রাতের আকাশে চাঁদ দেখতে ভীষণ সুন্দর। সবকিছু কেমন অন্য রকম করে তোলে চাঁদের আলো। শহরে দালানকোঠার ভিড়ে চাঁদকে নিয়মিত দেখা না গেলেও গ্রামের দিকে খুব সহজেই দেখা যায়। মাসের নির্দিষ্ট দুই–এক দিন বাদ দিলে প্রতিদিনই রাতের আকাশে চাঁদ ওঠে। সময়টা ভিন্ন হয়। কিন্তু ওঠে। তবে প্রতিদিন সূর্যকে যেমন গোল দেখায়, চাঁদকে তেমন দেখায় না। প্রতিদিন এর আকার বদলায়। চাঁদের আকার বদলানোর বিষয়টিকে বলা হয় চন্দ্রদশা। কেন আকার বদলায়, সেটাই আজকে জানি চলো।
কোনো জিনিসকে আমরা সাধারণত দুভাবে দেখি। প্রথমত, জিনিসটা যদি আলো তৈরি করে, আমরা দেখতে পাব। দ্বিতীয়ত, অন্য কোনো উৎস থেকে আলো জিনিসটাতে ধাক্কা খেয়ে যদি আমাদের চোখে পৌঁছায়, তাহলে দেখতে পাব। বুঝতেই পারছো, দেখার বিষয়টা আসলে পুরোটাই আলোর খেলা। সূর্য সরাসরি আলো তৈরি করে। সূর্যকে দেখতে পাই সূর্য আলো তৈরি করে বলে। আর চাঁদকে দেখতে পাই দ্বিতীয় উপায়ে। মানে চাঁদের ওপর সূর্যের আলো পড়ে সেটা প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে আসে। নিজস্ব কোনো আলো নেই চাঁদের।
আমরা আকাশে চাঁদকে আকার বদলাতে দেখি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু খোলা চোখে যা দেখছি, তা বাস্তবে ঘটছে না। বাস্তবে চাঁদের আকার ছোট–বড় হয় না। চাঁদ থেকে প্রতিফলিত আলোর পরিমাণ কমে-বাড়ে। বিষয়টি বুঝতে আরও একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন।
তোমরা জানো, চাঁদ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে এটা একসময় আমাদের একবারে সামনে থাকে। কখনো একেবারে পেছনে চলে যায়। অর্থাৎ পৃথিবীর অন্য পাশে চলে যায়। এই পেছনে চলে যাওয়া আর সামনে চলে আসার মাঝে চাঁদ একটু একটু করে আমাদের দৃষ্টিসীমায় প্রবেশ করে অথবা দৃষ্টিসীমা থেকে দূরে চলে যায়।
এখন শুধু চাঁদ যদি পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট একটা কক্ষপথে প্রতি মাসে একবার ঘুরে আসত, তাহলে কোনো ঝামেলা ছিল না। পৃথিবীর নির্দিষ্ট একটা অঞ্চলের মানুষ মাসের ১৫ দিন পুরো চাঁদটাকেই দেখত। আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেত এই ১৫ দিনে। বাকি ১৫ দিন রাতের আকাশে চাঁদের দেখা মিলত না।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, শুধু চাঁদ একা ঘুরছে না। পৃথিবীও ঘুরছে সূর্যের চারপাশে। প্রতিদিন একবার করে ঘুরছে নিজ অক্ষের ওপর। এর কারণে যে সমস্যা হয়েছে সেটা হলো, পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদের কক্ষপথ পুরোপুরি একই দিকে থাকছে না। সূর্য থেকে আলো যে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের কাছে আসবে, সেই কোণটা ওঠানামা করছে পৃথিবী ও চাঁদের ঘূর্ণনকাল অনুসারে। ফলে চাঁদের ওপর একই পরিমাণ পড়লেও আমাদের অবস্থানের কারণে পুরো চাঁদটাকে দেখতে পাচ্ছি না মাসজুড়ে। প্রায় একই কারণে পৃথিবীর সব জায়গা থেকে একই সময় চাঁদকে এক রকম দেখা যায় না।
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। পৃথিবীকে চারপাশে একবার চক্কর দিতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দশমিক ৩ দিন। কিন্তু পৃথিবী তো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, তাই পৃথিবী থেকে চাঁদের মাস হিসাব করলে সেটা আর ২৭ দশমিক ৩ দিন থাকে না। হয়ে যায় প্রায় সাড়ে ২৯ দিন। জিনিসটা একটু জটিল। যাহোক, এই সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ ৮টা ভিন্ন দশার মধ্যে দিয়ে যায়।
চান্দ্রমাসের শুরুর অংশকে শুক্লপক্ষ বলা হয়। এ সময় চাঁদের গতিপথ ধীরে ধীরে সূর্যের বিপরীতে আসতে থাকে। একটা সময় চাঁদ সূর্যের প্রায় ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে চলে এসে সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে নিজের পুরো অংশ দিয়ে। এ সময়ই আমরা পূর্ণ চাঁদ দেখি আকাশে, অর্থাৎ পূর্ণিমা হয়। এরপর শুরু হয় কৃষ্ণপক্ষ। এ সময় চাঁদ ধীরে ধীরে আবারও সূর্যের দিকে যেতে থাকে। আমরা দেখি দিন দিন চাঁদের আকার কমছে। আসলে রাতের আকাশে চাঁদের প্রতিফলিত আলোর পরিমাণ কমে আসে। ফলে চাঁদটাকেই ছোট হতে দেখা যায়!
সূত্র: ন্যাটজিওকিডস, নাসা