মটি। একটি হাতির নাম। বিশ্বের বিরলতম হাতি। পৃথিবীতে ছিল একটিই। বেঁচে ছিল দুই সপ্তাহেরও কম। কিন্তু এর মধ্যেই গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে গেছে মটি। কী গুণ ছিল মটির? বিরলতম হাতিই বা হলো কীভাবে? চলো, সে ব্যাপারে জানা যাক।
আসলে মটি একটি সংকর হাতি। আফ্রিকান হাতি (লক্সোডোন্টা আফ্রিকানা) ও এশিয়ান হাতির (এলিফাস ম্যাক্সিমাস) মধ্যে সংকরায়ন পদ্ধতিতে এই হাতির জন্ম হয়েছে। এর আগে কখনো এমন সংকর বা হাইব্রিড প্রক্রিয়ায় হাতির বাচ্চা জন্মানো হয়নি। তাই একমাত্র হাইব্রিড হাতি হিসেবে মটি বিশ্বের বিরলতম হাতির খেতাব পেয়েছে।
১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই। যুক্তরাজ্যের চেস্টার চিড়িয়াখানায় জন্মগ্রহণ করে একটি হাতির বাচ্চা। ইতিহাসের প্রথম হাইব্রিড হাতির বাচ্চা। চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা জর্জ মটারহেডের নামে মটির নামকরণ করা হয়েছে। ওই চিড়িয়াখানায় জুম্বোলিনো নামে একটি পুরুষ হাতি এবং শেবা নামে একটি স্ত্রী হাতি বা হস্তিনী ছিল। দুটি হাতি দুই মহাদেশের। জুম্বোলিনো আফ্রিকান হাতি আর শেবা এশিয়ান। এই দুটি হাতির মধ্যে করানো হয় সংকরায়ন। আর তাতেই জন্ম নেয় সম্পূর্ণ নতুন বৈশিষ্ট্যের একটি হাতি, যার মধ্যে আফ্রিকান ও এশিয়ান হাতির গুণ আছে। সেই হাতিই হলো মটি। শেবা আর জুম্বোলিনোই যে মটির মা-বাবা, তা মটির টিস্যুর নমুনা পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু মটি জন্মেছিল সময়ের অনেক আগে। প্রায় ৬ সপ্তাহ আগে। ফলে মটির ওজন ছিল প্রয়োজনের তুলনায় কম। জন্মের মাত্র ১০ দিনের মধ্যে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে হাতিটি। সেই রোগ আর ভালো হয়নি। মাত্র ১১ দিনের মাথায় ১৯৭৮ সালের ২১ জুলাই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় মটি।
এরপর আর মটির মতো হাইব্রিড হাতি জন্মানোর খবর পাওয়া যায়নি। হাইব্রিড হাতি যদি না-ই বাঁচে, তাহলে তো কোনো লাভ নেই। আসলে মটি ছিল একটা পরীক্ষার অংশ। সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন চেস্টার চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা। কিন্তু তাঁরা সফলতা ধরে রাখতে পারেননি। তবে অনেক প্রাণী নিয়েই এমন পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলেছে। এরপর একদিন তোমাদের এমন একটি হাইব্রিড ছাগলের ব্যাপারে জানাব। সেটার ঘটনা আরও হৃদয়বিদারক।
যা–ই হোক, এশিয়া ও আফ্রিকা দুটি ভিন্ন মহাদেশ। দুই মহাদেশের প্রাকৃতিক পরিসীমার বিশালতাও অনেক। এই বিশাল ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে এ দুই প্রজাতির হাতির পক্ষে বনে একসঙ্গে মেলামেশা করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া এরা শুধু দুটি ভিন্ন মহাদেশেরই নয়। এদের প্রজাতিও আলাদা। এদের শারীরিক গঠনেও আছে ভিন্নতা।
আফ্রিকান হাতির উচ্চতা ৭ থেকে ১৩ ফুট। ওজন ২ হাজার থেকে ৬ হাজার কেজি পর্যন্ত হতে পারে। সবচেয়ে বড় আফ্রিকান হাতিটির ওজন ছিল ১০ হাজার ৪০০ কেজি এবং উচ্চতা ছিল ১৩ ফুট।
অন্যদিকে এশিয়ান হাতির উচ্চতা সর্বোচ্চ ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। ওজন ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি পর্যন্ত হয়। সবচেয়ে বড় এশিয়ান হাতিটি ছিল ভারতের আসামে। হাতিটির ওজন ছিল প্রায় ৮ হাজার কেজি। উচ্চতা ছিল ১১ ফুট। তা ছাড়া আফ্রিকান হাতির কান এশিয়ান হাতির তুলনায় অনেক বড় হয়।
মটির মধ্যে এশিয়ান ও আফ্রিকান, দুই ধরনের হাতির বৈশিষ্ট্যই ছিল। মটির মাথার আকৃতি ও বড় কান স্পষ্টতই আফ্রিকান হাতির মতো ছিল। পাশাপাশি মটির সামনের পায়ে পাঁচটি নখ এবং পেছনের পায়ে চারটি নখ ছিল, যা এশিয়ান হাতির বৈশিষ্ট্য। হাতিটি বেঁচে থাকলে যে আরও অনেক বৈশিষ্ট্য মিলে যেত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মটির মৃত্যুর পর কেউ একজন তার দেহ ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষণ করে রাখেন। তাঁর নাম এখন আর জানা যায় না। এরপর তিনি মটির সেই দেহ পাঠিয়ে দেন একটি জাদুঘরে। তোমরা কখনো লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে গেলে দেখা পাবে মটির।
সূত্র: আইএফএল সায়েন্স