পুরোনো দিনে নির্বাচনের রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে জমজমাট একটি অবস্থা হতো। কারণ ভোট গণনা চলত। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট কে, এটা জানার আগ্রহ থাকত। কিন্তু ২০২০ সালে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ছিল কোভিড-১৯ মহামারি। এ কারণে পরিস্থিতি ছিল কিছুটা জটিল। অনেক লোক গতবার ডাকযোগে ভোট দিয়েছে। এই ভোট গণনা করতে সময় লেগেছে। তাই নির্বাচনের চার দিন পর্যন্ত জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়নি। ২০২৪ সালেও ব্যাপারগুলো একটু আলাদা। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এবারও ফলাফল পেতে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে। চারটি ঘটনা ঘটতে পারে।
দৃশ্যপট ১: নির্বাচনের রাতে বিজয়ী নির্ধারিত হবে
নির্বাচনের রাতে বিজয়ী কে হবেন, জানতে হলে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিসকে অনেক এগিয়ে থাকতে হবে। হিসাব সহজ। যদি কমলা ৫০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকেন এবং এবং ২০ হাজার মেইলে আসা ব্যালট (মেইল-ইন ব্যালট) গোনা বাকি থাকে, তবে কমলাকে বিজয়ী ঘোষণা করা যেতে পারে। কারণ, যদি ট্রাম্প বাকি মেইল-ইন ব্যালটের প্রতিটিও পেয়ে থাকেন, তবে কমলার সমান হবেন না। এটি ঘটা সম্ভব। ২০২২ সালের কংগ্রেশনাল নির্বাচনে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক সুইং স্টেটে নির্বাচনের রাতেই ফলাফল বলা সম্ভব হয়েছিল; কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাধারণত অনেক বেশি ভোটার ভোট দেন। শেষ মুহূর্তের জনমত জরিপে দেখা গেছে, অনেক রাজ্যে দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব কাছাকাছি।
দৃশ্যপট ২: কয়েক দিন সময় লাগবে
মেইল-ইন ব্যালট গণনা করা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের জন্য জটিল প্রক্রিয়া। খুব সূক্ষ্মভাবে হিসাব মিলিয়ে দেখতে হয়। যেমন সরকারের কাছে এই ভোটারদের স্বাক্ষর থাকে, সেটি মেইলে পাঠানো ভোটের স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হয়। মেইল থেকে ব্যালট খুলতে হয়, চিঠি খোলা আরকি। সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না, পরীক্ষা করতে হয়। কাগজগুলো সমান করে স্ক্যান করতে হবে। এসব করতে অনেক সময় লাগে। সাধারণ ভোট গণনার চেয়ে এটি অনেক বেশি সময় নেয়। পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো কিছু রাজ্যে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মেইলে আসা ব্যালট খোলা এবং প্রক্রিয়াকরণ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয় না। নেভাদার মতো অন্যান্য রাজ্য নির্বাচনের দিনের কয়েক দিন পরে মেইলে আসা ব্যালটও গণনার অনুমতি দেওয়া হয়। এসব ব্যালট গণনার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করা লাগতে পারে।
দৃশ্যপট ৩: প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব বেশি হলে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে
জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব বেশি, কিছু রাজ্যে সমান সমান। কিছু রাজ্যে মাত্র কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে হারজিত হতে পারে। যখন ভোটের ব্যবধান খুব কাছাকাছি থাকে, তখন আইনের কারণে ভোট পুনর্গননার প্রয়োজন হয় ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। গণনা সঠিকভাবে হয়েছে কি না, জানার জন্যই এই আইন। কর্মকর্তারা প্রভিশনাল ব্যালটগুলো দেখবেন। প্রভিশনাল ব্যালট হলো এমন ভোট, যেগুলোতে আইনত ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে কি না, নিশ্চিত করার দরকার হয়। ভোটারের বয়সের ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের দরকার হয়। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতা যখন হয়, তখন প্রার্থীরা ভোট পুনর্গণনার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধও করতে পারেন। পুনর্গণনা সাধারণত ফলাফল পরিবর্তন করে না। তবে এতে এক বা দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। ২০২০ সালে জর্জিয়া এবং উইসকনসিনের কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট পুনর্গণনা করা হয়েছিল।
দৃশ্যপট ৪: নির্বাচনের পরেও চলবে আইনি লড়াই
কারও কারও দুশ্চিন্তা থাকে সব ভোট গণনা এবং পুনর্গণনার পরেও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মামলা ও আদালতে লড়াই চলতে পারে। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে। কারণ, ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন ‘চুরি’ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলা দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি এটি হয়, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কে জিতেছেন তা আগেই জানব। তবে সবাই এটি মেনে নিয়েছেন, এটি জানতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস