অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরটা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ রোমাঞ্চকর। এ বছরের শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা দেখছেন একের পর এক বিরল মহাজাগতিক ঘটনা। এবার বিশ্ববাসী সাক্ষী হতে চলেছে এক বিরল মহাজাগতিক বিস্ফোরণের, যা অন্যান্য মহাজাগতিক বিস্ফোরণ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, এই মহাজাগতিক বিস্ফোরণ খালি চোখেই দেখা যাবে পৃথিবী থেকে!
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আমাদের পৃথিবী থেকে তিন হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি নক্ষত্র যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে চলেছে। ওই বিস্ফোরণ দেখা যাবে ধ্রুবতারার মতোই উজ্জ্বল। প্রায় এক সপ্তাহের মতো আকাশে জ্বলজ্বল করবে।
আসলে ঘটনাটি জ্যোতির্বিদদের কাছে ‘অতিদানব তারা বা সুপারনোভা’ নামে পরিচিত। এই মহাজাগতিক বিস্ফোরণ ঘটে মূলত যখন দুটি তারা বা নক্ষত্রের মধ্যে স্থানচ্যুতি ঘটে। এর মানে হলো, এ সময় বড় সংঘর্ষে জড়ায় নক্ষত্র দুটো। সংঘর্ষের ফলে সংঘটিত হয় বিশেষ ধরনের পারমাণবিক বিস্ফোরণ, যা দেখতে আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো লাগে।
তিন হাজার আলোকবর্ষ দূরে মহাকাশে, টি করোনা বোরিয়ালিস নক্ষত্রমণ্ডলে, উত্তর মুকুটে অবস্থিত বাইনারি স্টার সিস্টেমে এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটবে। এই সুপারনোভা তৈরি হয় যখন একটি সাদা বামন নক্ষত্র তার সঙ্গী লাল দানব নক্ষত্র থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস টানতে থাকে। টানা হাইড্রোজেন গ্যাস সাদা বামন নক্ষত্রের ওপর জমা হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণই মূলত হাইড্রোজেন বোমার মতো কাজ করে এবং সুপারনোভা তৈরি করে।
সবকিছু যদি ঠিকঠাক থাকে, তাহলে এ নিয়ে অন্তত তিনবারের মতো এমন ঘটনার সাক্ষী হবে পৃথিবীবাসী। ১৮৬৬ সালে এই মহাজাগতিক বিস্ফোরণে সৃষ্ট নক্ষত্র প্রথমবার লিপিবদ্ধ করেন আয়ারল্যান্ডের বহুশাস্ত্রবিদ জন বার্মিংহাম। এরপর ৮০ বছর পর ১৯৪৬ সালে আবার পৃথিবীবাসী একই ঘটনা দেখতে পায়।
বিশ্বের প্রায় সব দেশের জ্যোতির্বিদেরা বিরল এই মহাজাগতিক ঘটনা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। তাঁরা এই বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী হওয়ার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ সুমার স্টারফিল্ড বলেন, ‘আমাদের মিল্কিওয়ে ও আশপাশের ছায়াপথগুলোয় প্রায় ১০টি পুনরাবৃত্তি নোভার (আরআরএন) অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে ঘটনাটি জ্যোতির্বিদদের কাছে নিঃসন্দেহে খুব আকর্ষণীয় ব্যাপার।’ এই বিস্ফোরণ দেখতে খুবই উৎসুক হয়ে আছেন তিনি।
জার্মান জ্যোতির্বিদ ইওয়াখিম ক্রাউটার, যিনি নোভা নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁর মতে টি করোনা বোরিয়ালিসের বিস্ফোরণের দিকে নজর থাকবে অনেকের মতো জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপেরও। এই জ্যোতির্বিদ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘এই বিরল ঘটনা যখন ঘটবে, তখন এটি দেখার জন্য আপনার টেলিস্কোপ বা অন্য কোনো আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে না। কেবল ঘর থেকে বাইরে আসুন, টি করোনা বোরিয়ালিসের দিকে তাকান এবং আপনি এই অভাবনীয় দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পাবেন।’
এই দৃশ্য দেখার জন্য তুমি প্রস্তুত?