বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিড কোনটি
অ্যাসিড শব্দটা শুনেই হয়তো একটু ভয় লাগছে। কারণ, বেশিরভাগ সময় অ্যাসিড নিয়ে আলোচনা হয় নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু অ্যাসিড মূল ব্যবহার নেতিবাচক কাজে নয়, বরং বিজ্ঞানে। বিজ্ঞানের জগতে অ্যাসিডের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আছে। দৈনন্দিন কাজেও আমরা নানা অ্যাসিড ব্যবহার করি। এমনকি আমাদের পেটেও আছে অ্যাসিড।
শুরুতেই জেনে নিই অ্যাসিড কী। সহজকথায় বললে, অ্যাসিড এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা অন্য জিনিসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সেসবের গঠন বদলে দিতে পারে। যেমন, লেবু দিয়ে শরবত বানালে তা টক লাগে। কারণ, লেবুর রসে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা টক স্বাদ দেয়। আবার ব্যাটারিতে থাকে সালফিউরিক অ্যাসিড। বিদ্যুৎ তৈরিতে এই অ্যাসিড সাহায্য করে। অনেক দূর্বল অ্যাসিডও আছে। যেমন কার্বলিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডের কটু গন্ধে সাপ দূরে থাকে। তাই গ্রামাঞ্চলে অনেক সময় ঘরের চারপাশে কার্বলিক অ্যাসিডের বোতল রাখা হয়। তবে আজ আমরা আলোচনা করব সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিড নিয়ে। অন্যান্য অ্যাসিড থেকে এটি একদম আলাদা।
সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিডে যাওয়ার আগে একটু জেনে নিই, অ্যাসিডের শক্তি মাপা হয় কীভাবে। সে জন্য আমাদের একটু pH স্কেলের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। এই স্কেলে ০ থেকে ১৪ পর্যন্ত সংখ্যা থাকে। স্কেলের ৭ মানে নিরপেক্ষ, যেমন পানি। ৭-এর চেয়ে মান কম হলে তা অ্যাসিডিক হয়। আর ৭-এর চেয়ে বেশি হলে হয় ক্ষারীয়। আমরা সাধারণত পাঠ্যবইয়ে যেসব অ্যাসিডের কথা লেখা দেখি, যেমন সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অয়াসিড—এগুলোর pH এর মান হয় ২ থেকে ৩-এর মধ্যে। কোনো অ্যাসিডের pH মান যত কম হবে, মানে যত শূন্যের দিকে যাবে, সেটি তত বেশি শক্তিশালী অ্যাসিড। তার মানে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিডের মান হবে ৩-এর চেয়ে কম। আপাতত pH সম্পর্কে এতটুকু জানলেই চলবে।
এবার আসি মূল প্রশ্নে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিড কোনটি। এর নাম ফ্লুয়োরোঅ্যান্টিমোনিক অ্যাসিড! নামটা একটু জটিলই। কিন্তু এটাই যে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যাসিড, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই অ্যাসিড এতটাই ভয়ংকর যে কাঁচ, প্লাস্টিক কিংবা স্টিল—সবকিছুকে গলিয়ে দিতে পারে! তাই এটা সাধারণ কোনো বোতলে রাখা যায় না। বিজ্ঞানীরা এটাকে বিশেষ টেফলন নামে পাত্রে সংরক্ষণ করেন।
এখন তোমার মনে হতে পারে, এত ভয়ংকর অ্যাসিড মানুষের কোন কাজে লাগে? আসলে ফ্লুয়োরোঅ্যান্টিমোনিক অ্যাসিড সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এটা শুধু বিজ্ঞানী ও গবেষণাগারগুলোতে বিশেষ গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই অ্যাসিড দিয়ে এমন অনেক জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া করা যায়, যা সাধারণ অ্যাসিড দিয়ে সম্ভব নয়।
এখন তোমার মতো বুদ্ধিমান পাঠকের মনে আরেকটা প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে। এই অ্যাসিড এত শক্তিশালী কেন? আসলে সাধারণ অ্যাসিডে থাকে হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺), যা অন্য বস্তুতে বিক্রিয়া করে ভেঙে বা গলিয়ে ফেলতে পারে। ফ্লুয়োরোঅ্যান্টিমোনিক অ্যাসিডে অন্য সব অ্যাসিডের চেয়ে অনেক বেশি হাইড্রোজেন আয়ন থাকে যা মূহূর্তের মধ্যে সবকিছু ধ্বংস করে ফেলতে পারে। সাধারণ অ্যাসিডে এই আয়ন ধীরে কাজ করলেও এই শক্তিশালী অ্যাসিডে হাইড্রোজেন আয়ন ছড়িয়ে পড়ে অনেক দ্রুত। আসলে বিষয়টা আরও একটু বেশিই জটিল, কিন্তু তোমাদের সহজে বোঝানোর জন্য এভাবে বললাম।
সবশেষে এ লেখা পড়ে অনেকে বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন তুলতে পারো, এত শক্তিশালী অ্যাসিডের কথা জেনে কী হবে? বিজ্ঞানী না হলে এর দেখা তো কোনোদিন পাব না! আসলে বিজ্ঞান জানার মজাই এখানে। আমরা জানি না এমন অনেক আশ্চর্য জিনিসই আছে এই পৃথিবীতে। ফ্লুরোঅ্যান্টিমোনিক অ্যাসিডের মতো জিনিসগুলো আমাদের মনে কৌতূহল জাগায়, বিজ্ঞানকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। তাছাড়া এ ধরণের জিনিস সম্পর্কে জানা থাকলে তোমার কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভই হবে। কে জানে, হয়তো একদিন তোমরাই এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলবে, যা বদলে দেবে পৃথিবীকে!
সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস, থটকো ডটকম ও বিবিসি সায়েন্স ফোকাস