শুক্র গ্রহে কি প্রাণ আছে? এককথায় উত্তর, নেই। কোনোদিন প্রাণ ছিল বা ভবিষ্যতে কি প্রাণ থাকতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে? সবগুলো প্রশ্নের উত্তর একটাই—না। তবে এই সহজ উত্তরটা নিয়েই বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা দ্বিধা ছিল। তোমার আমার মতো বিজ্ঞানীরা শুধু যুক্তির জোরে কোনো বিষয়কে সত্যি বা মিথ্যা বলে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাঁদের দরকার নিরেট প্রমাণ। সেই প্রমাণই এতদিন ছিল না বিজ্ঞানীদের কাছে। তাই কেউ কেউ বলেছেন, ৪৬০ কোটি বছর আগে শুক্র গ্রহ সৃষ্টির সময়ে বা তারপরে হয়তো প্রাণ ছিল। কিন্তু এখন একটি নতুন গবেষণা বলছে, শুক্র গ্রহে কোনোদিন প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না।
শুক্র আমাদের সবচেয়ে নিকট আত্মীয়। মানে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ। কিন্তু পৃথিবীবাসি একে বলে ‘আর্থ’স এভিল টুইন’। কারণ শুক্র ও পৃথিবী একই আকারের এবং একই বস্তু দিয়ে তৈরি। কিন্তু তারপরেও কেন শুক্রকে অশুভ গ্রহ বলা হয়? কারণ, সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রহ এটি। গ্রহটির তাপমাত্রা প্রায় ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি থেকে বেড়ে ৩৫ ডিগ্রি হলে আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যায়। সেখানে ৫০০ ডিগ্রিতে কি অবস্থা হবে ভাবো! এই তাপমাত্রা সীসা পর্যন্ত গলে যায়। তাছাড়া সৌরজগতের যেকোনো গ্রহের চেয়ে শুক্র গ্রহে বেশি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে রয়েছে ঘন অ্যাসিডের মেঘ।
এতকিছুর পরেও অনেক বিজ্ঞানী মনে করতেন, একসময় শুক্র গ্রহে নদী ছিল। প্রাণের জন্য যা একদম উপযুক্ত। এই তথ্য সত্যি কি না, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের এক দল বিজ্ঞানী শুক্রের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করেন।
যেহেতু শুক্র গ্রহে প্রচুর আগ্নেয়গিরি রয়েছে, তাই সেসব থেকে নির্গত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জমা হয়। সে কারণে বায়ুমণ্ডল নিয়ে গবেষণা করলে ওই গ্যাস সম্পর্কে জানা যাবে এবং তা থেকে বোঝা যাবে শুক্রের পৃষ্ঠের নিচে কি আছে। কারণ ওই গ্যাস তো গ্রহটির পৃষ্ঠের নিচ থেকেই এসেছে। যেমন পৃথিবীর পৃষ্ঠের নিচে আছে প্রচুর পানি। ফলে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হলে প্রচুর বাষ্প নির্গত হয়। অর্থাৎ এই বাষ্প দেখেই বোঝা যায়, পৃথিবীর নিচে রয়েছে পানি। একইভাবে শুক্রের পৃষ্ঠের নিচে কি আছে, তা বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্লেষণ শেষে বিজ্ঞানীরা শুক্রের পৃষ্ঠের নিচে খুব সামান্য পানি থাকার সম্ভাবনা দেখেছেন, সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। মাত্র এইটুকু পানি থাকাকে নিশ্চয়ই সমুদ্র বা নদী বলা যাবে না। অর্থাৎ শুক্রে কখনো পানির সমুদ্র ছিল না। তার মানে, সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকাও অসম্ভব। এ জন্য বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, শক্র গ্রহে কখনো প্রাণ ছিল না।
এখন তুমি ভাবতে পারো, বিজ্ঞানীরা কীভাবে শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন? তোমাকে জানিয়ে রাখি, শুক্র গ্রহকে ভালোভাবে জানার জন্য বেশ কয়েকবার নভোযান পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে সূর্য গবেষণার জন্য পাঠানো হয়েছে পার্কার সোলার প্রোব। তবে এই নভোযান সূর্যের কাছে যাওয়ার আগে ৭ বার শুক্র গ্রহের চারপাশে ঘুরেছে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য পাঠিয়েছে পৃথিবীতে। তারও আগে ২০০৫ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি শুক্রের উদ্দেশ্যে প্রথম ‘ভেনাস এক্সপ্রেস’ মিশন পরিচালনা করে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ মিশন কার্যকর ছিল।
আশার কথা হলো, ২০৩০-এর দশকে শুক্রের উদ্দেশ্যে আবার ‘ডাভিঞ্চি’ মিশন পরিচালনা করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই মিশনে শুক্র গ্রহ সম্পর্কে আরও অনেক নতুন নতুন তথ্য জানা যাবে।
সূত্র: দ্য উইক জুনিয়র, নাসা