হুইসেলব্লোয়ার কারা, কী করেন

উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জফাইল ছবি: এএফপি

এপ্রিল ২০১০। উইকিলিকস নামে একটি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান ভয়ংকর এক ভিডিও ফাঁস করে দিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, হেলিকপ্টার থেকে মার্কিন সেনারা নিরপরাধ ইরাকিদের গুলি করে হত্যা করছেন। ১৮ জন সাধারণ মানুষকে খুন হতে দেখা যায় সেই ভিডিওতে। তাঁরা কেউই সামরিক বাহিনীর সদস্য ছিলেন না। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাংবাদিক নামির নুর-আলদিন ও তাঁর সহকারী সায়ীদ ইশমাঘও ছিলেন। সেটা ২০০৭ সালের কথা। দিনটি ছিল ১২ জুলাই।

এর আগেও গুয়ানতানামো বে কারাগারে ইরাকিদের নির্যাতন নিয়ে ভিডিও ও বিভিন্ন দলিল ফাঁস করেছিল উইকিলিকস। তবে ২০১০ সালের এপ্রিলের সেই ভিডিও ফাঁস ছিল বড় ঘটনা। ওই বছরের জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে সংগঠনটি আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা নিয়ে প্রায় ৯০ হাজার এবং ইরাক যুদ্ধ নিয়ে প্রায় ৪ লাখ দলিল ফাঁস করে ইন্টারনেটে। এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ হয়ে ওঠেন মার্কিন আইন সংস্থাগুলোর চক্ষুশূল।

এ সময় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন দুই নারী। অ্যাসাঞ্জ তখন ইকুয়েডরের কাছে অ্যাসাইলাম, মানে আশ্রয় চান। ইংল্যান্ডে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাস তাঁকে আশ্রয় দেয়। তখন আর এ অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি; বরং অভিযোগ সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে ইকুয়েডর আশ্রয় প্রত্যাহার করে নিলে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ করে গুপ্তচরবৃত্তির। কম্পিউটারে অনধিকার প্রবেশের দায়েও মামলা করা হয়। তবে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। লন্ডনের হিজ ম্যাজেস্টিস প্রিজন বেলমার্শে তিনি কারাদণ্ড ভোগ করেন দীর্ঘদিন। অবশেষে গত ২৬ জুন কারামুক্ত হন তিনি।

আরও পড়ুন

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একজন হুইসেলব্লোয়ার। গণতন্ত্র, রাজনীতি নামের বড় বড় শব্দের ওপারে যাঁরা মুখোশ পরে থাকেন, আশ্রয় নেন জটিল আইনি মারপ্যাঁচের আড়ালে, নষ্ট করেন সাধারণ মানুষের অধিকার—তাঁদের মুখোশ খুলে দেওয়ার মাধ্যমে এই প্রজন্মের কাছে হুইসেলব্লোয়ার শব্দটিকে তিনিই একরকম পরিচিত করে তোলেন।

এ লেখায় আমরা শুনব, হুইসেলব্লোয়ার কী, তাঁরা আসলে কী করেন, এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন

হুইসেলব্লোয়ার কারা, কী করেন

হুইসেলব্লোয়ার। বাংলা করলে দাঁড়ায়, তথ্য ফাঁসকারী। তবে বোঝানো হয় অন্যায় বা অবিচারের তথ্য ফাঁসকারীদের। মার্কিন সিভিক অ্যাকটিভিস্ট র‌্যালফ নাদের ১৯৭০–এর দশকে শব্দটার প্রচলন করেন। ‘ইনফরমার’ বা ‘স্নিচ’—এ রকম কিছু শব্দের মাধ্যমে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তথ্য ফাঁসকারীদের বোঝানো হতো। হয়তো কোনো প্রতিষ্ঠানের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলেন কেউ, কিংবা জানিয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রতিষ্ঠানের কাউকে। এ রকম মানুষদের বলা হয় ইনফরমার। এসব থেকে আলাদা করতেই এই নতুন শব্দ।

সাধারণত হুইসেলব্লোয়াররা কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা দেশের গোপন অন্যায় বা অবিচারের তথ্য ফাঁস করে দেন। বিশেষ করে কোনো ধরনের নির্যাতন, প্রতারণা, দুর্নীতি, গণমানুষের স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফাঁস করা হয় এসব তথ্য। সেটা প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো যেমন হতে পারে, তেমনি সংবাদমাধ্যম, নিজস্ব ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেওয়াও হতে পারে। এখন অবশ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়টিই বোঝানো হয় প্রচলিত অর্থে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশেও হুইসেলব্লোয়ার শব্দটির জনপ্রিয়তা উইকিলিকসের কল্যাণে। অন্তত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তা-ই। এ নিয়ে পত্রিকায় কলাম প্রকাশিত হয়েছে, বিভিন্ন নথি ও দলিলের অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, লেখা হয়েছে বইও। উইকিলিকস ও জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কাজ গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে, তবে আরও হুইসেলব্লোয়ারের আছেন।

আরও পড়ুন