আমার বয়স যখন মাত্র পাঁচ, ছয় কিংবা আট বছর, আমি তখন বেশির ভাগ সময় পার করতাম পুরো বাসাটা চক্কর দিয়ে। দৌড়াতে গিয়ে মাঝে মাঝেই নিচে ফেলে দিতাম নানা জিনিস। কখনো টিভির রিমোট, কখনো ভাইয়ার খেলনা গাড়ি, কখনো আবার আম্মুর প্রিয় কাচের গ্লাস। এদের সঙ্গে আমিও পড়ে যেতাম নিয়মিত। বসার ঘরের সোফার সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে কতবার যে ব্যথা পেয়েছি, তার হিসাব নেই। তবে আমার সবচেয়ে পছন্দের কাজটা ছিল যেকোনো কিছু বেয়ে ওপরে উঠে পড়া। উচ্চতায় বেশ ছোট ছিলাম বলে টিংটিং করে উঠে পড়তাম ওয়ার্ডরোব বেয়ে। আরেকটু কম বয়সে নানির কিংবা দাদির মাথায়ও চড়ে বসতাম। বাদ পড়ত না বারান্দার গ্রিলটাও। বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠে দেখতাম রাস্তার হালচাল। তখন আমার ওপরে ওঠার দৌড় বারান্দার গ্রিল পর্যন্ত থাকলেও ৮ বছর বয়সী চার্লি এই বয়সেই উঠে পড়েছে আট এভারেস্টের সমান উচ্চতায়! কী, নড়েচড়ে বসলে? দাঁড়াও ব্যাপারটা খুলে বলি।
যুক্তরাজ্যের পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের বাসিন্দা চার্লির বয়স তখন মাত্র ৫। তার জন্মদিনে পরিবারসহ ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করল বাবা পল। সব পরিকল্পনা শেষে বাবা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘চার্লি, জন্মদিনে তুমি কি বিশেষ কিছু করতে চাও?’ ৫ বছরের ছোট্ট চার্লি জবাব দিল, ‘বাবা আমি পাহাড়ে উঠতে চাই!’ গল্পের শুরুটা এখানেই। বাবার সঙ্গে সেবারই প্রথম পাহাড়ে চড়ল চার্লি। মাথায় ঢুকে গেল পাহাড়ে ওঠার পোকা।
এরপরের তিন বছর ছুটির দিনগুলোতে বাবার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রায় ২০০ পাহাড়ে চড়েছে চার্লি। যার মধ্যে রয়েছে বেন নেভিস, স্কোফেল পাইক ও স্নোডোনিয়ার মতো যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গগুলো। প্রায় সব কটি অভিযানের উচ্চতার রেকর্ড রেখেছে চার্লির বাবা পল। এ বছর মার্চ মাসে এসে সব যোগ করে দেখা গেল মাত্র ৮ বছর বয়সে চার্লি পাহাড়ের বুকে পাড়ি দিয়ে ফেলেছে ৭০,৭৯২ মিটার পথ। চার্লি যতটা পথ বেয়ে পাহাড়ে উঠেছে, তা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতার (৮,৮৪৯ মিটার) চেয়ে ৮ গুণ বেশি! অর্থাৎ এভারেস্টের বুকে এই পরিমাণ পথ পাড়ি দিলে আটবার এভারেস্ট জয় করা যাবে।
ছেলের এই কাণ্ডে বাবা পল যারপরনাই খুশি। বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘চার্লি পাহাড় কিংবা যেকোনো কিছুতেই চড়তে পারবে। সেটার উচ্চতা হোক ২০০ ফুট কিংবা ২০০০ ফুট! একদম পাহাড়ি ছাগলের মতো। এই বয়সে ও যেটা করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য! ভীষণ গর্ব হচ্ছে।’ তবে তিনি মনে করেন, চার্লির রেকর্ডের সংখ্যাটা আরও বেশি। কিছু পাহাড়ে বাপ-ব্যাটা মিলে একাধিকবার চড়েছে তারা। সেসব একবারের বেশি হিসাব করা হয়নি। তা ছাড়া সব পাহাড়ের কথা তাদের মনেও নেই।
চার্লি কেবল পাহাড়ে চড়তেই ভালোবাসে না, পছন্দ করে পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় প্রাণীদের। পাহাড়ের প্রাণীগুলোকে লোকালয় কিংবা সমতলে খুব একটা দেখা যায় না। তাই নতুন নতুন সব প্রাণী ও তাদের জীবনযাপন তাকে মুগ্ধ করে।
আরেকটু বড় হলেই এভারেস্টে চড়তে চায় চার্লি। নিশ্চয়ই খুব দ্রুত এভারেস্টের চূড়ায় দেখা যাবে তাকে। কে জানে, সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্ট বিজয়ীর রেকর্ডটাও নিজের করে নেয় কিনা চার্লি!