কোনো দেশের সরকার যখন কোনো প্রাকৃতিক পরিবেশ বা অঞ্চলকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে, তখন তাকে জাতীয় উদ্যান বলে। অনেক রকম জাতীয় উদ্যান আছে। যেমন বিনোদনের জন্য কোনো বনাঞ্চল অথবা ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অঞ্চল। এ ছাড়া বন্য প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশে জাতীয় উদ্যান থাকে। জাতীয় উদ্যান করার ধারণাটি প্রথম চালু করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। পৃথিবীতে প্রায় ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে এসব উদ্যান। বাংলাদেশেও প্রায় ২০টি উদ্যান রয়েছে। এর মধ্যে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের প্রধান উদ্যান। চলো বিশ্বের আরও ৫টি উদ্যান সম্পর্কে জানি।
এটি চীনের প্রথম উদ্যান, যা ১৯ শতকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটিই দেশটির প্রথম অরণ্য উদ্যান। এর আয়তন প্রায় ৩৯৮ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯২ সালে এটি ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই পার্কে একটি লিফট আছে, যা ১ হাজার ৭০ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় ওঠে। তবে ২ মিনিটেরও কম সময়ে নিচতলা থেকে একদম ওপরের তলায় মানুষকে পৌঁছে দেয়। একসঙ্গে ৫০ জন মানুষ উঠতে পারে এই লিফটে। এখানে আছে একটি কাচের সেতু, যা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ও সর্বোচ্চ পদচারী সেতু। এটি ১ হাজার ৪১০ ফুট লম্বা ও ৯৮০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
চিলির আইসেন অঞ্চলে অবস্থিত এ উদ্যানটি। বেসরকারি পার্ক হিসেবে এর যাত্রা শুরু হলেও ২০১৮ সালে সরকারকে এটি দান করেন দ্য নর্থ ফেসের প্রতিষ্ঠাতা ডগ টম্পকিন্স ও তাঁর স্ত্রী ক্রিস্টিন ম্যাকডিভিট। তাঁরা চিলিতে মোট ৫টি উদ্যান করার লক্ষ্যে সরকারকে আরও ১০ লাখ একর ব্যক্তিগত জমি দান করেন। এই উদ্যানটি ৩ হাজার ৪৫ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। উদ্যান হওয়ার আগে এখানে ভেড়া চরানো হতো। অনেক ভেড়ার খামার তৈরি হয়েছিল এই এলাকাকে কেন্দ্র করে। চাইলে এই পার্কটি তোমরা নেটফ্লিক্সের ‘আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল পার্কস’ সিরিজে দেখতে পারো। পার্কটির সঙ্গে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বারাক ওবামা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ!
উদ্যানটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত হলেও এর সীমানা কানাডার ওয়াটারটন লেকস ন্যাশনাল পার্কের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এর দুপাশে রয়েছে দুটি পর্বতমালা। আর ৭০০টির বেশি হ্রদ রয়েছে এই পার্কে। ১ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি শত শত প্রজাতির প্রাণী দেখা যায়। এখানে আগে আদিবাসী আমেরিকানরা বাস করত। ধারণা করা হয়, তারা প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এই অঞ্চলে এসেছিল। তবে এই জাতীয় উদ্যানের পর্বতমালা গঠিত হতে শুরু করে প্রায় ১৭ কোটি বছর আগে।
প্রায় ২০ লাখ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক। এটিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় উদ্যান, যা ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে হ্রদ, নদ-নদী ও পর্বতমালা। উত্তর আমেরিকার বেশ কিছু বড় হ্রদ এই উদ্যানে অবস্থিত। স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, মাছ, সরীসৃপসহ শতাধিক প্রজাতির বাস এখানে। ভালুক, বাইসন ও নেকড়ে দেখতে হাজার হাজার পর্যটক এই উদ্যানে ভিড় করেন। স্থানীয় আমেরিকানরা এ অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার বছর ধরে বাস করছেন।
তানজানিয়ার সেরেঙ্গেটি জাতীয় উদ্যান দ্য গ্রেট মাইগ্রেশনের বিশ্বখ্যাত আবাসস্থল। এই উদ্যান থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ ওয়াইল্ড বিস্ট, কয়েক লাখ জেব্রাসহ লাখ লাখ প্রাণী খাবার সংগ্রহ করে। প্রায় ৩ হাজার সিংহ আছে শুধু এই উদ্যানে। আফ্রিকা মহাদেশে এর চেয়ে বেশি সিংহের দেখা তুমি কোথাও পাবে না। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মজা পাবে এই উদ্যানে গেলে। এত বড় জায়গা আর এত এত প্রাণীতে ভরপুর উদ্যান দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞ ও ভ্রমণকারীদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের আফ্রিকায় ঘোরার মতো সেরা স্থান এটি। তবে সত্যি সত্যি এই উদ্যানে গেলে সিংহ থেকে কিন্তু সাবধান!
সূত্র: ট্র্যাভেল চ্যানেল ডটকম, ট্র্যাভেল ডট ইউএস নিউস ও সিএন ট্র্যাভেলার ডটকম