বাজাউরা কীভাবে দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকে
তোমরা নিশ্চয়ই জেমস ক্যামেরুনের ‘আভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ দেখেছ। না দেখলেও ক্ষতি নেই, পরে দেখে নিও। সিনেমায় আমরা দেখতে পাই, জ্যাক তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ওমাটিকায়া ছেড়ে প্যান্ডোরার পূর্ব সমুদ্রতীরে অবস্থিত মেটকায়িনা রিফ গোত্রে আশ্রয় নেয়। সেখানে তারা সমুদ্রের জীবন ও রিফ গোত্রের রীতি-নীতি শেখে। রিফ গোত্রের মানুষজন কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই সমুদ্রের গভীর তলদেশে যেতে পারে, দীর্ঘ সময় পানিতে অবস্থান করতে পারে এবং পানির প্রাণীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। সমুদ্রের তলদেশেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকেই মনে করেন, বাস্তবে এ ধরনের ঘটনা নেই। কিন্তু, বাস্তবেও এমন মানুষ আছে।
পৃথিবী স্থল ও জলভাগ দিয়ে বিস্তৃত। মোট আয়তন প্রায় ৫১ কোটি ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের আয়তন প্রায় ১৫ কোটি বর্গকিলোমিটার, যা মোট আয়তনের ২৯ ভাগ। বাকি ৩৬ কোটি ১০ লাখ বর্গকিলোমিটার, যা মোট আয়তনের ৭১ ভাগ, পানি দিয়ে আবৃত। পানির এই বিশাল অঞ্চলে রয়েছে নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর, মহাসাগর, উপসাগর ও হ্রদ। এখানে রয়েছে হাজার হাজার দ্বীপপুঞ্জ। শুধু ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার দ্বীপ। এছাড়াও জাপান, জামাইকা, কিউবা ও হাইতিতেও ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী কতজন মানুষ দ্বীপে বাস করে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে ধারণা করা হয়, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি, অর্থাৎ ৮ কোটির বেশি মানুষ দ্বীপে বসবাস করে। এসব মানুষের জীবনযাত্রা, আচার-ধর্ম ও সংস্কৃতি একেক রকম। তবে এই দ্বীপের মানুষদের মধ্যে কিছু সম্প্রদায়ের শারীরিক গঠন বা জীবনযাত্রার ধরন অন্যদের থেকে আলাদা। এদের মধ্যে অন্যতম হলো বাজাউ সম্প্রদায়।
বাজাউ জনগোষ্ঠীর মূল উৎস অস্ট্রোনেশিয়ান বলে ধারণা করা হয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী, যারা প্রধানত ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করে। বাজাউরা দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্য ভূমিতে না থেকে সমুদ্রে বসবাস করত। তারা মুক্ত ও স্বাধীন জীবনযাপন পছন্দ করত। তাদের ‘সমুদ্র যাযাবর’ (Sea Nomads) বলা হয়। কারণ তারা ঐতিহ্যগতভাবে সমুদ্রে বসবাস করে এবং সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের ‘সামুদ্রিক জিপসি’ (Sea Gypsies) নামেও ডাকা হয়, কারণ তাদের জীবনধারা যাযাবর ও সামুদ্রিক।
বাজাউ সম্প্রদায়ের মানুষ অন্য দ্বীপবাসীদের মতো মাছ ধরা, ডাইভিং এবং সামুদ্রিক পণ্য সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তারা চমৎকার ফ্রি-ডাইভিং দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই তারা ৭০ মিটার (২৩০ ফুট) গভীরতায় ডুব দিতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য এটি সম্ভব নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাজাউদের দেহে বিশেষ কিছু জিনগত অভিযোজন রয়েছে। যেমন পিডিই১০এ জিন, যা তাদের প্লীহা বড় রাখে। বাজাউদের প্লীহা সাধারণ মানুষের চেয়ে বড় হওয়ায় এটি বেশি অক্সিজেন-সমৃদ্ধ লোহিত রক্তকণিকা সঞ্চয় করে। ফলে তারা পানির নিচে দীর্ঘ সময় নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারে। বাজাউদের দেহ স্বল্প অক্সিজেনের (হাইপোক্সিয়া) পরিবেশ সহ্য করতে পারে।