হাতি এক বিস্ময়কর প্রাণী। দেহটা যেমন বড়, স্মৃতিশক্তিও তেমনি। এমনিতে হাতি শান্তশিষ্ট ও নিরীহ প্রাণী। কলাগাছ খাওয়া আর শান্তিতে থাকা ছাড়া বিশেষ কোনো চাহিদা নেই। স্থলজগতের সবচেয়ে বড় এই প্রাণী নানা দিক থেকে বিস্ময়কর। এই লেখায় থাকছে হাতি-সম্পর্কিত ১০টি মজার ফ্যাক্ট। দেখো তো কোনগুলো তোমার জানা আছে।
বিশ্বজুড়ে প্রধানত তিনটি ভিন্ন প্রজাতির হাতি দেখা যায়। আফ্রিকান সাভানা হাতি, আফ্রিকান বন্য হাতি আর এশিয়ান হাতি। বিশাল কুলার মতো কান, শক্তিশালী গজদন্ত আর শুঁড়ের কারণে হাতি বিশেষভাবে পরিচিত।
আগেই বলেছি, হাতি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলচর প্রাণী। কত বড় কল্পনা করতে পার? পূর্ণবয়স্ক আফ্রিকান হাতি সর্বোচ্চ ৩ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ওজন হতে পারে চার থেকে সাড়ে সাত হাজার কেজি পর্যন্ত! অন্যদিকে এশিয়ান হাতিগুলো কিছুটা ছোট হয়। ওজন থাকে তিন থেকে ছয় হাজার কেজির মধ্যে।
এখন থেকে আফ্রিকান হাতি আর এশিয়ান হাতি দেখলেই তুমি আলাদা করতে পারবে। কীভাবে? এ জন্য হাতির কানের দিকে তাকাতে হবে। আফ্রিকান হাতির কান একটু বড়। দেখতে অনেকটা আফ্রিকা মহাদেশের মতোই লাগে। আর এশিয়ান হাতির কান কিসের মতো দেখতে, বলতে পারবে? ঠিক বলেছ, অনেকটাই ভারতের মানচিত্রের মতো হয় এদের কান। মজার বিষয় না?
হাতির শুঁড়ের দিকে তাকিয়ে তুমি অনেক কিছু বলে দিতে পারবে। অঙ্গটা বৃদ্ধি কখনো থামে না। তাই, বিশাল আকৃতির শুঁড় মানে বোঝায় হাতিটি বেশ বয়স্ক। আফ্রিকান প্রজাতির নারী-পুরুষ উভয় ধরনের হাতিরই শুঁড় বাড়তে থাকে। কিন্তু এশিয়ান হাতির মধ্যে শুধু পুরুষের শুঁড় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। নারী হাতির শুঁড় তেমন বাড়ে না। তাই, ছোট শুঁড়ের এশিয়ান হাতি দেখলে সেটাকে নারী হাতি হিসেবে ধরে নিতে পারো।
আগে আফ্রিকান বন্য হাতিকে আফ্রিকান হাতির উপপ্রজাতি হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, এরা আসলে পুরোপুরি ভিন্ন দুটি প্রজাতি। আফ্রিকার কঙ্গো উপকূলের ক্রান্তীয় বনাঞ্চলে এরা বাস করে। এদের কান অপেক্ষাকৃত গোল, শুঁড়গুলো অন্য প্রজাতির তুলনায় বেশি সোজা থাকে।
অতিকায় শরীরের জন্য তো খাবারও চাই প্রচুর, তাই না? পূর্ণবয়স্ক হাতি সারা দিনের প্রায় ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ধরে খাবার খায়। ঘাস, লতাপাতা, নরম গাছ আর ফল এদের প্রধান খাবার। লম্বা শুঁড় বাগিয়ে যেমন খাবারের ঘ্রাণ নিতে পারে, তেমনি টুপ করে ধরে খাবার পুরে দিতে পারে মুখে।
খাওয়ার পর প্রাণী হিসেবে যে বিড়ম্বনা সবাইকে সইতে হয়, সেটা মলত্যাগ। প্রচুর পরিমাণে খাবার খাওয়ার কারণে প্রতি সপ্তাহে একটি হাতি প্রায় ১ টন মলত্যাগ করে। এটা মাটিতে সার হিসেবে কাজ করে। আবার হজম না হওয়া বীজ গাছের বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হাতিরা কিন্তু পানির জন্য জলাশয়ও তৈরি করতে পারে।
কেনিয়ার মাউন্ট এলগন ন্যাশনাল পার্কে একটি হাতির দলকে শুঁড় দিয়ে মাটির নিচের গুহা থেকে লবণ তুলতে দেখা গেছে। শুধু তা-ই না, বেশ শখ করে লবণে টুকরা ভেঙেও খেয়েছে হাতিগুলো। শরীরে লবণ ও খনিজের চাহিদা মেটাতেই এ কাজ করে হাতি।
হাতিগুলো নিজেদের জন্য একধরনের সানস্ক্রিন লোশন তৈরি করে। নদী বা জলাশয়ে গোসলের পর কাদা আর বালু দিয়ে ঢেকে ফেলে শরীর! এতে গরম থেকে যেমন বাঁচা যায়, তেমনি রোদে পোড়াও কমে যায় অনেকটা।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি, বর্তমানে হাতিগুলো বেশ বিপদের মধ্যে আছে। মানুষ শুধু হাতির দাঁত সংগ্রহ করার জন্য বিশাল এসব প্রাণীকে নির্বিচারে মেরে ফেলে। তা ছাড়া শিকারের কারণেও অতীতে বহু হাতি মারা পড়েছে মানুষের হাতে। আফ্রিকান হাতির তুলনায় এশিয়ান হাতির সংখ্যা বেশ কম। এশিয়ান হাতি বর্তমানে শিকারের হাত থেকে অনেকটা রেহাই পেলেও আছে আরও অনেক বিড়ম্বনা। মানুষ চিড়িয়াখানায় নিয়ে রাখে, বিনোদনের জন্য হাতির পিঠে ওঠে। আমাদের দেশে তো চাঁদা তোলা, গাছের গুঁড়ি টানায় হাতি ব্যবহার করে। এসব কাজে রাজকীয় বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবীর ওপর তোমার বা আমার যেমন অধিকার আছে, তেমনি সব প্রাণীরই আছে। সবাই মিলেই এই পৃথিবী।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিডস, ব্রিটানিকা