প্যারিস শহর পরিচিত ফ্যাশনের জন্য। প্যারিসের মানুষ আজ যে ফ্যাশন চালু করছেন, আগামী দিনে বিশ্বের বিভিন্ন মানুষ সেটা অনুসরণ করবেন। যেমন প্যারিস ফ্যাশন উইক। বিশ্ববিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড ও আর্টিস্টদের তৈরি পোশাকের প্রদর্শনী চলে। সপ্তাহজুড়ে ফ্যাশনের নানা কিছু হয়। যেখানে উপস্থিত হন অভিনয় ও সংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা। উত্তরাধুনিক পোশাক গায়ে তাঁদের দেখা যায়।
প্যারিস ফ্যাশন উইকের সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু একটা ঘটনা এই ঝামেলা বাঁধিয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ফ্যাশন উইকের আগে প্যারিসে ছড়িয়ে পড়েছে ছারপোকা। ইংরেজিতে যাকে বলে বেডবাগ। বিছানায় থাকতে পছন্দ করে বলে এর নাম বেডবাগ। শুধু বিছানায় থাকেনি, ছড়িয়েছে মেট্রোর সিটে, আলিশান হোটেলে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাওয়া যাচ্ছে বাস ও সিনেমা হলে। মানুষ যেখানে আছে, সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে ছারপোকা। গুটি গুটি পায়ে ছারপোকার হেঁটে বেড়ানোর ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। প্যারিসবাসীর এই নিয়ে উদ্বেগের সীমা নেই।
কিন্তু প্যারিসে ছারপোকা এল কোথা থেকে? এত ব্যাপক আকারে ছড়াল কীভাবে? এর রহস্য লুকিয়ে আছে পর্যটকদের ভ্রমণে। পর্যটনসূত্রেই ছড়িয়েছে ছারপোকা। ২০২২ সালে প্যারিসে এসেছিলেন ৪ কোটি ৪ লাখ পর্যটক। প্যারিসই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা শহর। মানুষের ভ্রমণ যেভাবে বেড়েছে, ছারপোকাও একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছড়িয়েছে।
আর দ্বিতীয় কারণ হলো কীটনাশকের বিরুদ্ধে ছাড়পোকার ক্রমাগত মিউটেশন। ছাড়পোকার ধরন বদলে যাচ্ছে। আগে যে কীটনাশকে ছারপোকা মারা যেত, এখন আর সেগুলো কাজ করে না। যদি পোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর ওষুধের বিরুদ্ধে পোকা প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তবে ওই পোকাকে বলে সুপারবাগ। প্যারিসের ছারপোকাগুলো সুপারবাগ হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করছে প্যারিস। কোভিড-১৯–এর পর প্রথম অলিম্পিকে ছারপোকা কী ভূমিকা রাখবে, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন আয়োজকেরা।
ছারপোকা সাধারণত বসার গদি ও বিছানায় থাকে। পোকাগুলো মানুষের ঘুমানোর অপেক্ষা করে। মানুষ ঘুমিয়ে গেলে হামাগুড়ি দিয়ে বের হয়। কামড় দিয়ে রক্ত চুষে নেয়।
ছারপোকা মানুষের মাধ্যমে ভ্রমণও করতে পারে। কাপড়, স্যুটকেস ও ব্যাগে চড়ে বিশ্বভ্রমণ করে। এভাবে যে এলাকায় ছারপোকা নেই, সেখানে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে।
ছারপোকা এড়ানোর উপায় কী? কোথাও গিয়ে হোটেলে উঠলে জামাকাপড় খুলে সোজা বিছানায় না যাওয়া। কাপড় বা স্যুটকেস বিছানায় রাখা যাবে না। ব্যাগ বা স্যুটকেস আলমারিতে তুলে রাখতে হবে। ছারপোকা বিছানায় বেশি থাকে, তাই ব্যাগ বা স্যুটকেস বিছানা থেকে দূরে রাখা ভালো। ব্যবহার করা জামাকাপড়ের প্রতি ছারপোকা বেশি আকৃষ্ট হয়। নোংরা পোশাক আলাদা একটি ব্যাগে রেখে দেওয়া ভালো। আর রাতের বেলায় রুমে এসি ছেড়ে রাখলে ছারপোকা থেকে কিছুটা বাঁচা যায়।
বাসায় ফিরে যদি মনে হয়, জামাকাপড়ে ছারপোকা আছে, তবে দূর করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। লম্বা সময় ধরে অন্তত ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ছারপোকা আর ছারপোকার ডিম ধ্বংস হয়ে যাবে।
প্যারিসের পাশাপাশি বেশির ভাগ শহরেই ছারপোকা ছড়িয়ে আছে। কোভিড মহামারির সময়ে মানুষের ভ্রমণ খুব কমে গিয়েছিল। তখন ছারপোকাও কমেছিল। কিন্তু নতুন স্বাভাবিকে ভ্রমণ আবার বেড়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছারপোকা ছড়ানোর হার। প্যারিস পৌঁছে গেছে ছারপোকা। এখন ২০২৪ অলিম্পিকের আগে কী ব্যবস্থা নেয় তারা, এটিই দেখার বিষয়।