এভারেস্ট বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতচূড়া। ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে এই চূড়ায় পৌঁছান পর্বতারোহীরা। কেন তাঁরা এই পর্বত জয় করতে চান? কেন জীবনের ঝুঁকি নেন? একজন এভারেস্টজয়ীকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে একটা উত্তর নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। এটা এমন এক অর্জন, যার কোনো তুলনা হয় না। তাই এভারেস্টে চড়ার স্বপ্ন তুমিও দেখতে পারো। প্রস্তুতি শুরু করলে নিশ্চয়ই একদিন এই চূড়া জয় করতে পারবে। তবে যাত্রা শুরুর আগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমাকে জানতেই হবে।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখলে অবশ্যই সামিট করতে পারবে। প্রতিবছর শত শত লোক এভারেস্টে ওঠার চেষ্টা করে। এদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ চূড়ায় পৌঁছায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা খারাপ আবহাওয়া। বেজক্যাম্পে গিয়েই অনেক পর্বতারোহী আটকে যান। আবহাওয়া তাঁদের ফিরে আসতে বাধ্য করে।
হ্যাঁ। অবশ্যই তোমাকে শারীরিকভাবে ফিট হতে হবে। ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতায় সামিট করার পথে পড়বে শিলা, তুষার আর বরফ। বয়স কোনো ব্যাপার না। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সী এভারেস্টজয়ী জর্ডান রোমেরো (যুক্তরাষ্ট্র) ২২ মে ২০১০ সালে এভারেস্ট জয় করে। ১৩ বছর ১০ মাস ১০ দিন বয়সে। সবচেয়ে বয়সী এভারেস্টজয়ী ইউইচিরো মিউরা (জাপান)। তিনি যখন এভারেস্টে চড়েছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৮০ বছর ২২৩ দিন।
এ প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া অসম্ভব। এভারেস্টের বেজক্যাম্প থেকে চার দিন ওপরে আর চার দিন নিচে নামতে সময় হাতে নিয়ে রাখা যেতে পারে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্ট জয় করেছেন ইতালীয় পর্বতারোহী হ্যান্স কামারল্যান্ডার। ১৯৯৬ সালে মাত্র ১৬ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে চূড়ায় উঠেছিলেন।
তুমি সঙ্গে যা নিয়ে যাবে, তার সবই ফেরত আনতে হবে। তাই শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসই নিতে পারবে। এভারেস্টে আনুমানিক ৫০ টন আবর্জনা আছে। পর্বতারোহীদের ফেলে আসা জিনিসপত্র। এর বেশির ভাগই আবার বেজক্যাম্পে জমা আছে।
একদম চূড়ায় তাপমাত্রা গড়ে মাইনাস ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। কিন্তু মাঝেমধ্যে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। এই তাপমাত্রায় তোমার ত্বক হিমায়িত হয়ে যেতে পারে। এই তাপমাত্রায় তুষারপাত হয়। হাত-পায়ের আঙুল প্রথমে আক্রান্ত হয়। আঙুল ঠান্ডায় জমে যাওয়াকে বলে ফ্রস্টবাইট। এটি এড়াতে পর্যাপ্ত গরম মোজা নিয়ে যেতেই হবে।
তুষার সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে। এতে চোখ ঝলসে দিতে পারে। ফলে সাময়িক বা পুরোপুরি অন্ধত্ব বরণ করার ঝুঁকিও থাকে। তাই ভালো মানের সান গগলস তোমাকে নিতেই হবে। এই গগলস ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি আটকে দেবে।
৩ হাজার ৬৬০ মিটার ওপরে অক্সিজেনের মাত্রা ৪০ শতাংশ কমে যায়। এই উচ্চতায় বেশির ভাগ পর্বতারোহী শ্বাস নিতে গিয়ে হাঁপাতে থাকেন। গুরুতর অবস্থা এড়াতে তোমাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে হবে। সিলিন্ডার থেকে অক্সিজেন ব্যবহার করে শ্বাস নিতে হবে।
হ্যাঁ, এভারেস্ট জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত এভারেস্টে চড়তে গিয়ে ৩৩০ জন প্রাণ দিয়েছে। বাংলাদেশি পর্বতারোহী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সজল খালেদ ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করে নেমে আসার পথে সাউথ কোল নামক জায়গায় মৃত্যুবরণ করেন।
এটি ৮ হাজার মিটার উচ্চতায় একটি এলাকা। যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ ভূমির তুলনায় মাত্র অর্ধেক। এত অল্প অক্সিজেনে মস্তিষ্ক কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দেয়। সামান্য পরিশ্রম করতে লাগে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি।
সত্যি বলতে চূড়ায় কিছু নেই। পায়ে চেপে সর্বোচ্চ চূড়া জয় করা এমন এক চ্যালেঞ্জ, অল্প কিছু মানুষ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছে। এভারেস্টজয়ীদের দলে নিজের নাম লেখানো একধরনের সাফল্য। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জায়গা থেকে তাকালে তুমি তিব্বত, ভারত ও নেপালের হিমালয়ের ওপর দিয়ে অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবে। ১৬০ কিলোমিটার বা এরও বেশি দূরে দেখতে পারবে। এমনকি গোল পৃথিবীর পৃষ্ঠের বক্রতা বা বাঁকা হয়ে যাওয়া সীমানাও দেখতে পারবে।