গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আছে কোন পাখি? মামা বলল, রেড বিলড কুইলিয়া। লাল ঠোঁটের এই পাখি আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের কিছু এলাকাজুড়ে বাস করে। বন্য হিসাবে ধরলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আছে এই কুইলিয়া পাখি। সংখ্যা কত? দেড় বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি।
সুন্দর ছোট্ট পাখি কুইলিয়া। আকারে চড়ুইয়ের মতো। প্রজননের সময় পুরুষ কুইলিয়াদের মুখে কালো রঙের মুখোশ দেখা যায়। মাথা আর বুকে খানিকটা হলুদ ছোপ আছে। পোষা পাখি হিসেবে এমন সুন্দর পাখি কল্পনা করা কঠিন না। কিছু মানুষ কুইলিয়াকে পোষে। বনজ পরিবেশে লাখো পাখি থাকে এক ঝাঁকে। একবার যে ফসলের খেতে নামে, সব ফসল সাবাড় করে ফেলে। আকাশে দল বেঁধে উড়লে মনে হয় তীক্ষ্ণ স্বরে ডাকাডাকি করছে কালো মেঘ।
এবার আসি মুরগির কথায়। এই লেখা মুরগির সংখ্যা নিয়ে। মুরগিকে ঠিক পাখি বলে মেনে নিতে কষ্ট হয়। কারও কাছে মাংস ছাড়া মুরগিকে আর কিছু মনে হয় না। খাবার খাইয়ে মুরগিকে মোটাসোটা বানানো হয় খেয়ে ফেলার জন্যই। কিছু মুরগি ডিম পাড়ে। এগুলো আবার একটু কম মোটা হয়। যেমন মুরগিই হোক, দেখলে মনে হয় খাওয়ার কথা। পাখির গোত্র আর স্বভাবের কারণে মানতেই হয়, মুরগিও পাখি।
সবচেয়ে বেশি পাখির জায়গাটা আসলে মুরগির। লালন–পালন করা হয়, অর্থাৎ বন্য পরিবেশে থাকে না এমন পাখিকে ধরলে পৃথিবীতে যে প্রজাতির পাখি আছে সবচেয়ে বেশি, সেটি মুরগি।
বিশ্বব্যাপী কত মুরগি আছে? হিসাব করা সহজ নয়। এক, দুই, তিন করে গণনা করা অসম্ভব। পত্রিকায় খুঁজলে একেক জায়গায় একেকটি সংখ্যা পাওয়া যাবে। কারও সংখ্যাই খুব ছোট না। বেশ বড়। সংখ্যার মধ্যে পার্থক্যও অনেক বেশি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাদের পরিসংখ্যান নির্ভরযোগ্য। তারা ১৯৬১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কোন দেশে কত মুরগি উত্পাদিত হয়েছে, তার হিসাব দেখিয়েছে।
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৬ বিলিয়ন মুরগি উত্পাদিত হয়েছিল। সংখ্যাটি কত বড় কল্পনা করতে পারো? ১ বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি হিসেবে কল্পনা করে দেখো।
মুরগির আগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ছিল প্যাসেঞ্জার বা যাত্রী কবুতর। অনুমান করা হয়, এদের সংখ্যা সর্বাধিক পাঁচ বিলিয়নে পৌঁছেছিল। খুব দ্রুত উড়তে পারত এরা। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার। তবে শিকারির হাতে পড়ে উত্তর আমেরিকার এই পাখি হারিয়ে গেছে। নেটিভ আমেরিকান মানুষ যাত্রী কবুতর শিকার করত। ইউরোপীয়রা আমেরিকায় আসার পর এই শিকার সীমা ছাড়িয়ে যায়। কবুতরের মাংস ছিল সস্তা খাবার। কম দামের কারণে বিক্রি অনেক বেশি ছিল। অনেক বছর ধরে অনেক বেশি শিকার করার কারণে একসময় বিলুপ্ত হয়ে যায় এই পাখি। ৫০০ কোটি থেকে একেবারে শূন্য। কল্পনা করা যায়?
চীনে ২০১৬ সালে ছিল ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মুরগি। যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন। ব্রাজিলে প্রায় ৬ বিলিয়ন। তারপরে আছে ইন্দোনেশিয়া আর ভারত। প্রতি দেশে প্রায় আড়াই বিলিয়ন করে।
মাত্র ৫৫ বছর আগে বিশ্বব্যাপী মুরগি ছিল সাড়ে ৭ বিলিয়ন। মানুষের সংখ্যা এখন ৮ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। পাল্লা দিয়ে মানুষের খাদ্যতালিকায় জনপ্রিয় হয়েছে মুরগি। ১৯৬১ সালে বিশ্বব্যাপী মানুষ ছিল ৩ বিলিয়নের বেশি। ২০১৬ সালে মানুষের জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন। এর মানে ১৯৬১ সালে জনপ্রতি মুরগি ছিল ০.০০২৪টি বা প্রায় ৪০০ জনের জন্য ১টি মুরগি। ২০১৬ সালে জনপ্রতি ৮ দশমিক ৮২টি মুরগি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে মুরগির উৎপাদন ৩৬০ শতাংশ। মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৬৬ শতাংশ।
এখন প্রশ্ন, মানুষের কি আসলেই এত মুরগি প্রয়োজন? মুরগি পালনের জন্য, সঠিক ভাষায় ফ্যাক্টরি ফার্মিংয়ের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ চিরতরে বদলে যাচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে। তবু মুরগির উত্পাদন বেড়েই চলছে। এর যেন শেষ নেই। তবে আসল কথা বলা হয়নি। পৃথিবীতে এখন কত মুরগি আছে? উত্তর হলো বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৭৪ বিলিয়ন মুরগি উত্পাদন করা হয়। ২০৩২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা হবে প্রায় ৮৫ বিলিয়ন। ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, উত্পাদন বাড়বে প্রায় ১৫ শতাংশ। আর উত্পাদন কমতে শুরু করবে ২০৭৫ সাল থেকে।