পৃথিবীর একমাত্র উড়ন্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। পৃথিবীতে বাদুড় আছে ১ হাজার ১০০ প্রজাতির। আকারে ছোটখাটো স্তন্যপায়ী প্রাণী হলেও প্রকৃতিতে বাদুড়ের ভূমিকা বা অবদান অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এক-চতুর্থাংশ! এই প্রাণী নিয়ে বিস্ময়কর ১০টি তথ্য তুমি জানো কি না মিলিয়ে দেখো।
ঘণ্টায় ৬০ মাইল বা এর বেশি গতিতে উড়তে পারে বাদুড়। ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির গবেষকেরা দেখেছেন, মেক্সিকান ফ্রি-টেইলড বাদুড় প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মাইল পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। তাই এটিই পৃথিবীর দ্রুততম স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর বাদুড় বেঁচে থাকে ৩০ বছরের বেশি।
সব বাদুড় কিন্তু নিশাচর নয়, মানে শুধু রাতে জেগে থাকে না। তবে যে বাদুড় রাতে খাবারের খোঁজে বের হয়, এরা প্রতি সেকেন্ডে উচ্চমাত্রার শব্দতরঙ্গ তৈরি করতে পারে। এই তরঙ্গ শিকারের গায়ে লেগে প্রতিধ্বনি হিসেবে বাদুড়ের কাছে ফিরে আসে। এভাবে বাদুড় পোকামাকড় শনাক্তে শিকার করে। একে বলে ইকোলোকেশন।
মশা নিয়ে আমরা তো সব সময় বিরক্ত থাকি। মশা মারার জন্য কত আয়োজন করতে হয়। তবে প্রাকৃতিকভাবে মশা মারার মেশিন হিসেবে কাজ করে বাদুড়। প্রতি রাতে এই প্রাণী নিজের শরীরের ওজনের সমপরিমাণ পোকামাকড় সাবাড় করতে পারে। এভাবে পোকার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে বাদুড়।
বাদুড় বিলুপ্ত হলে কলা, অ্যাভোকাডো ও আমের মতো ফসলগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ৩০০টির বেশি প্রজাতির ফল পরাগায়নের জন্য বাদুড়ের ওপর নির্ভর করে। বাদাম, ডুমুর ও চকলেটের প্রধান উপাদান কোকোর বীজ ছড়াতে সাহায্য করে বাদুড়।
শীতের দেশে কিছু প্রজাতির বাদুড় হাইবারনেট করে বা শীতনিদ্রায় যায়। শীতের দিনে চারপাশ বরফে ছেয়ে গেলে পোকামাকড় তেমন থাকে না। তখন খাবারের অভাব দেখা যায়। তখন গুহার অন্ধকারে বাদুড় শীতঘুম দেয়। বাদুড় হিমশীতল তাপমাত্রায়ও বেঁচে থাকতে পারে।
বিছার হুল ভয়ংকর বিষে ভরা। এই হুলের আঘাতে প্যালিড বাদুড়ের কিছু হয় না। এমনকি উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বিষাক্ত বিছা অ্যারিজোনা বার্ক বিছাও এই বাদুড়ের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে প্যালিড বাদুড়ের খাবারের তালিকার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে বিছা।
ব্যাট গুয়ানো বা বাদুড়ের বিষ্ঠা বিক্রি করা একসময় ছিল বড় ধরনের ব্যবসা। এখন টেক্সাসের বৃহত্তম ব্যবসা খনিজ তেল। এই তেলের আগে টেক্সাসের বৃহত্তম রপ্তানি ব্যবসা ছিল বাদুড়ের বিষ্ঠা। উত্তর আমেরিকার অস্টিনে মেক্সিকান ফ্রি-টেইলড বাদুড়ের সবচেয়ে বড় শহুরে দল দেখা যায়। কংগ্রেস অ্যাভিনিউ ব্রিজের নিচে প্রায় ১৫ লাখ বাদুড় বসবাস করে। এই ব্রিজের নিচে জমা হয় প্রচুর বাদুড়ের বিষ্ঠা।
ফ্লাইং ফক্স বাদুড়ের ডানার দৈর্ঘ্য ৬ ফুট পর্যন্ত হয়। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে বাস করে এই বাদুড়। দেখতে শিয়ালের মতো হওয়ায় এর নাম ফ্লাইং ফক্স। অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট বাদুড় হলো থাইল্যান্ডের বাম্বল বি বাদুড়। এটি একটি থাম্বনেইলের চেয়ে ছোট এবং এর ওজন এক পয়সার চেয়েও কম।
বছরে একটি সন্তান জন্ম দেওয়া মা বাদুড় হাজার হাজার বা লাখ লাখ বাদুড়ের মধ্য থেকে নিজের ছানাকে খুঁজে বের করতে পারে। শুধু কণ্ঠ শুনে ও ঘ্রাণ শুঁকে নিজের ছানাকে খুঁজে পায় এরা। বছরে মাত্র একটি ছানা জন্ম নেওয়ায় বাদুড়ের প্রজাতির বিলুপ্তির ঝুঁকি অনেক বেশি।
প্রতিবছর মার্চ থেকে অক্টোবরে লাখ লাখ মেক্সিকান ফ্রি-টেইলড বাদুড় ব্র্যাকেন গুহায় বাস করে। এই প্রজাতি রক্ষার জন্য ১ হাজার ৫২১ একর জায়গা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে।