খোঁজ মিলেছে সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক সরীসৃপের

‘ইথিওসর’-এর ফসিলের সঙ্গে গবেষক দল

সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে এসেছে অতীতের রহস্য! বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক সরীসৃপের জীবাশ্ম। এই আশ্চর্যজনক প্রাণীটি ছিল ৮২ ফুট লম্বা। যা নীল তিমির চেয়েও বড় ছিল! ধারণা করা হচ্ছে ২০২ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসর যুগে এই প্রাণীটি সমুদ্রে বিচরণ করত।

এই অভূতপূর্ব জীবাশ্মটি যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডের সমুদ্রসৈকতে পাওয়া গেছে। শখের জীবাশ্ম সংগ্রাহক পল দে লা স্যালে ২০১৬ সালে প্রথম একটি বিশাল চোয়ালের হাড় খুঁজে পান। পরে বিস্তারিত গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, এগুলো একটি বিশাল সামুদ্রিক সরীসৃপের।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাচীন সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। তাঁরা জানান, এই দৈত্যাকার সরীসৃপ ছিল সাগরের শীর্ষ শিকারী। সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

আরও পড়ুন

নতুন আবিষ্কার করা এই প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে ‘ইথিওসর’। এরা দেখতে অনেকটা মাছের আকৃতির। লম্বা চার পা ছিল এদের। সাঁতার কাটতে পারত। ২০১৬ সালে বিশাল এই দানবের প্রথম জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়। এরপর ধীরে ধীরে আরও জীবাশ্ম উন্মোচিত হতে থাকে, যা বিজ্ঞানীদের প্রাণীটি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দেয়। চার বছর পর ২০২০ সালে একই সৈকতে এক বাবা ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে একইরকম আরেকটি চোয়ালের হাড় আবিষ্কার করেন।

তিব্বতেও একই ধরনের ইথিওসরের একটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করা হয়েছিল। এই প্রাণীটিকে হিমালয়সরাস টিবেটেনসিস নাম দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালে এক সাময়িকীতে এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। হিমালয়সরাস টিবেটেনসিস ৪৯ ফুট বা ১৫ মিটার দীর্ঘ ছিল।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের পলিএন্টোলজিস্ট ড. ডিন লোম্যাক্স লিখেছেন, ‘একটির চোয়ালের আকার এক মিটারের বেশি লম্বা, অন্য দুইটি দুই মিটার। যা দেখে আমরা ধারণা করছি, প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটি প্রায় ২৫ মিটার দীর্ঘ ছিল। যা একটি নীল তিমির সমান।’

তিন বছর ধরে পলের গ্যারেজে থাকার পর জীবাশ্মটি অবশেষে বিশ্লেষণের জন্য ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের একটি দলের হাতে যায়। জীবাশ্মটি এখন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। শীঘ্রই এটি ব্রিস্টল জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারিতে সাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হবে।

পল এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন, ‘আমি যখন প্রথম জীবাশ্মটি খুঁজে পেয়েছিলাম, তখন আমি এটিকে নিজের সংগ্রহের জন্যেই শুধু রেখেছিলাম। এটিকে নিয়ে অনেক দিন ধরে ঘাঁটাঘাঁটিও করেছি। এখন এটি বিশেষজ্ঞদের হাতে তুলে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত।’

তিব্বতেও একই ধরনের ইথিওসরের একটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করা হয়েছিল। এই প্রাণীটিকে হিমালয়সরাস টিবেটেনসিস নাম দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালে এক সাময়িকীতে এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়। হিমালয়সরাস টিবেটেনসিস ৪৯ ফুট বা ১৫ মিটার দীর্ঘ ছিল। যা এটিকে ইংল্যান্ডে আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলোর সঙ্গে একই সময়ের বলে বিবেচিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন

দুটি আবিষ্কারের মধ্যে সময়কালের মিলের কারণে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ইংল্যান্ডে আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলো হিমালয়সরাস টিবেটেনসিসের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। তবে এও সম্ভব যে এরা একটি ভিন্ন প্রজাতির প্রতিনিধিত্ব করে। আরও সঠিক তথ্য জানতে বিজ্ঞানীরা জীবাশ্মগুলো আরও বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করছেন।

সূত্র: লাইভ সাইন্স, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম

আরও পড়ুন