আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগস্ট মাসে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ইস্যু ছিল তাইওয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়ে। এর জেরে দুই দেশ একে অপরের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। কড়া ভাষায় একে অপরের সমালোচনা করে, এমনকি হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দেয়। তখন অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল, এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধবে না তো?
আমাদের যেমন সংসদ আছে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের নাম কংগ্রেস। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংসদের দুটি কক্ষ। একটি নিম্নকক্ষ। যার নাম প্রতিনিধি পরিষদ। আরেকটি উচ্চকক্ষ। যার নাম সিনেট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ন্যান্সি পেলোসির এই সফরের পর আলোচনা হয়েছে, চীন কি তাইওয়ান দখল করে নেবে? এসব হিসাব কষতে গিয়ে চীন-তাইওয়ানের সামরিক শক্তিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ আসলে কী—হয়েছে এই আলোচনাও। তাইওয়ানের ভবিষ্যৎ আসলে কী, সেটা অনুমান করার আগে তাইওয়ানের বর্তমান অবস্থা একবার জেনে নেওয়া দরকার।
তাইওয়ান কি দেশ?
যেসব বিবেচনায় নিয়ে একটি ভূখণ্ডকে দেশ বলতে যা যা থাকা দরকার, সবই আছে তাইওয়ানের। যেমন তাইওয়ানের নিজস্ব ভূখণ্ড আছে, আছে নিজস্ব সরকারব্যবস্থা। আইনসভা আছে, সামরিক বাহিনী আছে, মুদ্রা-পাসপোর্ট-পররাষ্ট্রনীতি—সবই আছে। এমনকি দ্বীপটি স্বশাসিত। কিন্তু এরপরও তাইওয়ান দেশ কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। কারণ, তাইওয়ান নিজেকে দেশ হিসেবে দাবি করলেও জাতিসংঘের স্বীকৃতি তারা পায়নি। পায়নি বললে ভুল হবে, একসময় এর স্বীকৃতি ছিল; কিন্তু পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
তাইওয়ান ১৬০০ সালের আগে স্বশাসিত ছিল। ১৬২০-এর দিকে সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে ডাচরা। কিন্তু তারা বেশি দিন টিকতে পারেনি। ৪০ বছরের মাথায় ডাচরা বিতাড়িত হয়। এরপর স্বশাসিত ছিল তাইওয়ান। কিন্তু এই শাসন বেশি দিন টেকেনি। ষোলো শতকের শেষ দিকে তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় চীনের হাতে। কিন্তু চীনের নিয়ন্ত্রণও যে বেশি দিন ছিল, তা নয়। ১৮৯৫ সালে যুদ্ধে হেরে জাপানের নিয়ন্ত্রণে যায় এই দ্বীপ। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে তাইওয়ানে আবারও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে চীন।
এরপর চীনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধে একপক্ষে কমিউনিস্ট মাও সে-তুং, আর অন্য পক্ষে প্রতিপক্ষ জাতীয়তাবাদী দলের চিয়ান কাই-শেক। যুদ্ধে মাও সে-তুংরা বিজয়ী হন। অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। হেরে যাওয়া চিয়ান কাই-শেক আশ্রয় নেন তাইওয়ানে।
চিয়ান কাই-শেকের জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় চীনের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল রিপাবলিক অব চায়না। তাইওয়ান এর প্রদেশ। চিয়ান কাই-শেক পরাজিত হলেও পরাজয় স্বীকার করেননি; বরং তিনি তাইওয়ানে পালিয়ে গিয়ে সেখানে শাসন শুরু করেন এবং সেখান থেকেই রিপাবলিক অব চায়না রাষ্ট্রটি পরিচালনা করছিলেন। ফলে জাতিসংঘে তাঁর প্রতিনিধিরাই ছিলেন। রিপাবলিক অব চায়না নামেই তাঁরা প্রতিনিধিত্ব করতেন।
এদিকে মাও সে-তুং চীনের মূল ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চীনের নাম হয়ে যায় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। কিন্তু জাতিসংঘে তখনো চীনের জাতীয়তাবাদী দলের রিপাবলিক অব চায়নার প্রতিনিধিরা ছিলেন। এই সংকটের সমাধান হয় ১৯৭১ সালে। সেই বছর ‘রেজল্যুশন ২৭৫৮’ পাস হয়। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই প্রস্তাব পাস হয় যে চীনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হলো পিপলস রিপাবলিক অব চায়নার প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ চীনের মূল ভূখণ্ডের সরকারকে এককভাবে চীনের সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে সদস্যপদ হারায় তাইওয়ান। জাতিসংঘে এই প্রস্তাবের পক্ষ বা চীনের মূল ভূখণ্ডের সরকারের পক্ষে ভোট দেয় ৭৬টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দেয় ৩৫টি। এই প্রস্তাবে ১৭টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
তাইওয়ান, যার আনুষ্ঠানিক নাম রিপাবলিক অব চায়না—এই ভূখণ্ডের সবকিছু থাকার পরও জাতিসংঘ থেকে তার স্বীকৃতি নেই। সবকিছু থাকার পরও তাইওয়ান এখন দেশ নয়। কারণ, চীন এখনো মনে করে তাইওয়ান তাদের প্রদেশ।
আছে আরও কিছু বিষয়
চিয়ান কাই-শেক চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে পালিয়ে এসে যখন তাইওয়ান শাসন করা শুরু করলেন, তখন অনেকেই এসেছিলেন সেখানে। মূল ভূখণ্ড থেকে যাঁরা তাইওয়ানে গিয়েছেন, তাঁরা ‘কুয়োমিনট্যাঙ’ নামে পরিচিত। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করেই দশকের পর দশক তাইওয়ানকে শাসন করেছেন।
একসময় চীনের মূল ভূখণ্ড ছেড়ে আসা এই কুয়োমিনট্যাঙরাই এখন চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলার পক্ষে। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন ভিন্ন পথের। তাঁর দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। চীনের কাছে মাথানত করতে চায় না তারা।
ইতিহাসবিদদের কাছে তাইওয়ান নিয়ে দুই ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এক দল বলে থাকে, তাইওয়ান আসলে চীনেরই অংশ। কিন্তু আরেক দল বলে, ১৯১১ সালে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাজপ্রথা বিলোপের পর যে চীন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই চীনের অংশ কখনো ছিল না তাইওয়ান। কিংবা মাও সে-তুংয়ের আধুনিক যে চীন, সেখানকার অংশে কোনো দিনই ছিল না তাইওয়ান।
এখন প্রশ্ন উঠছে, অন্য দেশগুলো কী বলছে? তারা কি তাইওয়ানকে সমর্থন দিচ্ছে? জাতিসংঘের সদস্য পাওয়া কয়টি দেশ তাইওয়ানকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই হিসাবটা এবার দেখা দরকার। মাত্র ১৩টি দেশ তাইওয়ানকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেলিজ, হাইতি, ভ্যাটিকান সিটি, হন্ডুরাস, মার্শাল আইল্যান্ড, নাউরু, পালাউ, প্যারাগুয়ে, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, টুভালু ও গুয়াতেমালা।
একবার লক্ষ করা যেতে পারে, যেসব দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি দেশও নেই, যারা কিনা কূটনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী।
আবার চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের যেকোনো সংকটে যে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়া যায়, সেই যুক্তরাষ্ট্রও কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ ছাড়া পশ্চিমা শক্তিশালী কোনো দেশও স্বীকৃতি দেয়নি তাইওয়ানকে।
এখানেই শেষ নয়। তাইওয়ানের স্বাধীনতা কিংবা জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি যখন–তখনই এক বাক্যে উড়িয়ে দেয় চীন। তারা বলে থাকে, ১৯৭১ সালের ‘রেজল্যুশন ২৭৫৮’ দিয়ে এই সংকটের সমাধান হয়েছে। বিষয়টি আবারও কেন সামনে আসবে?
বর্তমান অবস্থা
তাইওয়ান ইস্যু চীনের জন্য বরাবরই স্পর্শকাতর। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব যখনই তাইওয়ান নিয়ে কথা বলতে যায়, তখন রাগী এক চীনকে দেখা যায়। সর্বশেষ মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার যখন আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন থেকেই সতর্কবার্তা দিয়ে আসছিল চীন। এমনকি চীনের পক্ষ থেকে এটাও বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে। পেলোসি সেখানে গেলে, এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
পেলোসি তাইওয়ান ছাড়তে না ছাড়তেই পাল্টা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে চীন। তাইওয়ান প্রণালিতে শুরু করে সামরিক মহড়া।
তাইওয়ানকে ঘিরে চীন এবার যে মহড়া করেছে, তা অতীতের যেকোনো মহড়া থেকে আলাদা। সক্রিয় অস্ত্র নিয়ে এই মহড়া চালিয়েছে চীনের সেনারা। এসব অস্ত্র থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে, নিক্ষেপ করা হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্রও। এমনকি সেই ক্ষেপণাস্ত্র তাইওয়ানের আকাশ ওপর দিয়ে উড়ে গেছে। চীনের এই মহড়ার কারণে তাইওয়ান প্রণালিতে জাহাজ চলাচল যেমন বন্ধ ছিল, তেমনি তাইওয়ানে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসগুলো তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়। এভাবে রীতিমতো তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল চীন।
এ প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশীয় নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগ-এ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাকে বিষয়টি স্পষ্ট করতে দিন—কেউ যদি তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা করতে চায়, আমরা যুদ্ধ করতে দ্বিধা করব না। আমরা সবকিছুর বিনিময়ে লড়ব। আমরা একেবারে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। চীনের সামনে একমাত্র এই পথই খোলা।’
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাইওয়ান
তাইওয়ান একটি দ্বীপ। চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০০ মাইল। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্রদেশও রয়েছে। এই দেশগুলোকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, তাহলে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশটির শক্তি আরও বেড়ে যাবে। এমনকি গুয়াম ও হাওয়াই দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার একটি কারণ।
এ ছাড়া যারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম তাইওয়ান। ফলে মিত্র এই দ্বীপের বিপদে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।
এদিকে তাইওয়ান প্রণালি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা এই প্রণালি। এই প্রণালির নিয়ন্ত্রণ যদি চীনের হাতে পুরোপুরি চলে যায় তবে দেশটি আসলে পুরো শিপিং–ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, তাইওয়ান প্রণালির নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে চলে গেলে বিশ্ব অর্থনীতির একটি বড় নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে চীনের হাতে। কারণ, ওই এলাকা দিয়ে জাহাজ চলাচল করতে না পারলে এর আর্থিক প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে। তাই বিশ্বের শক্তিশালী যেকোনো দেশের মাথাব্যথার কারণ এই প্রণালির নিয়ন্ত্রণ।
কিন্তু এই প্রণালি কিংবা তাইওয়ান—কোনোটারই নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে চলে যাক, এটা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এর একটি কারণ, নিরাপত্তা ইস্যুতে তাইওয়ানের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মার্কিন সরকার। আবার চীনের সঙ্গে মার্কিনিদের বিরোধও পুরোনো। দুই পক্ষই তাদের স্বকীয়তা ধরে রাখার জন্য যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
তাইওয়ানের সক্ষমতা
কূটনৈতিক দিক থেকে তাইওয়ান পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরশীল, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তার অন্যতম ভরসার জায়গা এখন যুক্তরাষ্ট্র। যেকোনো পরিস্থিতিতে সামরিক সহযোগিতাও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাবে তাইওয়ান। কিন্তু নিজের সামরিক সক্ষমতা যে খুব বেশি, তেমনটা নয়।
পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ নামে পরিচিত চীনের সামরিক বাহিনীতে এখন সক্রিয় সেনার সংখ্যা ২০ লাখ। অপর দিকে তাইওয়ানের সেনা বড়জোর ১ লাখ ৬৯ হাজারের মতো। অপর দিকে বেইজিংয়ের পদাতিক বাহিনীর সেনাসংখ্যা ৯ লাখ ৬৫ হাজার। তাইওয়ানের পদাতিক বাহিনীতে সদস্য আছেন ৯৪ হাজার। তাইওয়ানের জন্য বড় হুমকি চীনের নৌবাহিনী। চীনের নৌবাহিনীর সদস্য ২ লাখ ৬০ হাজার। এদিকে তাইওয়ানের নৌবাহিনীর সদস্যসংখ্যা মোটে ৪০ হাজার। সমুদ্রে তাইওয়ানের নৌবাহিনীর মোট ২৬টি জাহাজ রয়েছে। বিপরীতে চীনের নৌবাহিনীর জাহাজের সংখ্যা ৮৬।
এ ছাড়া সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে তাইওয়ান। চীনের রয়েছে পাঁচ হাজার ট্যাংক। অপর দিকে তাইওয়ানের কাছে ট্যাংক আছে ৬৫০টি। এদিকে ৩ হাজার ২০০টি যুদ্ধ ও সামরিক বিমান নিয়ে আকাশপথে তাইওয়ানকে টেক্কা দেবে বেইজিং। অপর দিকে তাইওয়ানের কাছে যুদ্ধ ও সামরিক বিমান আছে মাত্র পাঁচ শতাধিক।
চীন কি তাইওয়ানের দখল নেবে?
আধুনিক চীনের যাত্রা শুরু মাও সে-তুংয়ের হাত ধরে। এরপর যার নাম উচ্চারিত হয়, তিনি দেং জিয়াও পিং। তাঁকে বলা হয় আধুনিক চীনের স্থপতি। তাঁর আমলেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায় চীন। এসব পরিচয়ের বাইরেও দুজনের আলাদা অবদান রয়েছে চীনের জন্য। বিপ্লবের পর মাও সে-তুং তিব্বতকে মূল চীনে যুক্ত করেছিলেন। দেং জিয়াও পিংয়ের আমলে হংকংকে ফিরে পায় চীন।
এই দুই নেতার পরই চীনের শক্তিশালী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে। যিনি হংকংয়ের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে নতুন আইন পাস করেছেন। কঠোর হাতে সেখানে বিক্ষোভ দমন করেছেন। তাইওয়ানের ব্যাপারেও তিনি আগ্রহী। ফলে নিজের সক্ষমতা প্রকাশে তিনি এই পথে হাঁটবেন কি না, সেটা নিকটতম ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
তবে তাইওয়ানের বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন না, চীনের বাহিনী সেখানে হামলা করবে। এমনকি চীনের বাহিনী যখন তাইওয়ানের উপকূলে মহড়া চালাচ্ছিল সক্রিয় অস্ত্র নিয়ে, তখনো একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেছেন তাইওয়ানের বাসিন্দারা। সেই সময় এক মাঝি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘কমিউনিস্টরা বড় বড় কথা বলে, কিচ্ছু করতে পারে না। চীনের এই হুমকির মধ্যে আমরা ৭০ বছর ধরে বসবাস করছি।’