বিশ্বের ডাইনোসরের বৃহত্তম কঙ্কাল নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি

বিশ্বের ডাইনোসরের বৃহত্তম কঙ্কাল অ্যাপেক্সছবি: সিএনএন

কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে অবাধে বিচরণ করত প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী ডাইনোসর। এদের অস্তিত্বের প্রমাণ হিসেবে আজও পাওয়া যায় এদের ফসিল বা কঙ্কাল। যা বিজ্ঞানী ও সংগ্রাহকদের কাছে অতি মূল্যবান। সম্প্রতি বিশ্বের বৃহত্তম ডাইনোসরের একটি কঙ্কাল নিলামে উঠেছে। নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী নিলাম ঘর সাদাবি’জ এই কঙ্কালটি নিলামে তোলে। এটি বিক্রি হয় ৪৪৬ লাখ ডলারে। ২০২০ সালে স্ট্যান নামের একটি টাইরানোসরাস রেক্সের জীবাশ্ম ৩১৮ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল। এটিই এর আগ পর্যন্ত কোনো ডাইনোসরের জীবাশ্মের জন্য সর্বোচ্চ দাম ছিল।

এই কঙ্কালটি ছিল স্টেগোসরাস ডাইনোসরের। এই কঙ্কালটির ডাকনাম ‘অ্যাপেক্স’। এরা তৃণভোজী প্রজাতির ডাইনোসর ছিল। ১১ ফুট উচ্চতা এবং নাক থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় ২৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এই প্রাণী। যা এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় পাওয়া স্টেগোসরাসের ফসিল। এই স্টেগোসরাসের ফসিল প্রায় ৩১৯টি হাড়ের অংশ দিয়ে গঠিত। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই কঙ্কালটি একটি বয়স্ক স্টেগোসরাসের। যার দেহের গঠন খুব শক্তিশালী ছিল। এর পিঠে থাকা দুই সারি হাড়ের প্লেট এবং লেজের কাছে থাকা চারটি বড় কাঁটা এই প্রজাতিকে অন্য ডাইনোসর থেকে আলাদা করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই তৃণভোজী ডাইনোসরটি ১৫ কোটি বছর আগে বা জুরাসিক যুগে উত্তর আমেরিকায় বসবাস করত।

১১ ফুট উচ্চতা এবং নাক থেকে লেজ পর্যন্ত প্রায় ২৭ ফুট দৈর্ঘ্যের এই ডাইনোসরের ফসিল রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে
ছবি: সিএনএন

২০২২ সালে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যের মফ্যাটে অঞ্চলে একজন জীবাশ্ম–বিশেষজ্ঞ নিজের জমিতে খননকাজ করার সময় এই বিরল স্টেগোসরাসের কঙ্কাল আবিষ্কার করেন। শক্ত বেলেপাথরের মধ্যে সংরক্ষিত এই কঙ্কালটি প্রায় সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। সাদাবি’জ এর এই নিলামে এই কঙ্কালটি একজন অজ্ঞাত ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা এই ক্রেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অ্যাপেক্স আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেছিল, তাই আমেরিকাতেই থাকবে।’ নিলামঘরের মতে, প্রাথমিক অনুমানের চেয়ে প্রায় ১১ গুণ বেশি দামে এই জীবাশ্মটি বিক্রি হয়েছে। আর মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে এই নিলাম শেষ হয়ে যায়। এই জীবাশ্মের জন্য সাতজন ক্রেতা বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

যদিও অ্যাপেক্সের জীবাশ্মের বাণিজ্যিক মূল্য অনেক বেশি, তবুও কিছু জীবাশ্মবিদ মনে করেন, এই জীবাশ্মটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার পরিবর্তে কোনো যাদুঘরে রাখা উচিত। যেন বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন এবং সাধারণ মানুষও এটি দেখতে পায়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্ম বিজ্ঞানী স্টিভ ব্রুসেট একটি গণমাধ্যমকে তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘অ্যাপেক্স একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। অন্যান্য বিখ্যাত ডাইনোসর যেমন টি-রেক্স বা ট্রাইসেরাটপসের তুলনায় স্টেগোসরাসের সম্পূর্ণ কঙ্কাল খুব কম পাওয়া যায়। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম যখন কোনো যাদুঘরে না গিয়ে ব্যক্তিগত সংগ্রহে চলে যায়, তখন খুব খারাপ লাগে।’

সূত্র: সিএনএন, বিবিসি

আরও পড়ুন