আহত কচ্ছপকে বাঁচাতে মানুষের সাহায্য চাইছে হাঙর, ভিডিও ভাইরাল!
সাধারণত হাঙরকে আমরা ভয়ংকর প্রাণী বলেই চিনি। বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কল্যাণে বিষয়টা এমনভাবেই মানুষের কাছে আরও ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা যে পুরোটাই ‘মিথ’, তা নয়। হাঙরের আক্রমণে প্রাণ যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কখনো কখনো।
সে যাহোক, বিশাল এ প্রাণীকে যতটা ভয়ংকররূপে আমাদের কাছে চলচ্চিত্রে উপস্থাপন করা হয়, হাঙর ততটাও ভয়ংকর নয়। আর ওদের আক্রমণে মারা যাওয়ার ঘটনা? হাঙরের চেয়ে গরুর আক্রমণে বিশ্বব্যাপী বেশি মানুষ মারা যায়। ইংল্যান্ডে তো শীর্ষ ১০ ভয়ংকর প্রাণীর তালিকায় গরুও আছে।
যাহোক, সম্প্রতি টিকটকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, একটি হাঙর আহত একটি কচ্ছপকে বাঁচানোর জন্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ভিডিওতে দেখা যায়, সমুদ্রের বাতাস ও ঢেউকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যাচ্ছে হাঙরটি। মুখে আহত কচ্ছপ। কিছুদূরেই একটি জাহাজ ছিল। হাঙরের উদ্দেশ্য, কচ্ছপটিকে সেই জাহাজের কাছে পৌঁছে দেওয়া। অনেক চেষ্টার পর কচ্ছপটিকে জাহাজের কাছে নিয়ে আসে হাঙরটি। কচ্ছপটিকে জাহাজের ওপরে তুলে দেওয়ার জন্য সে বারবার চেষ্টা করে, ঠিক সে সময় এগিয়ে আসে একটি ছেলে। কচ্ছপটিকে তুলে নেয় জাহাজে। এরপর হাঙরটি সেখান থেকে চলে যায়। জাহাজের ছেলেটি বুঝতে পেরেছিল, কচ্ছপের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন।
ভিডিওতে দেখা যায়, কচ্ছপের গলায় একটি দড়ি খুব শক্ত করে বাঁধা। কচ্ছপের ঘাড় বের করে দড়িটিকে কাটতে চাইছে জাহাজবাসীরা। কিন্তু সে উপায় নেই। কচ্ছপ মাথা বের করতে চাচ্ছে না। অগত্যা কচ্ছপটিকে উল্টো করে খুব সতর্কতার সঙ্গে দড়িটি কেটে ফেলে একজন। দেখা যায়, ওই দড়ির নিচে আরও একটি দড়ি বাঁধা আছে। সেটাও কেটে ফেলা হয়। এরপর ভালো করে পরিষ্কার করা হয় কচ্ছপটির গলা। দড়ি দিয়ে বাঁধার কারণে গলার চারপাশে দাগ পড়ে গেছে।
হয়তো কচ্ছপের জায়গায় অন্য কোনো প্রাণী থাকলে এ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে মারা যেত। তোমরা নিশ্চয় জানো, কচ্ছপ সহজে মরে না। তাই ভাগ্যের ফেরে বেঁচে গেছে কচ্ছপটি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কচ্ছপের গলায় এ দড়ি এল কোথা থেকে? নিশ্চয় কোনো মানুষ কচ্ছপের গলায় দড়ি বেঁধে ছেড়ে দেয়নি। তাহলে?
হয়তো সাগরের ময়লা–আবর্জনা থেকে এ দড়ি কচ্ছপটির গলায় আটকে গেছে। কচ্ছপটি হয়তো নিজেকে দড়ি থেকে ছোটানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে বিপদ আরও বেড়েছে। গলায় দড়িটি আরও শক্ত হয়ে আটকে গেছে। এটা শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বলছি। এ রকম না–ও হতে পারে। হয়তো এমন কিছু হয়েছে, যা আমরা জানি না। নিশ্চয় এ রকম অনেক প্রাণী আমাদের ফেলা বর্জ্যের কারণে বিপদে পড়ে। তাই আমাদের এখনই আরও সচেতন হওয়া উচিত।
যাহোক, কচ্ছপটিকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে আবার সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। হয়তো মনের আনন্দেই কচ্ছপটি চলে গেছে বহুদূরে। হয়তো বাঁচবে আরও ১০০ বছর!
টিকটকে ভাইরাল হওয়া এই ঘটনার ভিডিওগুলোর কমেন্টে অবশ্য অনেকে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন। তাঁদের মতে, কচ্ছপটিকে বাঁচাতে নয়, খেতে চাইছিল হাঙরটি! কচ্ছপটিই বুদ্ধি করে জাহাজের কাছে চলে আসে। তাই এবারের মতো প্রাণে বেঁচে যায়। আসলে ভিডিওটি দেখে স্পষ্ট বোঝার উপায় নেই, কচ্ছপটিকে হাঙর সাহায্য করছিল নাকি নিজের পেটপূজা করতে এসেছিল।
সে যাহোক। আমরা ইতিবাচক চিন্তাই করি। ধরে নিই, কচ্ছপটিকে বাঁচানোর জন্যই এসেছিল হাঙরটি। তা ছাড়া কচ্ছপটিকে খেতে চাইলে হাঙরের হাত থেকে বেঁচে ফেরা কি অত সহজ? ৩০০ মিটার দূর থেকেও রক্তের গন্ধ পেয়ে ছুটে আসতে পারে হাঙর। সুতরাং সাবধান! না, ভয় নেই। তোমাদের সঙ্গে মজা করলাম। আমরা সব সময় প্রাণীদের সাহায্যে এগিয়ে আসব।
এই ঘটনা কোথায় বা কবে ঘটেছে, তা ভিডিওটিতে উল্লেখ নেই। ভিডিওর সত্যতাও কিশোর আলোর পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অ্যানিমেল রিসোর্স স্টেশন নামের একটি টিকটক চ্যানেলে ভিডিওটি আপলোড করা হয় দুই দিন আগে। এর পর থেকে এটি দেখা হয়েছে ১০ মিলিয়নের বেশিবার। এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ লোক ভিডিওটি পছন্দ করেছেন, প্রিয় তালিকায় যোগ করেছেন ২৭ হাজারের বেশি মানুষ। নানা রকম মন্তব্য করেছেন সাড়ে ২৭ হাজার ও ভিডিওটি শেয়ার করেছেন ৫০ হাজারের বেশি টিকটক ব্যবহারকারী।