখনো তেমন আছে। বছরের পর বছর ধরে চাঁদে এভাবেই থাকবে। পরবর্তী মিশনগুলো এই ছবিকে সম্মান করে ছবিটি যেমন ছিল তেমনই রেখে দিয়েছে। আশা করা যায় সামনের দিনগুলোয় ছবিটি এভাবেই রেখে দেওয়া হবে।