মাকড়সা নিয়ে অজানা ৭ তথ্য

মাকড়সার সঙ্গে হঠাৎ করে দুই–একবার তোমার দেখা হয়েছে নিশ্চয়ই। কখনো ঘরের কোণে, কখনো বাগানে, কখনো বা গাছের ডালে মাকড়সা বাসা বানায়। কিন্তু এই ছোট্ট প্রাণী সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? মাকড়সা অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয়। এদের জাল বোনার কৌশল থেকে শুরু করে শিকার ধরার পদ্ধতি সবকিছুই অবাক করার মতো। এদের নিয়ে ভালোভাবে জানতে আগ্রহীদের জন্যই এ লেখা।

মাকড়সা কি পোকা?

আমরা প্রায়ই মাকড়সাকে পোকামাকড় ভেবে থাকি। কিন্তু আসলে এরা পোকামাকড় নয়। মাকড়সা আরাকনিডস নামক একটি বিশেষ শ্রেণির অন্তর্গত। এই আরাকনিডসরা আবার আর্থ্রোপড গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণিতে বিচ্ছু, এঁটুলি ও মাইটও রয়েছে। মাকড়সাকে পোকামাকড় থেকে আলাদা করে চেনার কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন মাকড়সার শরীর দুটি অংশে বিভক্ত। এদের আটটি পা থাকে, ছয়টি নয়। মাকড়সার চোখের সংখ্যা ছয় বা আটটি হয়ে থাকে, পোকামাকড়ের মতো দুটি নয়। মাকড়সার পেটে স্পিনারেট নামক একটি অঙ্গ থাকে, যার মাধ্যমে তারা সুতা তৈরি করে।

আরও পড়ুন

কী পরিমাণ মাকড়সা আছে?

মাকড়সার জগৎ খুব বৈচিত্র্যময়। এরা বিভিন্ন আকার–আকৃতির হয়। কোনো মাকড়সা খুব ছোট আবার কোনো মাকড়সা অনেক বড়। এদের রং বিভিন্ন রকম হয়। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির মাকড়সা আবিষ্কার করেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, এখনো অনেক প্রজাতির মাকড়সা আবিষ্কার করা বাকি। একবার গবেষণায় দেখা গেয়েছিল, একটি ছোট্ট ঘাসের জমিতে প্রতি হেক্টরে প্রায় ৫৫ লাখ মাকড়সা ছিল।

সব মাকড়সার কামড় মারাত্মক নয়

বেশির ভাগ মাকড়সা আসলে নিরীহ প্রাণী। এরা সাধারণত মানুষকে কামড়ায় না। কিছু মাকড়সার কামড় বিষাক্ত হতে পারে এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, সব মাকড়সার বিষ মারাত্মক নয়। আর হ্যাঁ, মাকড়সার কামড়ে স্পাইডারম্যান হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আরও পড়ুন

মাকড়সার রক্ত নীল

আমরা সবাই জানি মানুষের রক্ত লাল। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্য যে মাকড়সার রক্ত নীল হয়। মানুষের রক্তে আয়রন থাকে, যা অক্সিজেন বহন করে এবং আমাদের রক্তকে লাল রং দেয়। কিন্তু মাকড়সার রক্তে লোহার পরিবর্তে হিমোসায়ানিন নামক একধরনের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনে তামা থাকে। যখন এই তামা অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন রক্ত নীল রং ধারণ করে। তবে অক্সিজেন ছাড়া এই রক্ত বর্ণহীন থাকে।

স্পাইডার সিল্ক তরল পদার্থ, যা অত্যন্ত শক্তিশালী

আমরা সবাই মাকড়সার জাল দেখেছি, যা এরা শিকার ধরার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। মাকড়সার শরীরে একটি বিশেষ গ্রন্থি থাকে, যেখানে তরল রেশম তৈরি হয়। এই তরল রেশম বাতাসের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায়। অর্থাৎ যাকে আমরা জাল হিসেবে দেখি, সেটি তৈরি হয়। অর্থাৎ মাকড়সা আসলে একধরনের তরল পদার্থ দিয়ে জাল বোনে। ভাবতে কিছুটা অবিশ্বাস্য লাগলেও সত্য, মাকড়সার জালের সুতা এত শক্তিশালী যে একই পুরুত্বের স্টিলের সুতার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী।

আরও পড়ুন

মাকড়সা দিনে কত পোকা খায়

মাকড়সা প্রচুর পরিমাণে পোকামাকড় খায়। তবে মাকড়সা কতগুলো পোকা খায়, সেটা মাকড়সার প্রজাতি, আকার ও পাওয়া খাবারের ওপর নির্ভর করে। কিছু বড় মাকড়সা এক দিনে শত শত ছোট মাছি খেয়ে ফেলতে পারে।

খোলস পরিবর্তন

আমাদের পেশির ভেতর হাড় সংযুক্ত থাকে। হাড়ের মাধ্যমে আমরা শরীর নাড়াতে পারি। কিন্তু মাকড়সার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। মাকড়সার হাড় শরীরের ভেতরে না থেকে বাইরে থাকে। একে বলে বহিঃকঙ্কাল। এই বহিঃকঙ্কাল শরীরের বাইরের দিকে একটা শক্ত খোলস তৈরি করে, যা এদের শরীরকে আকৃতি ও সুরক্ষা দেয়। এই খোলসের মধ্যে পেশি থাকে, যা এই খোলসকে নাড়াতে সাহায্য করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাকড়সাও বড় হয়, কিন্তু বহিঃকঙ্কাল দেহের সঙ্গে বৃদ্ধি পায় না। তখন মাকড়সা পুরোনো খোলস থেকে বেরিয়ে আসে এবং নতুন খোলস তৈরি হয়। নতুন খোলস কিছুক্ষণ নরম থাকে, তারপরই শক্ত হয়ে যায়।

সূত্র: ডিসকভার ওয়াইল্ডলাইফ, ওয়েস্টার্ন এক্সটার্মিনেটর ডটকম

আরও পড়ুন