পদ্মা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী। একসময় এই নদীর আরেক নাম ছিল সর্বনাশা পদ্মা। এর নাম শোনেনি, বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পেতে রীতিমতো গবেষণা করতে হবে। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদীর নাম জিজ্ঞাসা করলেও অনেকে উত্তর দিতে পারবে—নীল নদ। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট নদী? চট করে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। তবে এই কঠিন প্রশ্নের উত্তরটা যদি তুমি জেনে থাকো, তাহলে বুঝতে হবে তুমি অনেক জানো। না জানলেও ক্ষতি নেই। কারণ, এখন আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট নদী নিয়েই আলোচনা করব।
পৃথিবীতে আরও অনেক ছোট নদী রয়েছে। যেমন ইন্দোনেশিয়ার তামবোরাসি নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ মিটার। আবার নরওয়ের কোভাসেলভা নদীর দৈর্ঘ্যও ওই ২০ মিটার।
নদীটি যেমন ছোট, নামটিও তেমন। রো। এটাই নদীর নাম। হয়তো নামটির সঙ্গে তুমি পরিচিত নও। কিন্তু মিজৌরি নদীর নাম শুনেছ? উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী। এই নদীর ঠিক পাশেই অবস্থিত আমাদের আজকের আলোচনার ছোট্ট নদী রো। নদীটি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম মন্টানার রকি পর্বতমালার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া মিজৌরি নদীর সঙ্গে মিশেছে। মিসৌরি নদীটি আবার মিশেছে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম নদী মিসিসিপির সঙ্গে। নদীটির দৈর্ঘ্য কত জানো? মাত্র ৬১ মিটার। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট।
১৯৮৯ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট নদী হিসেবে নাম লেখায় রো নদী। এর আগে সবচেয়ে ছোট নদীর খেতাবটি ছিল ডি নদীর। এর দৈর্ঘ্য ১৩৪ মিটার। তবে এ দুই নদীর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে ছোট, তা নিয়ে একসময় অনেক বিতর্ক হয়েছে। মাপে একেক সময় একেক আকার পাওয়া যেত নদী দুটির। স্কুলশিক্ষার্থীরা রো নদীকে সবচেয়ে ছোট নদীর স্বীকৃতি দিতে আন্দোলনও করেছে। এরপর এই বিতর্ক বন্ধ করতে ২০০৬ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সবচেয়ে ছোট নদীর কৃতিত্ব দেওয়া বন্ধ করে দেয়। অবশ্য এখনো রো নদীকেই বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বের সবচেয়ে ছোট নদী মনে করে।
তবে শিক্ষামূলক ভূগোলবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের মতে, পৃথিবীতে আরও অনেক ছোট নদী রয়েছে। যেমন ইন্দোনেশিয়ার তামবোরাসি নদীর দৈর্ঘ্য মাত্র ২০ মিটার। আবার নরওয়ের কোভাসেলভা নদীর দৈর্ঘ্যও ওই ২০ মিটার।
কিন্তু একটা নদী কি সত্যিই মাত্র ২০ মিটারের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে? সে জন্য নদীর সংজ্ঞা জানতে হবে। এই সংজ্ঞাও আবার কম নয়। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘যে জলস্রোত কোনো পর্বত, হ্রদ, প্রস্রবণ ইত্যাদি জলাধার থেকে উৎপন্ন এবং বিভিন্ন জনপদের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোনো জলাশয়ে পতিত হয়, তাকে নদী বলে।’ তার মানে নদী হতে হলে তাকে প্রবাহিত হতে হবে। পানি স্থির হলে তাকে নদী বলা যাবে না। এখন ভেবে দেখো তো, মাত্র ২০ মিটারের মধ্যে কতটা পানি প্রবাহিত হতে পারে? আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নদীর পানি কোনো বড় নদী বা সমুদ্রে গিয়ে মিশতে হবে। ১৯৫২ সালে আর্থার নেওয়েল স্ট্রাহলার নামে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানের এক অধ্যাপক এ রকম সংজ্ঞা প্রস্তাব করেছিলেন। সে হিসেবে রো নদী কিন্তু এই নিয়ম মানে। কারণ, নদীটি মিজৌরি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট্ট এই নদীর পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ। খাওয়ার উপযোগী। এই নদীতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় স্যামন মাছ। ইউটিউবে সার্চ করে তুমি নদীটি দেখতে পারো। নদীর ঢেউও স্পষ্ট দেখতে পাবে।
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ও বিবিসি