মানুষ উড়তে পারলে ডানা কত বড় থাকত
তোমার কি কখনো পাখির মতো উড়তে ইচ্ছে করেছে? মনে হয়েছে, ডানা মেলে উড়ে বেড়াই আকাশে? কিংবা স্পাইডারম্যান বা সুপান ম্যানের মতো উড়তে ইচ্ছে হয়নি? সত্যি বলতে, আমাদের ডানা থাকলে হয়তো আরও মজার সব অ্যাডভেঞ্চারে যেতে পারতাম! দৈনন্দিন জীবনে আরও কত সুবিধা পাওয়া যেত! জ্যামের মধ্যে বাসে বসে থাকতে হতো না, স্কুলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না রিকশার। অল্প সময়ের মধ্যে ডানা মেলে উড়ে চলে যাওয়া যেত নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছ, আমাদের এমন ডানা থাকলে তা কত বড় হতো?
পাখিদের কথাই ভাবো। তাদের শরীর হালকা আর ডানাগুলো খুব শক্তিশালী। ডানাগুলো এমনভাবে তৈরি যে ওরা বাতাসে নিজেদের ভারসাম্য ঠিক রেখে উড়তে পারে। কিন্তু আমাদের শরীর পাখিদের মতো হালকা না। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওজন গড়ে ৫০-৭০ কেজি। তাই এত ওজন নিয়ে আমাদের উড়তে হলে অনেক বড় ডানা লাগত। কিন্তু কত বড় ডানা লাগত?
বিজ্ঞানীরা এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সত্যিই যদি মানুষের ডানা থাকত, তাহলে তা অন্তত ২০ ফুট লম্বা হতো। একটা মোটামুটি আকারের গাছের সমান লম্বা হতো আমাদের ডানা। কিন্তু ২০ ফুট মানে কত বড়? বাংলাদেশের পুরুষ মানুষের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। আর নারীদের ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। এবার চিন্তা করো, সাড়ে ৫ ফুটের একটা মানুষের ২০ ফুট লম্বা ডানা থাকলে কেমন হতো? অবশ্য সব মানুষের জন্য কিন্তু এই আকারের ডানা লাগত না। ছোট পাখির যেমন ছোট ডানা থাকে তেমনি ছোট মানুষের ডানা হতো ছোট। আবার বড় ও ভারী মানুষের ডানা হতো আরও বড়।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক টাই হেড্রিক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো মানুষের ওজন হয় ৭০ কেজি এবং উচ্চতা ৫ ফুট, তাহলে তাঁর ডানা দুটি প্রায় ২০ ফুট লম্বা হতো। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রবার্ট নুডসের তৈরি একটা সমীকরণ ব্যবহার করে এ কথা বলেছেন হেড্রিক। নুডসের তৈরি এই সমীকরণ ২০০৭ সালে অব অ্যাভিয়ান বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অনেক জটিল কথা বললাম, আবার প্রসঙ্গে ফিরি। ভাবতে পারো, পাখির বুঝি এমন বড় ডানা আছে! আসলে পাখির এত বড় ডানার দরকার হয় না, কারণ পাখির শরীর ওদের আকারের তুলনায় অনেক হালকা। কিন্তু মানুষের দেহের যে ওজন, তাতে ২০ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের ডানা দিয়ে আকাশে ওড়া সম্ভব হতো না।
এখন প্রশ্ন হলো, এত বড় ডানা নিয়ে আমরা কীভাবে চলতাম? রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হয়তো ডানা ঘষে চলতে হতো। আবার ঢাকা শহরে যেমন বাসে বাসে ধাক্কা লাগে, তখন হয়তো সবার ডানায় ডানায় ধাক্কা লাগত। আমরা খবরে শুনতাম অমুক জায়গায় অমুক ও তমুক ডানায় ডানায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে। দারুণ মজার একটা ঝামেলাই হতো, তাই না?
তবে শুধু এই ঝামেলাই শেষ নয়। ওড়ার জন্য আমাদের শরীরের অনেক শক্তি খরচ হতো। পাখিরা যখন ওড়ে, তখন তাদের হৃদয় (হার্ট) খুব দ্রুত কাজ করে। মানুষের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি কঠিন হয়ে যেত, কারণ আমাদের হৃদয় এত দ্রুত চলার মতো তৈরি হয়নি।
এছাড়া, পাখিদের হাড় খুব হালকা হয়, যেন ওরা সহজে উড়তে পারে। কিন্তু মানুষের হাড় তুলনামূলক ভারী। আর পাখিরা ওড়ার জন্য প্রচুর খাবার খায়, আমাদেরও হয়তো আরও বেশি বেশি খাবার খেতে হতো। অবশ্য তাতে ওজন আরও বাড়ত।
আমাদের পেশি এখনকার তুলনায় আরও শক্তিশালী হতে হতো। পাখির ওড়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির ১৬-১৮ শতাংশ আসে পেশি থেকে, বুক থেকে আসে ৩০ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়। উড়তে হলে বাতাসের গতি, শক্তি আর ভারসাম্যও ঠিক রাখতে হতো। হয়তো প্রথমবার উড়তে গিয়ে কেউ কেউ স্পাইডারম্যানের প্রথমবার ওড়ার মতো গাছে বা বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খেত।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে সত্যিই ওড়ার ব্যবস্থা থাকলে আমরা হয়তো উড়ে উড়ে পৃথিবীটাকে আরও সুন্দরভাবে দেখতে পেতাম। নদী, পাহাড়-পর্বত ও শহরগুলো দেখা যেত এক ঝলকে। বন্ধুর বাড়ি যাওয়া যেত এক নিমেষে। বাবা-মা বকা দিলে উড়ে গিয়ে বসতে পারতে বড় কোনো গাছের মগডালে।
বাস্তবে পাখির মতো ওড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেটা ও অতিরিক্ত ভরের কারণে। কিন্তু কল্পনায় উড়তে তো কেউ বাঁধা দেয়নি। কল্পনায় তুমি উড়ে যেতে পার এক শহর থেকে আরেক শহরে। তবে সাবধান! ডানা জোড়া আবার হারিয়ে বসো না যেন!
সূত্র: লাইভ সায়েন্স