ভদ্রলোক ইসরায়েলের সাবেক নিউক্লিয়ার টেকনিশিয়ান। পারমাণবিক বোমার প্রকৌশলগত বিষয় নিয়েই ছিল তাঁর কাজকারবার। গণহত্যার এ রকম অস্ত্রের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল না। তাই ইসরায়েলের পারমাণবিক বোমা গবেষণার বিস্তারিত তথ্য তিনি ফাঁস করে দেন ব্রিটিশ প্রেসের কাছে। সেটা ১৯৮৬ সালের কথা।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যে তাঁকে ছাড়বে না, সে আর বলতে! তবে ঘটনাটা আরেকটু সবিস্তার না বললে বোঝা যাবে না। এ জন্য একটু ফিরে যাওয়া যাক ১৯৭৬ সালে।
১৯৭৬ সালে ভানু নেগেভ নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টারে চাকরির আবেদন করেন। দীর্ঘ ইন্টারভিউ ও প্রশিক্ষণের পর ১৯৭৭ সালে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয় সেখানে, নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের টেকনিশিয়ান ও শিফট ম্যানেজার হিসেবে। ১৯৮২ সালে লেবানন যুদ্ধ সংঘটিত হয়—ইসরায়েল হামলা করে লেবাননে। তাঁকে এ সময় ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে অতিরিক্ত (রিজার্ভ) সৈন্য হিসেবে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। তিনি মানা করে দেন, শুধু রান্নাঘরে কাজ করেন এ সময়ে। এটা অবশ্য দেশটির নীতি, কাউকে সেনাবাহিনী ডাকলে যেতেই হয়, তা সে যে কাজের জন্যই হোক।
শোনা যায়, এর কিছুদিন পরই তিনি যোগ দেন ইসরায়েলি কমিউনিস্ট পার্টিতে। তবে এ সময় তিনি বেরিয়ে পড়েন, বলা যায়, একরকম বিশ্বভ্রমণে। ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দেশে—গ্রিস, থাইল্যান্ড, রাশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, কাঠমান্ডু, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের। নাম তাঁর অস্কার গুরেরো। তাঁর উৎসাহে ভানুর সাক্ষাৎকার নেয় ব্রিটিশ পত্রিকা সানডে টাইমস। তার পরের ঘটনা তো শুরুতেই বলেছি।
এরপর ভয়ংকর এক কাজ করে মোসাদ। টোপ দিয়ে তাঁকে নিয়ে আসে ইতালিতে। টোপটা হলো, তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেন এক নারী। জানান, তাঁর নাম সিন্ডি। সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে তিনি ইতালিতে যান। সেখান থেকে তাঁকে ড্রাগ বা ওষুধ দিয়ে, কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে মোসাদ। এত হ্যাপা নেওয়ার কারণ, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না করা।
মামলা হলো। রায়ে দোষী প্রমাণিত হলেন ভানু। ১৮ বছর জেল খাটেন তিনি, এর ১১ বছরই কাটান নিঃসঙ্গভাবে। জেলে তাঁকে একা এক কক্ষে রাখা হয়, ইংরেজিতে যাকে বলে ‘সলিটারি কনফাইনমেন্ট’। ২০০৪ সালে ছাড়া পেয়েছেন তিনি, তবে দেশ ছেড়ে কোথাও যাওয়ার স্বাধীনতা পাননি। চাইলেই কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না তিনি, পারেন না ইন্টারভিউ দিতে। এ ধরনের চেষ্টা করায় পরেও কয়েকবার তাঁকে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করেছে দেশটির সরকার।
একজন মানুষের চেষ্টায় হয়তো অনেক কিছু বদলে যায় না। হয়তো সফলও হয় না সব চেষ্টা। তবু চেষ্টা করতে হবে, বারবার। মোরদেচাই ভানু এর শুধু উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই নন, অনুপ্রেরণাও।