ধরো, ফুটবল খেলতে গিয়ে তুমি আবিষ্কার করে ফেললে নতুন কোনো শট। তোমার কাছে দারুণ আবিষ্কার মনে হলেও সম্ভাবনা আছে যে আরও আগেই হয়তো এই শট আবিষ্কার করে ফেলেছেন কেউ। আকাশের তারা দেখতে গিয়ে নতুন কোনো তারা যদি দেখতে পাও, সে ক্ষেত্রেও সম্ভাবনা থাকে যে তারাটা অনেক আগেই কোনো পর্যবেক্ষক দেখে নথিবদ্ধ করেছেন। নতুন কোনো শট বা নতুন কোনো তারা দেখতে পেলে ধরে নেওয়া যায়, এর কোনো নাম আছে। আগেই এটিকে কেউ আবিষ্কার করে বসে আছেন। আগেই আবিষ্কার করা কোনো কিছু যদি কেউ নতুন করে আবিষ্কার করে, তখন তাকে বলে নতুন করে জুতা আবিষ্কার করা।
ধরা যাক, রেডিও আবিষ্কারের গল্প। রেডিও কে আবিষ্কার করেছেন? দুনিয়ার সবাই জানে, রেডিও প্রথম আবিষ্কার করেন মার্কনি। কারণ, রেডিও আবিষ্কারের পেটেন্ট গুগলিয়েলমো মার্কনির নামে করা। ১৮৯৫ সালে এক কিলোমিটার দূরের একটি উৎসে মোর্স কোড বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন এই বিজ্ঞানী। ১৯০১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রথম ট্রান্স–আটলান্টিক সংকেত পাঠান তিনি। কিন্তু আমরা মাধ্যমিকের বইয়ে পড়ি, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু রেডিও আবিষ্কার করেন। তবে তিনি পেটেন্ট করেননি। তার আগেই মার্কনি নিজের নামে পেটেন্ট করে ফেলেন। এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব নিয়ে লড়াই ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, জুতা আবিষ্কার করেছেন কে? আসলে এককভাবে জুতা আবিষ্কারের কৃতিত্ব কাউকে দেওয়া যায় না। কারণ, জুতার প্রাচীনতম রূপগুলো হাজার হাজার বছর পুরোনো। কে প্রথম জুতার ধারণা দিয়েছেন, কেউ সে কথা লিখে রাখতে পারেননি। তখন ছবি আঁকার চল থাকলেও লেখালেখি শুরু হয়নি। যেমন চপ্পল সাধারণত প্রাচীন মিসরীয় পেইন্টিং আর ম্যুরালে পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রাচীন রোমে সৈন্যদের পদমর্যাদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের জুতা বরাদ্দ দেওয়া হতো। তখন ক্রীতদাসেরা সাধারণত খালি পায়ে থাকতেন। মর্যাদার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো জুতা। কিন্তু কেউ এর আবিষ্কারকের সম্মান পাননি। কারণ, কেউ এর খোঁজ জানেন না।
মানুষ জুতা পরতে শুরু করেছিল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে। ২০০৫ সালে এই মত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী এরিক ট্রিঙ্কাউস। তিনি তুষারযুগের মানুষদের দৈহিক গড়ন ও সে যুগের নিদর্শনের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ করেন যে সে সময় মানুষ জুতা পরত। তবে প্রথম জুতা পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট রক গুহায়। সেইজব্রাশ গাছের বাকলের তৈরি এই জুতা খ্রিষ্টপূর্ব সাত থেকে আট হাজার বছর আগের।
এসব জুতা শুধু প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা হয়েছিল। এগুলোতে সহজেই পচন ধরতে পারে এবং ছিঁড়ে যেতে পারে। এরপর জুতা তৈরির উপকরণ বদলে গেছে। তখন জুতা তৈরি হতো চামড়া, কাঠ, ক্যানভাস ইত্যাদি ব্যবহার করে। এর মধ্যে চামড়ার তৈরি জুতার প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় আর্মেনিয়ায়, যেগুলো ব্যবহার করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এই জুতা নতুন করে আবিষ্কার করা হয় গত শতাব্দীতে। জুতা নতুন করে আবিষ্কার করার মানে, পুরাতন জুতা নতুন করে খুঁজে পাওয়া গেল। এটিও জুতা আবিষ্কার। তবে আবিষ্কারের ধরন আলাদা।