প্রতি বছর আগস্ট মাসে পৃথিবী থেকে পারসেইড উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। এই বছরও ব্যতিক্রম নয়। নাসা সবাইকে এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য শহরের আলোক দূষণ থেকে দূরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের মতে, শহরের বাইরে কোনো গ্রামে কিংবা কোনো খোলা জায়গা থেকে এই উল্কাবৃষ্টি স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
প্রতি বছর সাধারণত পারসেইড উল্কাবৃষ্টি ১৪ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। তবে এই বছরের উল্কাবৃষ্টি ১১ আগস্ট রবিবার রাত থেকে ১২ আগস্ট সোমবার ভোর পর্যন্ত রাতের অন্ধকার আকাশে দৃশ্যমান হবে। যদিও এরই মধ্যে কিছু উল্কাপাত দেখা যাচ্ছে। তবুও রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এই নৈসর্গিক উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য। আমেরিকান মিটিওর সোসাইটির জানিয়েছে, আকাশে উল্কাপাতের এই ঝরনা ১২ আগস্ট কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম (উটিসি) ৪:০০টায় পৃথিবী অতিক্রম করবে। যা বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১২ আগস্ট রাত ১০ টার কাছাকাছি। নাসা এই রাতটির জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
আমরা জানি, মহাকাশে অনেক ধূমকেতু ও গ্রহাণু আছে। উল্কা হলো মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা ছোট ছোট গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদির টুকরা। যখন এই টুকরাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে এটি উত্তপ্ত হয়ে জ্বলে উঠে। এই জ্বলন্ত অবস্থায় আমরা একে উল্কাপাত হিসেবে দেখি। আর যখন একসঙ্গে অনেকগুলো উল্কাপাত দেখা যায় তখন এই ঘটনাকেই উল্কাবৃষ্টি বলে। উল্কাবৃষ্টির নামকরণ সাধারণত সেই নক্ষত্রমণ্ডলের নামানুসারে করা হয়, যেখান থেকে উল্কাগুলো জ্বলতে দেখা যায়। পারসেইড উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য আকাশের উত্তর-পূর্ব দিকে বেশি নজর রাখতে হবে। কারণ, পারসেইড উল্কাগুলো এই দিক থেকে আসবে। পার্সিয়াস নক্ষত্রমণ্ডল এই দিকেই অবস্থিত।
নাসা আরো জানিয়েছে, এই বছর পারসেইড উল্কাবৃষ্টির সময় চাঁদ ৫৩ শতাংশ উজ্জ্বল থাকবে। মানে চাঁদ পূর্ণিমার সময়ের মতো এতো উজ্জ্বল হবে না। তবে চাঁদের এই আলোয় উল্কাবৃষ্টি দেখতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। চাঁদ অস্ত যাওয়ার পর থেকে ভোর পর্যন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে অনেক উল্কা দেখতে পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষ যেন এর সাক্ষী হতে পারে এজন্য ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রকল্প নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম লাইভ স্ট্রিম করবে। এই ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলের লিংক এখানে যুক্ত করে হলো। এই লাইভ স্ট্রিমিংগুলোতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা মহাকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেন, নতুন আবিষ্কারের কথা বলেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এই বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন হলেন জিয়ানলুকা মাসি। তিনি একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি এই লাইভ স্ট্রিমিং পরিচালনা করবেন।
উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য কোনো টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই তুমি উল্কাবৃষ্টি দেখতে পারবে। তবে ধৈর্য্য রাখতে হবে। কারণ, উল্কা কখনো একসঙ্গে দেখা যায় না। একটু একটু করে দেখা যায়।
সূত্র: ফোর্বস, স্পেস ডটকম, নাসা