পৃথিবীতে কত প্রজাতির পোকা আছে
কখনো কি তোমার বাড়ির আশপাশটা ভালোভাবে দেখেছ? জানালার পাশে বসা রঙিন প্রজাপতি কিংবা মাটিতে হেঁটে যাওয়া পিঁপড়াকে? একটু ভালো করে তাকালেই দেখবে, আমাদের চারপাশে কত রকমের পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে! পিঁপড়া, মশা, মাছি, ফড়িং, ঝিঁঝিঁপোকা, বোলতা আর কত রকমের প্রাণী! বিজ্ঞানীরা বলেন, এই পৃথিবীতে যত রকমের পশু-পাখি আর গাছপালা আছে, তারচেয়েও অনেক বেশি আছে পোকামাকড়! ভাবো একবার!
পোকাদের একটা বড় দলের নাম হলো আর্থ্রোপোডা। এই দলের সদস্যদের শরীরটা শক্ত খোলস দিয়ে ঢাকা থাকে আর এদের পায়ে অনেকগুলো ছোট ছোট জোড়া থাকে। মাকড়সা, চিংড়ি আর কাঁকড়াও এই দলের সদস্য, তবে এরা কিন্তু পোকা নয়।
পোকা হতে গেলে কয়েকটা বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন, ছয়টা পা, দুইটা অ্যান্টেনা (যেটা দিয়ে ওরা চারপাশটা শুঁকে) আর এদের শরীরটাকে প্রধানত তিনটা অংশে ভাগ করা যায়—মাথা, বুক আর পেট।
আজ থেকে প্রায় ৪৮ কোটি বছর আগে প্রথম পোকার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীতে কত প্রজাতির পোকা আছে, তা কীভাবে বুঝব? প্রজাতিই বা কী? আমরা যখন পিঁপড়া, মাছি বা প্রজাপতির কথা বলি, তখন আসলে একটা বড় দলের কথা বলি।
বেশিরভাগ পোকারই ডানা আছে, তাই তারা উড়তে পারে। তবে কিছু পোকা আছে যাদের ডানা থাকলেও বেশি উড়তে পারে না। আবার কিছু পোকা একেবারেই উড়তে পারে না। মজার ব্যাপার হলো, পোকাদের চোখ কিন্তু আমাদের মতো না। ওদের চোখে অনেক ছোট ছোট লেন্স থাকে। আমাদের যেমন একটা চোখে একটা লেন্স থাকে, পোকাদের কিন্তু তা নয়! তাদের চোখে থাকে অনেক ছোট ছোট লেন্স। যেমন, একটা মাছির চোখে প্রায় ৫ হাজার লেন্স থাকে। আর একটা ফড়িংয়ের চোখে থাকে প্রায় ৩০ হাজার লেন্স! এরকম চোখ দিয়ে ওরা খুব ভালোভাবে যেকোনো বস্তুর নড়াচড়া দেখতে পারে। যদিও সবকিছুর ছবি খুব স্পষ্ট দেখতে পায় না, কিন্তু নড়াচড়া বোঝে।
আজ থেকে প্রায় ৪৮ কোটি বছর আগে প্রথম পোকার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু পৃথিবীতে কত প্রজাতির পোকা আছে, তা কীভাবে বুঝব? প্রজাতিই বা কী? আমরা যখন পিঁপড়া, মাছি বা প্রজাপতির কথা বলি, তখন আসলে একটা বড় দলের কথা বলি। এই একেকটা দলের মধ্যে হাজার হাজার, এমনকি লাখ লাখ আলাদা আলাদা পোকার প্রজাতি আছে। তুমি যখন পিঁপড়া বলো, তখন আসলে একটা বিশেষ ধরনের পোকার পুরো দলটার কথা বলছ। এই দলের ভেতরে অনেক আলাদা আলাদা রকমের পিঁপড়া আছে, যাদের প্রত্যেকটা এক একটা প্রজাতি। যেমন ধরো, পৃথিবীতে প্রায় ১৮ হাজার রকমের প্রজাপতি আছে। মনার্ক, জেব্রা সোয়ালোটেল বা ক্যাবেজ হোয়াইট এদের কয়েকটা প্রজাতির নাম। নামগুলো একটু জটিল বটে!
প্রজাতির আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যায়। প্রজাতি মানে এমন একটা দল, যাদের মধ্যে নিজেদের বাচ্চা তৈরি করার ক্ষমতা থাকে, কিন্তু অন্য দলের সঙ্গে সেটা পারে না। যেমন, মৌমাছি আর পিঁপড়া কখনোই বাচ্চা তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু একই প্রজাতির দুটি প্রজাতি বাচ্চা উৎপাদন করতে পারবে।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ পোকার প্রজাতিকে খুঁজে বের করতে পেরেছেন। তার মানে, এখনও কমপক্ষে ৪৫ লাখ পোকার প্রজাতি আমাদের চোখের আড়ালে লুকিয়ে আছে!
প্রতিটা পোকার প্রজাতির একটা বিজ্ঞানসম্মত নাম আছে। যেমন মনার্ক প্রজাপতির বৈজ্ঞানিক নাম ডানাউস প্লেক্সিপাস (Danaus plexippus)। এই নামটা ব্যবহার করে কারণ, বিজ্ঞানীরা যাতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে একই পোকাকে একই নামে চিনতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলেন, এই পৃথিবীতে কত রকমের পোকা আছে, তা গুনে শেষ করা খুব কঠিন। কারণ প্রতি বছর কিছু পোকা হারিয়ে যাচ্ছে (বিলুপ্ত হয়ে যায়), আবার নতুন কিছু পোকার জন্মও হচ্ছে। তবুও একজন বিজ্ঞানী ২০১৮ সালে একটা হিসাব করে বলেছিলেন, পৃথিবীতে প্রায় ৫৫ লাখ রকমের পোকার প্রজাতি আছে! তবে এই সংখ্যাটা ২৬ লাখ থেকে ৭২ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
এই ৫৫ লাখ প্রজাতির মধ্যে শুধু গুবরে পোকা আছে প্রায় ১৫ লাখ! পিঁপড়া আছে মাত্র ২২ হাজার প্রজাতির। এছাড়াও মশা আছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ প্রজাতি, মাছি ১ লাখ ২০ হাজার প্রজাতি, আর ঘাসফড়িং ও ঝিঁঝিঁপোকা মিলিয়ে আছে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতি।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত মাত্র ১০ লাখ পোকার প্রজাতিকে খুঁজে বের করতে পেরেছেন। তার মানে, এখনও কমপক্ষে ৪৫ লাখ পোকার প্রজাতি আমাদের চোখের আড়ালে লুকিয়ে আছে! হতে পারে পৃথিবীর ৮০ শতাংশেরও বেশি পোকার জগৎ এখনো আমাদের অজানা!
এবার একটা মজার তথ্য দিই। যদি সব পোকাদের একসঙ্গে করে ওজন মাপা হয়, তাহলে সেটা আরও অবাক করার মতো ব্যাপার হবে। ওই ২২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া মিলেই প্রায় ২০ কোয়াড্রিলিয়ন (২০-এর পরে ১৫টা শূন্য!) পিঁপড়া হবে। আর একটা পিঁপড়ার ওজন যদি মাত্র ৩ মিলিগ্রাম হয়, তাহলে পৃথিবীর সব পিঁপড়ার মোট ওজন হবে প্রায় ৬০ বিলিয়ন কেজি! এটা প্রায় ৭০ লাখ স্কুল বাসের ওজনের সমান, অথবা ৬০০টা বড় যুদ্ধজাহাজের সমান। এমনকি পৃথিবীর সব মানুষের মোট ওজনের প্রায় ২০ শতাংশ হবে শুধু পিপড়ার ওজন!
পৃথিবীতে প্রায় ১৮ হাজার রকমের প্রজাপতি আছে। মনার্ক, জেব্রা সোয়ালোটেল বা ক্যাবেজ হোয়াইট এদের কয়েকটা প্রজাতির নাম। নামগুলো একটু জটিল বটে!
তবে দুঃখের বিষয় হলো, এত রকমের পোকা থাকা সত্ত্বেও, অনেক পোকার প্রজাতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কাজকর্মের জন্যই এটা হচ্ছে। পোকারা আমাদের অনেক উপকার করে। এরা আমাদের ফসল ফলাতে সাহায্য করে, অনেক দরকারি জিনিস তৈরি করে, এমনকি ওষুধও তৈরি হয়। আবার কিছু পোকা রোগ ছড়ায় বা আমাদের ফসল নষ্টও করে।
তবে বেশিরভাগ পোকাই আমাদের সরাসরি কোনো ক্ষতি করে না, বরং আমাদের পরিবেশের জন্য ওগুলো খুব জরুরি। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের উচিত পোকাদেরকে তাদের মতো বাঁচতে দেওয়া। কারণ এরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে, হয়তো লাখ লাখ পোকার প্রজাতি আবিষ্কার হওয়ার আগেই চিরতরে হারিয়ে যাবে। মানুষের কার্যকলাপের কারণে পৃথিবীর অনেক জীববৈচিত্র্য হয়তো আমরা চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলব! তাই আমাদের সবারই উচিত পোকাদের রক্ষা করা এবং তাদের আবাস নষ্ট না করা। কারণ পোকারা ভালো না থাকলে আমাদের পৃথিবীটাও হয়তো একদিন বসবাসের উপযোগী থাকবে না।