ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো - ৬
কলিং বেল বেজে উঠল
এশিয়া সিট্রোর জনপ্রিয় কিশোর সিরিজ ‘জোয়ি অ্যান্ড সাসাফ্রাস’। জোয়ির বিড়ালের নাম সাসাফ্রাস। নিজের বিড়ালকে নিয়ে জোয়ি বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড করে। সেসব কর্মকাণ্ডই উঠে এসেছে সিরিজের প্রথম বই ‘ড্রাগন অ্যান্ড মার্শমেলো’তে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করছেন কাজী আকাশ।
পরদিন মায়ের অফিসের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম, যদি কলিং বেল বেজে ওঠে। কিন্তু কিছুই ঘটল না। পরদিনও একই অবস্থা। কলিং বেলটা শব্দই করছে না। এভাবে চারটা দিন চলে গেল। পঞ্চম দিন সোফায় বসে পড়ছিলাম, এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠল। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালাম। সাসাফ্রাসকে কোল থেকে নামিয়ে দিলাম।
সাসাফ্রাস কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসে রইল। ওই অবস্থায় চিৎকার করে উঠল। তারপর চার পায়ে মাটিতে ল্যান্ড করল। বিরক্তিভরে আমার দিকে তাকাচ্ছে সাসাফ্রাস। কিন্তু তারপরেই ওর কানটা ঘুরে গেল। বেলের শব্দ শুনেছে। শস্যাগারের দিকে দৌড় শুরু করলাম আমরা।
শস্যাগারের পেছনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। চারদিক নিরিবিলি। আমার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি ছাড়া আশপাশে আর কোনো শব্দ হচ্ছে না। সাসাফ্রাসের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম আমি। ‘কিটি, রেডি?’
ও মিউ মিউ করে দরজায় থাবা দিল। এটাকে হ্যাঁ হিসেবেই ধরে নিলাম আমি।
ধীরে ধীরে দরজাটা খুললাম। একটা ছোট, সবুজ ও খসখসে প্রাণী শক্ত বলের মতো কুঁকড়ে আছে। পাশেই ঝোপের মধ্যে খসখস শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখলাম একটা চকচকে নীল লেজ জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। হয়তো এ প্রাণীটাকে সাহায্য করতে এসেছিল!
‘হ্যালো?’ ডাকলাম আমি। কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না। রহস্যময় নীল প্রাণীটাও আর ফিরে এল না।
পায়ের কাছে একটা ছোট্ট প্রাণী কুঁকড়ে আছে। ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে প্রাণীটার মসৃণ সবুজ পিঠ স্পর্শ করলাম। আস্তে আস্তে একটা ছোট্ট মাথা বেরিয়ে এল। ‘ওহ! তুমি খুব কিউট।’ ফিসফিস করে বললাম আমি।
দুটি বিষণ্ন চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
‘চিন্তা কোরো না ছোট্ট বন্ধু। আমরা তোমাকে সুস্থ করে তুলব।’ প্রাণীটাকে কোলে তুলে নিলাম আমি। শস্যাগারে যাওয়ার পথে সাসাফ্রাস উদ্বিগ্নভাবে আমার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে লাগল।
একটা কাঠের টেবিলে ওটাকে শুইয়ে দিলাম। প্রাণীটার উদ্দেশে বললাম, ‘ছোট হিসেবে তুমি একটু ভারী।’ টেবিলের অন্য প্রান্তে উঠে বসল সাসাফ্রাস। ধীরে ধীরে ছোট্ট প্রাণীটার দুটি ডানা ও একটা দীর্ঘ লেজ বেরিয়ে এল। ওটা একটা ড্রাগন! বাচ্চা ড্রাগন!
‘ওয়াও! আমাদের শস্যাগারে একটা বাচ্চা ড্রাগন আছে!’ আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম।
একটু ধাতস্থ হয়ে প্রাণীটাকে উদ্দেশ করে বললাম, ‘ছোট্ট বন্ধু! কী সমস্যা হয়েছে তোমার? শরীরে তো কোনো কাটার দাগ দেখছি না। আর সাহায্যের প্রয়োজন না হলে তো তুমি এই শস্যাগারে থাকতে না।’
বেশ দুর্বল মনে হচ্ছিল ড্রাগনের বাচ্চাটাকে। এদিক–ওদিক তাকিয়ে টেবিলের ওপর মাথাটা নুইয়ে দিল।
সাসাফ্রাস লাফিয়ে টেবিলের ওপর উঠতেই বাচ্চা ড্রাগনটা মাথা জাগাল। সামান্য একটু কাশি দিল। সঙ্গে সঙ্গে একঝলক আগুন বেরিয়ে এল। সাসাফ্রাস যেন বাতাসে লাফিয়ে উঠল। তারপর আগের মতো চার পায়ে ল্যান্ড করল মাটিতে।
হায় হায়! ড্রাগনটা আবার কাশি দেওয়ার আগেই কোনো ব্যবস্থা করতে হবে। ‘হ্যাঁ, বুদ্ধি পেয়েছি। আমাকে এমন একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আগুন না লাগে।’ শস্যাগারের চারপাশে তাকালাম আমি। দেখা যাক…কোনো জায়গা পাওয়া যায় কি না! কাঠ, ফেব্রিক ও খড়ে সহজেই আগুন ধরে। ‘পেয়েছি! এই স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে রাখতে হবে ড্রাগনের বাচ্চাটাকে। যাতে কাশি দিলেও আগুন না লাগে।’
বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দ্রুত মেঝের এক কোনায় গেলাম। সাসাফ্রাস দূর থেকে আমাদের দেখছিল। আমার কিটি বুঝতে পারছিল না, ড্রাগনের বাচ্চাটার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে কি না!