শুনে মনে হবে, অক্টোপাস বুঝি সমুদ্র জগতের বক্সার মুহাম্মদ আলী। না হলে ঘুষি মারবে কেন? অক্টোপাস মাছকে ঘুষি মারছে, জীববিজ্ঞানীদের হাতে এমন ভিডিও এসেছে। প্রমাণ পাওয়া গেছে, শুধু মানুষ ঘুষি মারে না, মানুষের মতো ঘুষি মারতে পারে অক্টোপাসও।
অক্টোপাস নিঃসঙ্গ প্রাণী। এরা একা একা চলাফেরা করে। মাঝেমধ্যেই এরা মলাস্কা ও ক্রাস্টেশিয়ানদের মতো শিকারকে ধরার জন্য মাছের ঝাঁকের সঙ্গে দল বেঁধে চলে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের একটি দল ইসরায়েলের উপকূলে লোহিত সাগরে অনুসন্ধান করেছে। অক্টোপাস ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ১৩টি শিকারি দলের ভিডিও ধারণ করেছেন গবেষকেরা। এই মাছের দলে আছে গোল্ডফিশ, গোল্ড স্যাডল গোটফিশ, ব্ল্যাকটিপ গ্রুপার ইত্যাদি। এসব দলের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া গেছে নতুন আচরণ।
গবেষকেরা দেখতে পেয়েছেন, এই শিকারি দলে বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। যেমন, গোটফিশ স্কাউট হিসেবে কাজ করে। এরা দলটি কোথায় টহল দেবে তার সিদ্ধান্ত নেয়। অক্টোপাসের আক্রমণ করার সময় হলে আক্রমণে নেতৃত্ব দেয় গোটফিশ।
এই যৌথ পদ্ধতির আক্রমণের ফলে দলের প্রাণীরা একা শিকার করার চেয়ে বেশি শিকার ধরতে পারে। তবে এদের মধ্যে সুখী পরিবারের মতো বন্ধন নেই। কখনো কখনো দেখা গেছে, যখন অক্টোপাস কোনো মাছ ধরেছে, অন্য কোনো প্রাণী সেই মাছ ধরায় বাধা হয়েছে বা কেড়ে নিতে গেছে, তখন অক্টোপাস ঘুষি মেরেছে!
গবেষকেরা বলছেন, ঘুষি দিয়ে অক্টোপাস কোনো শিকারি মাছকে দলের বাইরে ঠেলে দিলে শিকারি মাছের শিকার ধরার সম্ভাবনা কমে যায়। কখনো এমন মাছকে দল থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়। মাছগুলো একটি অপরটিকে ধাক্কাও মারে। তবে কোনো মাছ অক্টোপাসকে কখনো ধাক্কা দেয়নি।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ড. এডুয়ার্ডো সাম্পাইও বিবিসি সায়েন্স ফোকাসকে বলেছেন, দেখা যাচ্ছে অক্টোপাস এবং শিকারি দলের জন্য ঝামেলা করা মাছের দিকে অক্টোপাস ঘুষি ছুড়ে দেয়। বিশেষ করে ব্ল্যাকটিপ প্রজাতির মাছের দিকে।
তাছাড়া ঘুষি মারার ব্যাপারটি দলের নড়াচড়ার সঙ্গেও জড়িত। যদি অক্টোপাসের চারপাশে খুব বেশি মাছের আনাগোনা হয় এবং আবাসস্থলের মধ্য দিয়ে না সরে, তবে অক্টোপাস নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাছকে ঘুষি মারে।
যখন শিকারি দলটি নড়াচড়া করে, তখন অক্টোপাস মাছকে ঘুষি মারে না। কারণ, দলের সব সদস্যের জন্য এ সময় শিকারের সুযোগ তৈরি হয়।
গবেষকেরা এখন শিকারি দলের প্রতিটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। এদের মধ্যে সম্পর্কগুলো ভালোভাবে জানাই এখন গবেষকদের লক্ষ্য।